মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির জেরে নাজেহাল শহরবাসী। এরইমধ্যে ভোররাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল কলকাতার একটি পুরনো দোতলা বাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে আহিরীটোলায়। ওই ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েন এক শিশু ও তাঁর মা। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দমকল এবং পুলিশকর্মীরাও খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলে উদ্ধারকাজ। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় ওই মহিলা এবং আটকে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, আহিরীটোলার ওই দোতলা বাড়িটি দীর্ঘদিনের পুরনো। দীর্ঘদিন তাতে কোনও সংস্কারও হয়নি। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি। তবে পুরনো ওই বাড়িতে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে বলেও জানা গেছে। ভোর রাতে স্থানীয়রা হুড়মুড়িয়ে কিছু ভেঙে পড়ার শব্দ পান। এরপরই বৃষ্টিস্নাত সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয়রা। তাঁরাই দেখেন যে ওই দোতলা বাড়িটি ভেঙে পড়েছে। এরপর স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেয়। তারপর খবর দেওয়া হয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। তৎক্ষণাৎ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। দমকলও যায় ঘটনাস্থলে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। এরপর বেশকিছুক্ষণের চেষ্টায় ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা শিশু ও মহিলাকে উদ্ধার করা হয়।
বাড়িটি একেই অনেক পুরনো। জরাজীর্ণ চেহারা ধারণ করেছিল। তারউপর এই টানা বৃষ্টি। অনেকেই মনে করছেন টানা বৃষ্টির কারণেই বাড়িটি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? টানা বৃষ্টির জেরেই কি বাড়িটি বুধবার ভোররাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল? নাকি দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার না হওয়ার কারণে ভেঙে পড়ল বাড়িটি? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বরে ভারী বৃষ্টির জেরে বড়বাজারের বাবুলাল লেনে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। বাড়িটি চার তলা। সেটিও পরিত্যক্ত ছিল। দীর্ঘদিন তাতেও কোনও সংস্কার হয় না। বাড়িটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা ছিলই। টানা বৃষ্টিতে সেটি ভেঙে পড়ে। চলতি বছরের জুন মাসেই টানা বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়ে শিয়ালদহের একটি পুরনো বাড়ি। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ঠিক পাশেই ওই তিন তলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে পাশের বাড়িতে। ঘটনায় একজন আহতও হন। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আহিরীটোলায় একই বিপত্তি ঘটল।
আরও পড়ুনঃ ভবানীপুরের উপ নির্বাচনে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কমিশনের, জারি থাকছে ১৪৪ ধারা থেকে ওয়েব কাস্টিং
কলকাতা পুরসভার খতিয়ান অনুযায়ী শহর কলকাতায় প্রায় তিন হাজার বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। তবে আহিরীটোলা লেনের এই দোতলা বাড়িটির জরাজীর্ণ দশা হওয়া স্বত্ত্বেও কলকাতা পুরসভার বিপজ্জনক বাড়ির তালিকায় ছিল না। আহিরীটোলা লেনের এই বাড়িটি পুরনো, ভগ্নপ্রায় হয়ে গেলেও কেন এটা কলকাতা পুরসভার বিপজ্জনক বাড়ির তালিকাভুক্ত ছিল না, এখন সেই প্রশ্নই তুলছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুনঃ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী কোভিড বিধি বাড়াল কেন্দ্র
এদিকে, এদিন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আহিরীটোলা স্ট্রিটের বিপর্যস্ত বাড়ি পরিদর্শনে যান পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু এবং স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজাও ঘটনাস্থলে যান। পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের কথায়, কলকাতা পুরসভার সতর্কতা শুনলে আহিরীটোলায় ওই দোতলা বাড়ি ভেঙে জখম হওয়ার ঘটনা নাকি ঘটতই না। বর্তমানে আহিরীটোলার ১০ নম্বর স্ট্রিটের ওই পুরনো দোতলা বাড়িটিকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। ওই বাড়িতে যাঁরা বসবাস করতেন, তাঁদের প্রাথমিকভাবে ত্রিপল দেওয়া হবে। পরে যদি তাঁরা চান তাহলে তাঁদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584