লকডাউনে ভারতে বেড়েছে শিশুপাচার

0
91

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউন জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই লকডাউনের সময়ে কাজ হারিয়েছেন এ দেশের বহু মানুষ। ফলে দারিদ্রতাকে সঙ্গী করেই দিন গুজরাচ্ছেন পরিবারগুলি। যার কারণে শিশুপাচারের মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী শিশুকে বেআইনি শ্রমে বাধ্য করা বা বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও।

Child trafficking | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

লকডাউন চলাকালীন নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রকের চালু করা চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮-এ ফোন এসেছিল ২৭ লক্ষ। সেই নম্বরে ফোন পেয়ে কর্মীরা ১ লাখ ৯২ হাজারটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেন। গতবছর একই সময়ে হস্তক্ষেপের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার।

গত পাঁচ মাসের মধ্যে ১০ হাজার বাল্যবিবাহের কথা জানতে পেরেছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের আধিকারিকরা। প্রতি রাজ্যে ৫০ শতাংশ পুলিশ ডিস্ট্রিক্টে অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট থাকতে হবে। একথা উল্লেখ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায়। যদিও উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে তা কল্পনাতীত।

আরও পড়ুনঃ  ভিন্ন ধর্মের যুবতীর সঙ্গে বন্ধুত্বের অপরাধে খুন দিল্লির ছাত্র

সবচেয়ে বেশি এবং অতি সহজেই শিশুপাচারচক্রের ফাঁদে পড়ে যায় শিশু-তরুণরা। একবার তাঁরা পাচার হয়ে গেলে নানাভাবে অন্যায়ের শিকার হয়। অনেককে দিয়ে পতিতাবৃত্তিও করানো হয়। অনেককে ভিক্ষা করতে বাধ্য হতে হয়। আবার অনেককেই জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। গত ৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে বিভিন্ন রাজ্যগুলির কাছে আবেদন জানিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ধর্ষণে অভিযুক্ত কংগ্রেসের প্রার্থী! প্রশ্ন তুলতেই মহিলা সদস্যকে নিগ্রহ

চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের যে ত্রাণকর্মীরা পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধার করেছেন, তাঁরা নানা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে।

তাঁরা জানিয়েছেন, রাজস্থানের তিনটি বাস থেকে ১০টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা পাচার হয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে একটি ১৫ বছরের মেয়ে বিয়ে করবে না বলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে বেঁচে ওঠে। তখন তাঁকে ফের বিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে চাইল্ড লাইন নম্বরে ক্রমবর্ধমান আবেদনের নিরিখেই সতর্ক করা হয় রাজ্যসমূহকে।

আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত কতজন মন্ত্রী আয়ুষের চিকিৎসা নিয়েছেন? জানতে চায় আইএমএ

কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের হেডমাস্টার এবং পাচার বিরোধী আন্দোলনকারী চন্দন মাইতির কথায়, তিনি ক্লাস নাইনের একটি মেয়ের কথা জানেন, যে তাঁর সহপাঠীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় তাঁর স্বামী ১৬০ টাকা রোজ মজুরিতে ইলিশ মাছ ধরতে যায়।

মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা উল্টে সে নিখোঁজ হয়। নিয়মমতো মেয়েটিকে সাত বছর সাদা থান পড়ে বিধবার বেশ ধারণ করতে হত। রোজ প্রার্থনা করতে হত যাতে তাঁর স্বামী ফিরে আসে। চন্দন মাইতি সংশ্লিষ্ট দু’টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মেয়েটি ফের স্কুলে আসা শুরু করে।

লকডাউনে জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। সেই সুযোগেই শিশু পাচার, বাল্য বিবাহের মত ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে শিশু শ্রমও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ লকডাউনের জেরে ভারতের দুর্বল হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ধীরে ধীরে সমস্ত কলকারখানাগুলি খুলে যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে কম মজুরিতে শ্রমিকের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শ্রমিক হিসাবে শিশুদের কাজে লাগানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here