শুভশ্রী মৈত্র
গত দুমাস ধরে নির্বাচনী লড়াই দেখার পর সবে নতুন সরকার শপথ নিয়েছে, গঠিত হয়েছে নতুন মন্ত্রীসভা। সরকারের এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। তার মাঝেই গত সোমবার দিনভর আমরা প্রত্যক্ষ করলাম কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল বনাম রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের আইনি যুদ্ধ। দেখলাম মন্ত্রীদের ৬ বছরের পুরনো মামলায় হঠাৎ গ্রেফতার, তারপর জামিন তারপরে আবার রাত-বিরেতে হাইকোর্টে আবেদন এবং জামিনে স্থগিতাদেশ।

প্রশ্ন হল, এই সুবিধাগুলো কি আমরা সাধারণ নাগরিকরা পেয়ে থাকি? উত্তর হল- না পাইনা, কারণ ভারতীয় আইন ব্যবস্থা আদতে অনেকটাই ‘ক্লাস জাস্টিস’। যদি খেয়াল করা যায়, জেলগুলোতে ঠিক কারা থাকেন- দেখবেন তাঁদের অধিকাংশই প্রান্তিক মানুষ, খাল পাড়ের রঘু বা রেল বস্তির ইয়াসিন। যার মেয়েটা আর স্কুলে যায় না, ছেলেটার কাজ জুটেছে চায়ের দোকানে। তাদের বেলায় আছে হাজারো নিয়ম। আর রেহাই! যখন আদালতে মামলা উঠবে, শুনানি শেষ হবে আরো কত শত নিয়ম পেরিয়ে তারপর মিলবে ‘বেল’ বা জেল থেকে বেরোনোর ছাড়পত্র।
আরও পড়ুনঃ রাজভবনের সামনে ভেড়ার পাল নিয়ে বিক্ষোভ, মামলা দায়ের হেয়ার স্ট্রিট থানায়
এবার ধরা যাক, কোনো নেতা বা কোন মন্ত্রী বা যাকে বলে ‘প্রভাবশালী’- যার পরবর্তী প্রজন্ম ‘ বিএমডব্লিউ’ চড়ে। তার জন্য সব সম্ভব। আদালতের ‘কুইক জাস্টিস’ প্রথা নির্ভর করে আদালতের দরজায় উপস্থিত মানুষটির সামাজিক অবস্থানের ওপর। সেটা তাঁর জেল বা বেল দুটো কারণেই।উদাহরণ বেল – অভিনেতা সলমন খান। সকালে সাজা ঘোষণা। বিকেলে মাননীয় হাইকোর্ট থেকে বেল। কারণ প্রচ্ছন্ন ভাবে রাষ্ট্র চেয়েছিল, তাই মিলেছিল সহযোগিতা, অভিনেতার প্রভাব আর রাষ্ট্রের প্রভাব একসুরে ছিল।
এইবার আসি দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, একজন সাধারণ নাগরিক, একবেলায় ‘বেল’ চাই, তিনি কি কি বাধা পাবেন দেখা যাক-
১. আজকে কোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
২. শুক্রবার বিকেলে আবার ফাইল কিসের!
৩. সার্টিফায়েড কপি হাতে পেতে দেরি, কারণ আপনি সাধারণ।
৪. আজকে হলফনামা নেওয়া হবে না, সময় শেষ।
৫. আরো বেশ কিছু জানা বা অজানা কারণ যেগুলো উহ্যই থাকে। ছুটি থাকুক, লকডাউন থাকুক, রাত-বিরেতে যখনই হোক উচ্চ আদালতে হলফনামা জমা হবে আপনার পিটিশন ফাইল হবে রাষ্ট্র হিসেবে।মাননীয় বিচারকরা নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আদালতে আসবেন, শুনানিও হবে।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের
মজা হলো এগুলো সবই কিন্তু আইন মোতাবেক। কোনোভাবেই বেআইনি নয়। আইনটা এভাবেই লেখা।
এবার ভাবুন, রাষ্ট্র যা চায় আপনি তার উল্টো দিকে আছেন; কি হতে পারে! ওই যে বললাম আপনি মশাই ‘মাস জাস্টিসের’ দলে। যখন যেমন সময় হবে বেঁচে থেকে বা মরে গিয়ে জাস্টিস পাবেন খন, এত তাড়া কিসের! একে আইনি সন্ত্রাস বললে কি খুব ভুল বলা হবে? হয়তো শব্দটা নতুন বলে কানে বাজবে।
কিন্তু একটু গভীরে তাকান, আপনার চিন্তা যদি রাষ্ট্রের ভাবনার বিপরীতে বয় তবে আপনি হারবেন। আইনটা সেই ভাবেই লেখা- বাকিটা মলাট। মলাট পড়ে আপনি ভাবলেন পুরো বইটা পড়ে ফেলেছেন, ওখানেই ভুলটা করলেন।আপনি একজন সাধারণ নাগরিক মানে যাকে আমজনতা বলে আর কি, এবার নিজেকে সন্দেহভাজনের দিকে বসিয়ে ভাবুন। ধরে নেওয়া গেলো কোনো ভাবে আপনি মুক্তি পেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী ডিউটিতে গিয়ে ১৬০০ নয় মৃত্যু ৩ জন শিক্ষকের, দাবি যোগী সরকারের
এবার বলুন তো কোথায় কোথায় ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হয়েছিল! হয় জীবনের ১০ থেকে ১৫ বছর বা অন্য কিছু। এভিডেন্স অ্যাক্ট আর সিআরপিসি যাই বলুক, বিচারে শ্রেণী সাম্য- একেবারেই অন্তঃসারশূন্য একটি ইউটোপিয়া ছাড়া বিশেষ কিছু নয়। আসলে হলো আপনার ইমেজ কতটা প্রভাব ফেলে আর সেই প্রভাব রাষ্ট্র Endorse করে না Disapprove করে। খাপে খাপ হলে আপনি বেঁচে গেলেন। না হলে আপনি সেই ‘আইনি সন্ত্রাস’ -এর শিকার যেকোন সময় হতে পারেন, আইন মোতাবেক পন্থায়।
(মতামত একান্ত লেখিকার ব্যক্তিগত)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584