পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
মঙ্গলবার কাঁথির জনসভা থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের সব প্রকল্পকে বাংলার সরকার তাদের প্রকল্প বলে চালাচ্ছে। বাংলায় এসে অমিত শাহ এমন একটা অভিযোগ করে দেবেন আর তৃণমূল চুপচাপ শুনবে তা তো আর হয় না! ফলে যা হওয়ার তাই হল। বিজেপি-কে ‘টুকলিবাজ’ বলে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার বীরভূমের রামপুরহাটে সরকারি সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা থেকেই মমতা বলেন, “কোথাকার কোন হরিদাস পাল এসে বলছে,ওদের প্রকল্প নাকি আমরা আমাদের নামে চালাচ্ছি। লজ্জা করে না! কন্যাশ্রী শুরু হয়েছে কবে? ২০১৩ সালে। আর ওদের বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও চালু হয়েছে কবে? ২০১৫ সালে। যত টুকলিবাজ। তোমরা আমাদের টুকলি করো ।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আমাদের টুকলি করার কোনও প্রয়োজন নেই।” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ওরা বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াওতে সারা দেশে ১০০ কোটি টাকা খরচ করে। প্রতিটা মেয়ে তিন পয়সা করে পায়। আর এখানে আমরা মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছি।”
কাঁথির সভা থেকে ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্রেই শান দিয়েছিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বাংলার সরকার দুর্গাপুজো এবং সরস্বতী পুজোতে বাধা দিচ্ছে বলে তোপ দেগেছিলেন তিনি। তার জবাবেই মমতা এ দিন দর্শকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “বলুন মা বোনেরা আমার, বাংলায় দুর্গাপুজো হয় কি হয় না? সরস্বতীপুজো হয় কি হয় না?” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “ওরাই বাংলায় দুর্গাপুজো বন্ধ করতে চায়।
তাই ক্লাবগুলিকে আয়কর দফতর নোটিস দিচ্ছে। কলকাতার পুজো কমিটিগুলিকে ডেকে পাঠাচ্ছে।” এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁরা এখানে পাহারাদারের মতো বসে আছে। দাঙ্গা করতে এলে বুঝিয়ে দেওয়া হবে কত ধানে কত চাল।
বুধবার বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানালেন মমতা। রামপুরহাটের সরকারি সভা থেকে এ দিন তিনি বলেন, “আমি ছবি আঁকলেও বলছে চুরি। লিখলেও বলছে চুরি।” সেই সঙ্গে দিদি আরও বলেন, “কিছু অর্ধশিক্ষিত আর গর্ধশিক্ষিত এসে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছে। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করছি। যদি দেখাতে পারে ছবি আঁকার এক পয়সা আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।”
মঙ্গলবার শুধু অমিত শাহ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আঁকা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান তথা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও। কাঁথির মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, তিনি আঁচড় কাটলেই নাকি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। কিন্তু উনি আর আঁচড় কাটছেন না কেন? কেন বন্ধ করে দিলেন?” তারপর তাতে আরও অক্সিজেন দিয়েছিলেন শাহ। আর এ দিন সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রণংদেহি হয়ে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী।
চিট ফান্ড কাণ্ডে গত সপ্তাহে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে তাঁর অফিস থেকে কার্যত তুলে নিয়ে এসে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে রোজভ্যালির মালিক গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে ২৫ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ তো রয়েইছে।
সেই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, চিটফান্ডের টাকা ঘুরিয়ে একাধিক লোককে মুখ্যমন্ত্রী ছবি কিনতে বাধ্য করেছিলেন টলি পাড়ার নাম্বার ওয়ান প্রযোজক। সেই সূত্র ধরেই অমিত শাহ, মুকুল রায়েরা বাংলার শাসক দলের একেবারের উপরের দিকের নেতানেত্রীদের টার্গেট করে আক্রমণ শানাতে শুরু করেন। এ দিন পাল্টা দিলেন মমতাও।
সিবিআই, ইডি-র মতো সংস্থাকে কেন্দ্রের শাসক দল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে ব্যবহার করছে, এই অভিযোগ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নতুন নয়। এ দিন সেই অভিযোগ তোলার পাশাপাশি রাজ্য এজেন্সির কথা তুলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা হুঁশিয়ারিও দিলেন বীরভূমের সভা থেকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা সিবিআই, ইডি-র মতো অনেক এজেন্সি দেখাচ্ছে। মনে রাখবেন, আমাদের হাতেও সিআইডি আছে, এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) আছে।
শিশু চুরির মামলায় কিন্তু এখনও বাইরে ঘুরছে অনেকে।” প্রসঙ্গত শিশু চুরি এবং পাচারের মামলায় নাম রয়েছে বিজেপি নেত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের। শুধু তো তিনি নন, কেন্দ্রীয় বিজেপি-র তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নামও রয়েছে ওই মামলায়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা এ দিন ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, এরপর দলের নেতাদের দিকে যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হাত বাড়াতে চায় তাহলে রাজ্যের এজেন্সি দিয়ে গেরুয়া শিবিরের নেতাদেরও শায়েস্তা করবেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584