মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কেন? প্রশ্ন কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের

0
64

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যের হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে বিপুল অসন্তোষ প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। বৃহস্পতিবার রাজারহাটের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও বাঙ্গুর হাসপাতাল পরিদর্শনের পর এদিন তারা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালও পরিদর্শন করেন। করোনা রুখতে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো একাধিক জায়গায় অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় জোড়া চিঠি দিয়ে রাজ্যের একাধিক খামতির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

Central health team | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

এদিন মুখ্যসচিবকে জোড়া চিঠি পাঠিয়েছেন কলকাতায় আসা আন্তঃমন্ত্রক টিমের প্রধান তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। একটি চিঠিতে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ নিয়ে রাজ্য সরকারের ব্যবস্থা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য চিঠিকে বাঙ্গুর ও রাজারহাটের হাসপাতালের পরিকাঠামোর খামতি কথা বলেছেন।

letter | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

প্রথম চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন, এই রাজ্যে কোনও করোনা রোগী যদি পথদুর্ঘটনার শিকার হন, তারপরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে তার করোনার কারণে হয়নি এই ধরনের ব্যাখ্যা কিভাবে স্থির করছে প্রশাসন! কেন রাজ্যে পরীক্ষা ফলাফল জানাতে এত সময় লাগছে। রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা এত ধোঁয়াশা কেন! কোন মাপকাঠিতে রাজ্য করোনায় মৃত্যু বা মৃত্যু নয় নির্ধারণ করছে। এর পাশাপাশি রাজ্য আইসিএমআর গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করছে কিনা তাও জানতে চান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

Letters | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

তাঁদের পর্যবেক্ষণ হল, রাজারহাট এবং বাঙুর হাসপাতালে বহু রোগীর টেস্ট রেজাল্ট আসতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। ১৬, ১৭ বা ১৮ এপ্রিল নমুনা পাঠানো রোগীদের রিপোর্ট ২৩ তারিখ পর্যন্ত আসেনি। রিপোর্ট জানতে দেরি হলে হাসপাতাল থেকেই রোগীদের সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেশি হয়ে পড়ছে।

তাদের দাবি, বাঙুর হাসপাতালে রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া খুবই বিশৃঙ্খল। দু’জন রোগীকে তাঁরা খুবই খারাপ অবস্থায় দেখেছেন, তাঁদের কোনও মেডিক্যাল সাপোর্ট তখনও দেওয়া হয়নি। সেখানে সোশাল ডিস্টেন্সিংও মানা হচ্ছে না।

বাঙুরে মাত্র ১২টি ভেন্টিলেটর বেড রয়েছে। অথচ সেখানে গুরুতর রোগীর সংখ্যা ৩৫৪। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে হাসপাতালের তরফে বলা হয়, কোনও রোগীর ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দরকার হলে তাঁদের অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। করোনার মতো মহামারী পরিস্থিতিতে এ ধরনের অবস্থা কেন, তার কোন উত্তর দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

একসঙ্গে অন্য রাজ্যের তুলনায় এই রাজ্যে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার পরেও কেন টেস্ট সংখ্যা এত কম সে বিষয়েও মুখ্য সচিবের কাছে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় টিমকে বলা হয়েছে, বাংলায় টেস্টের সংখ্যা গত ৩ দিনে বেড়ে গড়ে প্রতিদিন ৯০০ হয়েছে। কিন্তু দিনে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টেস্ট করাতে হয়, সেই পরিকাঠামো তৈরি জন্য রাজ্য সরকারের রয়েছে কি না, তার উত্তরও জানতে চাওয়া হয়েছে। যদিও প্রশ্নের উত্তর পাবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরাই।

তবে প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়ার পাশাপাশি কিছু আবশ্যিক পরিবর্তনেরও পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। বলা হয়েছে, কোন রোগীকে কোনও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার জন্য ফেরানো যাবে না। একান্তই অন্য হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হলে যে হাসপাতালে রোগী প্রথম গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই অ্যাম্বুলেন্সের বন্দোবস্ত করতে হবে। ওয়ার্ডের মধ্যে কেউ মারা গেলে সেখান থেকে মৃতদেহ সমস্ত প্রোটোকল মেনে দ্রুত সরাতে হবে।

চিকিৎসক থেকে হাসপাতাল সমস্ত কিছু নিয়ম মেনে জীবাণু নাশ করতে হবে। ১২ ঘন্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফলাফল জানাতে হবে। করোনার পরিস্থিতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষদের আরও স্বাতন্ত্র্য প্রদান করতে হবে। এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও ভালো করতে হবে। স্বাস্থ্য ভবনের অধিকর্তারা যাতে হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের যাতে হাসপাতালে কোনও সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here