শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
এক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বার-নর্তকী ও যৌনকর্মীদের কলকাতায় পাচারের পথে পাকড়াও করতেন বিএসএফের গোয়েন্দারা। এবার তারা সম্পূর্ণ উলটো চক্রের সন্ধান পেলেন। জানা গিয়েছে, লকডাউনে বার নর্তকী ও যৌনকর্মীদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আসা ওই মহিলারা এখন নিজেদের দেশেই ফিরে যেতে চাইছেন। তাদের এই কাজে সাহায্য করছেন শহরের এক ট্যাক্সিচালক, যার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সীমান্তের কিছু দালালদের। মাথাপিছু প্যাকেজে ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন তিনি। সোমবার বাংলাদেশে পাচার হওয়ার আগেই ধরা পড়ে যাওয়া এক তরুণী ও দালাল তারিকুল গাজিকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন বিএসএফ গোয়েন্দা ও পুলিশ আধিকারিকরা।
বিএসএফ সূত্রে খবর, সারা শহর জুড়ে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিধাননগর, রাজারহাট- নিউটাউন, এমনকি ধর্মতলা থেকে বালিগঞ্জ এমনকি গার্ডেনরিচ, মেটিয়াব্রুজেও অবাধ যাতায়াত ওই ট্যাক্সিচালকের। কলকাতা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ট্যাক্সিতে নিয়ে এসে সীমান্তে পার করানোর সম্পূর্ণ টাকা নিজেই নেয় ওই ট্যাক্সিচালক। কাজ সম্পূর্ণ হলে তবেই সে দালালদের টাকা দেয়। জানা গিয়েছে, গত মাসেও একই ভাবে বাইপাসের ধারে একটি পানশালার নর্তকী ও মহারাষ্ট্রের এক বাংলাদেশি যৌনকর্মীও বাংলাদেশ পালানোর সময় ধরা পড়েন। তাদের জেরা করে কিছু দালালের সন্ধান মিললেও কিংপিন এই ট্যাক্সিচালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবারে তার নাম ও ট্যাক্সির নম্বরের সন্ধান মিলেছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মেদিনীপুরে ভূমি রাজস্ব দফতরের অধীনে থাকা বাড়িতে ধস
বিএসএফ সূত্রের খবর, সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তে স্বরূপনগরের হাকিমপুরের বাসিন্দা এক দালাল তারিকুল গাজি বাংলাদেশের গোয়াবান্দার বাসিন্দা যুবতীকে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। ৬২ হাজার টাকার সোনার গয়না তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়, যা তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার সময় নিয়ে এসেছিলেন। তবে আসার সময় তিনি ঢুকেছিলেন চোরাপথেই।
জেরায় ওই যুবতী জানান, ২০১৯ জুলাই মাসে রূপা নামে এক বন্ধুর সঙ্গে উত্তর কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লির একটি ঘরে গিয়ে ১৫ দিন দেহব্যবসা করেন। কিন্তু কলকাতায় সেভাবে রোজগার হচ্ছিল না। তারপর বেঙ্গালুরু চলে গিয়ে রোশননগরের যৌনপল্লিতে বহুদিন ধরে যৌনকর্মীর কাজ করেন। তারপর যুবতী বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুনঃ নারী সুরক্ষা নিয়ে আন্দোলনে এবিভিপি
রবিবার ১৬ আগস্ট রাত ১০ টা নাগাদ বেঙ্গালুরু থেকে বিমানে করে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। বন্ধুর সূত্রে ওই কিংপিন ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তার সঙ্গে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে চুক্তি হয়। এই প্যাকেজেই কলকাতা থেকে বসিরহাট সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে চোরাপথে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করানো হবে বলে যুবতীকে জানানো হয়।
রাত কাটিয়ে সকালবেলা উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুরে ট্যাক্সিচালক তার দুই দালাল সঙ্গী আলমগীর ও লালুর হাতে তুলে দেয় যুবতীকে। তারা আবার তাকে তুলে দেয় ধৃত দালাল তারিকুলের হাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা ধরা পড়ে যান বিএসএফের হাতে। ওই দুজনকে জেরা করে ওই কিংপিন ট্যাক্সিচালক এবং তার সম্পূর্ণ রুট এর কথা জানতে পেরেছেন বিএসএফের গোয়েন্দারা। এটাও জানা গিয়েছে যে সম্পূর্ণ পাচার চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে সে নিজেই। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584