শুভম বন্দোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজের টিম সাজানোর লক্ষ্যে তিনি যে কড়া সিদ্ধান্ত চলেছেন, তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মঙ্গলবার ২১ জুলাইয়ের সভাতেই। প্রত্যাশামতোই রাজ্য থেকে জেলাস্তরে ব্যাপক রদবদল ঘটালেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

একদিনে যেমন বেশ কিছু বিতর্কিত নেতা নেত্রীকে বাদ দিলেন, তেমনই গুরুত্ব কমিয়ে দিলেন অনেকের। আবার মাঠে ঘাটে ঘুরে কাজ করতে পারবে এমন তরুণ রক্তও যোগ করলেন সংগঠনে। ২০১৯ লোকসভার শক্তিক্ষয় ঝেড়ে ফেলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে, তা পরিষ্কার হয়ে গেল এদিনের সংগঠনের খোলনলচে বদলে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সব জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের ভিডিও কনফারেন্সে ডেকে বৈঠক করেন তিনি। জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দুলাল মুর্মু, মহুয়া মৈত্র, পার্থপ্রতিম রায়, শ্যামল সাঁতরা, গুরুপদ টুডু একাধিক নতুন যৌবনকে তিনি দলের মুখ্য সারিতে নিয়ে এসেছেন। ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের পর মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। সফল ভাবে সামলানোর পর এবার তাঁকেই গোটা নদিয়া জেলার সভাপতি করা হল। গোষ্ঠী কোন্দলে বিদীর্ণ কোচবিহার জেলা সভাপতি পদে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে সরিয়ে আনা হল প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। হাওড়়া জেলা (শহর) সভাপতি পদ থেকে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে।
তৃণমূলের জেলা সংগঠনে ‘চেয়ারম্যান’ নামে এক নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়াতেও সভাপতি বদল করেছেন দিদি। শুভাশিস বটব্যালের জায়গায় বাঁকুড়ার সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে।
পুরুলিয়ায় শান্তিরাম মাহাতোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গুরুপদ টুডু, যিনি রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী। ঝাড়গ্রামের সভাপতি পদ থেকে বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুলাল মুর্মুকে। বীরবাহাকে ঝাড়গ্রামের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।জঙ্গলমহল থেকে ছত্রধর মাহাতো, সুকুমার হাঁসদা ও চূড়ামণি মাহাতোকে রাজ্য কমিটিতে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ শাসকদলের কর্মীর মতো আচরণ কেন পুলিশের?-মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা তলব রাজ্যপালের
উত্তর কলকাতার চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, উত্তর ২৪ পরগনার চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে পাণিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষকে, দার্জিলিং জেলার চেয়ারম্যান করা হয়েছে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে।
উত্তরবঙ্গের কেবল দুটি জেলাতেই সভাপতি বদল করেছেন দিদি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি পদ থেকে অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গৌতম দাসকে। কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি হয়েছেন পার্থপ্রতিম রায়। উনিশের লোকসভা ভোটে এই জেলায় আশানুরূপ ফল না হওয়াতেই এই রদবদল বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ার জেলার কো অর্ডিনেটরের পদে তৃণমূলের নতুন মুখ
এদিন তৃণমূলের যুব সংগঠনেও রদবদল ঘটিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সংগঠনে নতুন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সাত জনকে সদস্য করা হয়েছে,- সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শান্তা ছেত্রী।
তবে এই দিনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বদল হল, ছত্রধর মাহাতোকে দলের রাজ্য কমিটিতে আনলেন মমতা। একসময়ে ২০০৮ সালে শালবনির জিন্দাল ফ্যাক্টরি উদ্বোধন করে মেদিনীপুরে ফেরার পথে ৬০ নং জাতীয় সড়কে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়েন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম ছত্রধর মাহাতোর নাম সামনে উঠে আসে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি জনসাধারণের কমিটির মুখ ছিলেন। তাঁর গায়ে সেঁটে যায় মাওবাদী তকমা। পরে তিনি ধীরে ধীরে তৃণমূলের দিকে সরে আসেন। সেই নেতাই এতদিনে তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584