ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
নারদ মামলায় সুপ্রীম কোর্টে করা আবেদন প্রত্যাহার করে নিল সিবিআই, শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে। নারদ কাণ্ডে গ্রেপ্তার ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায় জেলের পরিবর্তে গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও তাঁদের প্রথমে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিল নিম্ন আদালত। বহু আইনি লড়াইয়ের পর সুপ্রীম কোর্টে জামিন খারিজের আবেদন জানায় সিবিআই।
সুপ্রীম কোর্টে বিচারপতি বিনীত শরণ ও বিচারপতি বিআর গাভাই-এর অবসরকালীন বেঞ্চে আজ মামলার শুনানি হয়। অবশেষে সুপ্রীম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় সিবিআই, শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে।
শীর্ষ আদালতে শুনানি চলাকালীন, বিচারপতি বিআর গাভাই একাধিকবার বলেন, “ব্যক্তির স্বাধীনতা যাতে বিঘ্নিত নাহয় সেদিকে সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়টি কোনোভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা বা নেতাদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।”
আরও পড়ুনঃ কোকেনকাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেতার সঙ্গে রাজ্যপালের ছবি পোস্ট, আক্রমণাত্মক কল্যাণ
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শুনানির শুরুতেই মামলার বাস্তব পটভূমি সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিবিআই দপ্তরে ধর্ণা এবং আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনার উল্লেখ করেন। সলিসিটর জেনারেলের দাবি অনুযায়ী যা সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য ছিল সিবিআইয়ের কাজে বাধা দেওয়া।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার কাছে বিচারপতি বিআর গাভাই-এর পরবর্তী প্রশ্ন ছিল হাইকোর্টে যে নির্দেশে নিম্ন আদালতের অন্তবর্তী জামিনের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় সে মামলার নোটিস এই চারজন অভিযুক্ত পেয়েছিলেন কিনা, মেহতা জানান যে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়নি।”কোন ব্যক্তির নাগরিক অধিকার লংঘিত হয় যখন তাঁর আইনিপথে পাওয়া অধিকার বিনা নোটিশে কেড়ে নেওয়া হয়”, বললেন বিচারপতি বিআর গাভাই।
মেহতা আবার মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা ও কর্মীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে বলতে গেলে বিচারপতি গাভাই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা বা বিক্ষোভ দুটির কোনোটিকেই আদালত সমর্থন করছে না। আপনি তাঁদের প্রতি আইনগত ব্যবস্থা নিতেই পারেন কিন্তু তার সাজা অভিযুক্ত কেন ভুগবেন?”
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্য হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠা! গোমাংসে নিষেধাজ্ঞা, একুশে নয়া আইন লাক্ষাদ্বীপে
সলসিটর জেনারেল মেহতাকে আদালত সরাসরি প্রশ্ন করে, “আপনি কি সুরাহা চান আদালতের কাছে? আমরা এতদিন দেখেছি আদালতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয় মানুষের নাগরিক অধিকার রক্ষা করার জন্য, কিন্তু এই প্রথমবারের জন্য আদালতে বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হয়েছে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য”, মন্তব্য করেন বিচারপতি গাভাই।
সুপ্রীম কোর্টের বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানায় আদালত মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা বা আইন মন্ত্রীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ কোনভাবে সমর্থন করছে না একই সঙ্গে সমর্থন করছে না অভিযুক্তের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণকেও।কিছুটা থমকে গিয়েই তুষার মেহতা আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে এটি শুধুমাত্র একটি জামিনের মামলা নয় এর ভিতর নিহিত রয়েছে আরো গভীর কিছু বিষয় যেগুলির প্রতি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি।
তবে এরপরেও যদি তা আদালতের কাছে গ্রহনযোগ্য না হয় তাহলে আর নতুন করে কোনকিছু তিনি যোগ করতে চান না। এরপরে মেহতা আবেদন জানান আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বিষয়টি আদালত যাতে বিবেচনার জন্য মুলতুবি রাখে। বিচারপতি শারণ মন্তব্য করেন, “আপনার অনুরোধেই আজ আদালত মামলাটি শুনছে, তাহলে কেন আবার শুক্রবারের জন্য আর্জি জানাচ্ছেন?” দুই বিচারপতিরই পরবর্তী প্রশ্ন ছিল কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে শুধুমাত্র এই মামলার কারণে, তাহলে কেন তাঁদের কাছে মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের আপত্তি? তাঁরা তো জামিন মঞ্জুর করেই দিয়েছেন, চার বিচারপতির সহমতের ভিত্তিতে। উত্তরে মেহতা বলেন সংখ্যার আধিক্যই একমাত্র উত্তর নয়।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় পাসপোর্টে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল বহু দেশ
বিচারপতি গাভাই এই উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল মেহতাকে আদালতের কর্মপদ্ধতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আপনাকে মনে রাখতে হবে হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্ট সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একইভাবে কাজ করে।”বিচারপতি গাভাই এরপরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন সলিসিটর জেনারেলকে। তিনি বলেন,”যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি হয়ে গেছে তিনি নাকি যাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরিই হয়নি তিনি – কে মামলাকে প্রভাবিত করতে পারেন? আপনার কি ধারণা?” এই প্রশ্নে কিছুটা পিছু হটে মেহতা বলেন,”এই প্রশ্নের অন্তর্নিহিত অর্থ আমি বুঝেছি, তবে একমাত্র আইনগত উত্তরই আমি দিতে পারি।”
আদালতে দীর্ঘ শুনানির পরে দুই বিচারপতি তুষার মেহতাকে পরামর্শ দেন যে, সিবিআই এই মামলা সুপ্রীম কোর্ট থেকে প্রত্যাহার করে নিক এবং কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে মামলার শুনানি হোক। মেহতা শীর্ষ আদালতের বেঞ্চে আবেদন করেন, এই মামলা হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়ার জন্য, মেহতার অনুরোধ মেনে সুপ্রীম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলা ফেরত পাঠায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584