সিউড়ি সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে তুলোধনা করলেন মমতা

0
127

পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ

লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে এসে সিউড়ির সভামঞ্চ থেকে প্রথমেই কয়েকটি বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এই প্রার্থীরা হলেন,হাবিবপুরে প্রার্থী অমল কিসকু, ইসলামপুরের আবদুল করিম চৌধুরী,দার্জিলিং বিধানসভা বিনয় তামাং আর ভাটপাড়ায় মদন মিত্র।এই ঘোষণার সাথে সাথে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন মদন মিত্রের।পরপরই একগুচ্ছ উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘চোখে দেখতে পায় না, কানে শুনতে পায় না!’ রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ, সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল,বোলপুর সুপার স্পেশালিটি এবং অন্যান্য নানান প্রকল্পের খতিয়ান একে একে তুলে ধরতে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।সভামঞ্চ থেকে দুদিন আগেই অমিত শাহের সভায় একটি বক্তব্য নিয়ে তাকে কটাক্ষ করেন। নাম না করে এদিন অমিত শাহকে তিনি বলেন, “এটা নাকি রবীন্দ্রনাথের জন্মভূমি।কর্মভূমিটা ভুলে গেছে।হোম ওয়ার্ক করে না।” প্রসঙ্গত ২২ তারিখে অমিত শাহ সভা মঞ্চ থেকে বলেছেন বীরভূম রবীন্দ্রনাথের জন্মভূমি।আর নরেন্দ্র মোদী গতকাল ইলামবাজারের কামারপাড়ার ময়দান থেকে বলেছিলেন শান্তিনিকেতনে গুন্ডারাজ তৈরি করেছে দিদি।

CM meeting at siuri
নিজস্ব চিত্র

এপ্রসঙ্গে আজ সিউড়ি সভা মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এর মাথার ঠিক আছে তো!মাথাটা বোধহয় পরীক্ষা করা উচিত। ইমিডিয়েট পরীক্ষা করা উচিত।” এরপরই বলেন, “শান্তিনিকেতন আমাদের সকলের সম্মানের জায়গা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নভূমি। আমাদের মাতৃভূমি, ধর্মভূমি,কর্মভূমি, জন্মভূমি,পিতৃভূমি।সব ভূমি, শিক্ষা ভূমি, সংস্কৃতি ভূমি।শান্তিনিকেতনে গুন্ডা তৈরি হলো কোত্থেকে? শান্তিনিকেতন গুন্ডার জায়গা নয়।নরেন্দ্র মোদী বাবু, আপনি একটা হোমওয়ার্ক করেও আসেন না।কোন এলাকায় গিয়ে কি বলতে হয় সেটাও পর্যন্ত জানেন না।এটা আমার রাঙ্গামাটির জায়গা। ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে’। এটা হচ্ছে আমাদের শান্তিনিকেতন, আমাদের শান্তির শান্তিনিকেতন।”
এরপরেই তিনি তাঁর প্রশ্নবান ছুঁড়ে দেন বিজেপির দিকে, “মমতা ব্যানার্জী উন্নয়ন করেনি! আর ওরা এসে উন্নয়ন করবে! জিজ্ঞেস করুন বিশ্বভারতীতে একটা রাস্তা করতে টাকা দিয়েছে? বিশ্বভারতী সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি,একটা রাস্তা করতে টাকা দিয়েছে?বিশ্বভারতী জন্য ক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে?আর আমি তো আপনাদের বললাম এখানে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্য কত কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।আমি তো আপনাদের কয়েক হাজার কোটি টাকার হিসেব দিলাম। তৃণমূল কংগ্রেস কি করেছে।নরেন্দ্র মোদী আর বিজেপি কি করেছো?”
এরপর তিনি ইউপির প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদীকে গব্বরের সাথে তুলনা করে বলেন, “আগে বাবা-মায়েরা বলতো ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে। বুলবুলিতে ধান খেলো যে, খাজনা দেবো কিসে।আর এখন ইউপি বিহারের মানুষ বলে,ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, গব্বর এলো দেশে, ধন মনেপ্রাণে সব মেরে দিল বাঁচবো এবার কিসে?”

সভামঞ্চে আজ মমতা ব্যানার্জির আক্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল বি.জে.পি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।নিজের সাত বছর রাজত্বের নানান উন্নয়নের খতিয়ান ও তাঁর হিসাব আজ তিনি সভামঞ্চে তুলে ধরেন।নিজের দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন।
আর ঠিক সভামঞ্চ ত্যাগ করার আগেই তিনি বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বুকে একরাশ সাহস এবং নির্দেশ দিয়ে যান।বলে যান, “আর কেষ্ট,তোমার পেছনে ওরা লাগবে।একটু আধটু চমকাবে,ধমকাবে।বিজেপির পার্টি অফিস থেকে সবটাই কন্ট্রোল করে আগেরবারেও করেছিল।বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করবে। মানুষকে সাথে নিয়ে লড়াই করবে।তোমাদের হিম্মতকে আমি সম্মান করি,হিম্মতকে স্যালুট করি।কেউ আসবে,যাবে,কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।”

তবে এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন? তাহলে কি তিনি কমিশনকে উপলক্ষ্য করেই কেষ্টকে একথা বলে গেলেন?কারন কেষ্ট অর্থাৎ অনুব্রত মন্ডল বারবার বিতর্কিত মন্তব্যের কারনে কমিশনের নজরে পড়ছেন,যা আগের বিভিন্ন ইলেকশনের সময়ও দেখা গিয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ মোদীকে জবাব দিতে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল পোলো গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রীর সভা

আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো,কেষ্ট অর্থাৎ অনুব্রত মণ্ডল এবং দলীয় কর্মী সমর্থকদের লক্ষ্য তিনি মঞ্চ ত্যাগ করার আগে নির্দেশ দিয়ে যান , “তবে হ্যাঁ, বিজেপির দালালদের চিনে রাখবেন, পরে কাজে লাগবে।” সব নিয়ে রাজনৈতিক একটা মানে থেকেই যাচ্ছে।যা কিয়দংশ অন্তরালে থেকেও রাজনৈতিক মহলের কাছে কিছুটা হলেও স্পষ্ট।এরপর কি বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো সেটাই দেখবার।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here