করোনায় রাজ্যে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ, তথ্যে গরমিল, মুখ্যসচিবকে কড়া চিঠি কেন্দ্রীয় দলের

0
73

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশের মধ্যে মৃত্যুর হার সর্বাধিক,১২.৮ শতাংশ। রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্যে বিপুল গরমিল রয়েছে। পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণ করোনা টেস্ট হয়নি, এমনকি নজরদারিতে দুর্বলতা রয়েছে। ১৪ দিন ধরে বঙ্গ সফর শেষে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে এমনই কড়া চিঠি দিলেন দক্ষিণবঙ্গে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্রা।

Letter | newsfront.co
কেন্দ্রীয় টিমের চিঠি

জানা গিয়েছে, ২ সপ্তাহের পর্যবেক্ষণ শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা ও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি লিখে নিজেদের পর্যবেক্ষণ জমা দিয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্রা। এই রিপোর্টে অপূর্ব চন্দ্রা রাজ্যের তরফে তথ্য গরমিলের অভিযোগ এনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে যে সংখ্যক অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ৫৭২, ওই দিনই কেন্দ্র সরকারকে পাঠানো রিপোর্টে সেই রোগীর সংখ্যা তার থেকে অনেক বেশি, ৯৩১।

তাহলে সেদিন নবান্ন থেকে কেন তথ্য গোপন করা হল? চিঠিতে মৃতের সংখ্যা নিয়েও তথ্য লুকানোর মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তিনি। মে মাস থেকে বুলেটিনে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। সেই সঙ্গেই তার পর্যবেক্ষণ, দেশের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গে, ১২.৮ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, দু’সপ্তাহ রাজ‍্যে থেকে এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল দক্ষিণবঙ্গের ৪ জেলা কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর ২৪ পরগনা পরিদর্শন করেন। কিন্তু এলাকায় ততটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চোখে পড়েনি বলেই দাবি চিকিৎসক অপূর্ব চন্দ্রের। তার দাবি, রাজ্যে দুর্বল নজরদারির কারণে বহু সংক্রামিতকে চিহ্নিত করা যায়নি। এমনকি কনটেনমেন্ট এলাকাতেও নিয়মিত নজরদারির অভাব রয়েছে। তবে রাজ্যে কম পরীক্ষার হার থাকলেও সাম্প্রতিক একটি চিঠির পর টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো ও ল্যাবের জন্য অস্থায়ী ডাটা অপারেটর নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

চিঠিতে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে আসা সত্ত্বেও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অপূর্ব চন্দ্রের দাবি, তিনি রাজ্যকে মোট ৭ টি চিঠি দিয়েছেন। বেশ কিছু তথ্য জানতে বিভিন্ন দফতরের সচিব-সহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে এক দিন ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার বাইরে অন্য কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি কেন্দ্রীয় দলের ওই প্রধান। আর প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যই পাওয়া যায়নি।

তবে সমালোচনার পাশাপাশি চিঠিতে রাজ্যের অনেক পদক্ষেপকে প্রশংসনীয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তার চিঠির পর রাজ্যে যে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে, তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অপূর্ব চন্দ্র। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, রাজ্য খুব দ্রুত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যেখানে রাজ্যে গড়ে ৪০০টি পরীক্ষা হত, সেখানে ২ মে পরীক্ষার সংখ্যা ২৪১০টি। এই পরীক্ষার হার আরও বাড়ানো হোক। এছাড়া করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩০ এপ্রিল রাজ্যের সম্পূর্ণ ঘোষণারও প্রশংসা করা হয়েছে। ওই দিন মুখ্যসচিব ঘোষণা করেন যে, হাসপাতালের চিকিৎসকরাই মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। রাজ্যের বিশেষ অডিট কমিটি প্রতিটি মৃত্যুর অডিট আর করবে না।

রাজ্যের এই ঘোষণাকে করোনা পরিসংখ্যানে স্বচ্ছতা আনার পথে একটা বড় পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করে হয়েছে। রাজ্যের ৬ টি পরীক্ষাগারে ‘পুল টেস্ট’ শুরু করাও প্রশংসনীয়। আইসিএমআর নির্দেশিকা মেনে হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে যে নির্দেশিকা রাজ্য জারি করেছে, সেই পদক্ষেপও এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বলে দাবি করেছেন তিনি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here