নিউ আলিপুর থানাতেই কমিউনিটি কিচেন, ১১ বস্তিতে ১০০০ লাঞ্চবক্স বিলি পুলিশের

0
73

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

পুলিশের কর্তব্য যে শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বা আইনশৃঙ্খলা সামাল দেওয়া নয়, লকডাউনের সময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোও, তা যেন হাতে কলমে করে দেখিয়ে দিলেন নিউ আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরা। বাইরে থেকে কোনও ফান্ড নয়, থানার পুলিশকর্মীদের উদ্যোগেই ফান্ড তৈরি করে চাল ডাল সবজি কিনে থানাতেই কমিউনিটি কিচেন তৈরি করে রান্না করিয়ে ১০০০ টি লাঞ্চবক্স তৈরি করিয়ে ১১ টি বস্তিতে বিতরণ করছেন তাঁরা। একটি থানার এরকম প্রচেষ্টা নজিরবিহীন ও সাধুবাদযোগ্য বলে মত লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদেরও।

Lunchbox | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

এলাকার মানুষকে যাতে কোনওভাবেই রাস্তায় বেরোতে না হয়, তার জন্য আগেও সক্রিয় হয়েছিলেন নিউ আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরা। এলাকার বিক্রেতাদের নম্বর সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার বুকিং করিয়ে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু যাদের লকডাউনে যাদের রোজগার নেই, কেনার সামর্থ্য নেই, এবার তাঁদের পাশেও দাঁড়ালেন পুলিশকর্মীরা।

Lunchbox distribute | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

কিন্তু এভাবে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিচ্ছেন তাঁরা? জানা যাচ্ছে, এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই এই কাজ শুরু করার সময়েই নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট দল তৈরি করে নিয়েছেন। সকালে যারা ডিউটি থাকেন, তারা প্রথমেই সকালের বাজারটা সেরে রাখছেন। তারপর থানার রান্নাঘরে চলছে আরেকটি দলের সবজি কাটা থেকে রান্না করা। রাঁধুনি তো রয়েছেনই, এছাড়াও থানার পুরুষ পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি সাহায্য করছেন মহিলা পুরুষকর্মীরাও।

Police | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

এরপরেই কাজ শুরু তৃতীয় দলের। থানার পরিভাষায় এরা ‘ফিল্ড ডিস্ট্রিবিউশন টিম।’ সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১১ টার মধ্যে পিপিই, ফেস মাস্ক-সহ যাবতীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে স্যানিটাইজ করা টেবিলে প্রত্যেক দিনের কেনা প্লাস্টিকের কৌটোয় খাবারের প্যাকেট সিল করে তারা তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন। রাস্তার একটি জায়গায় টেবিল দাঁড় করিয়ে খাবারের প্যাকেট সাজিয়ে ডাকা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এভাবেই এলাকার ৪ টি ওয়ার্ডের ১১ টি রাস্তায় বস্তিবাসীদের প্রত্যেক দিন দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে ১০০০টি লাঞ্চ বক্স বিতরণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ ইফতারের খাদ্যসামগ্রী দান তৃণমূল নেতা ইয়াসিনের

Community kitchen | newsfront.co
সংবাদ চিত্র

তবে খাবার বিতরণের সময় সুরক্ষার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানছেন এবং মানতে বাধ্য করছেন পুলিশকর্মীরা। প্রত্যেক জায়গায় ১০০ টা করে সেফটি সার্কেল তৈরি করা হয়েছে, যাতে সাধারন মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় ।খাবার নেওয়ার সময় বস্তিবাসীকে অবশ্যই মাস্ক পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, অন্তত ২১ মে পর্যন্ত এইভাবে খাবার বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তারপরে ইতিবাচক সাড়া থাকলে এবং সম্ভব হলে এই প্রকল্প আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

জানা গিয়েছে, সাধারণ মানুষ যাতে বাজারে ভিড় না করে, তার জন্য আগে থেকেই রাস্তায় নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশকর্মীরা। মধ্যবিত্তদের জন্য মধ্যস্থতার মাধ্যমে ব্যবস্থা হলেও এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছিল এলাকার এক বিশেষ শ্রেণির গরিব মানুষ কোন উপার্জন করতে পারছেন না। ফলে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।

তারপরই স্থানীয় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই মানবিক উদ্যোগ নেন পুলিশকর্মীরা। এই থানার ওসি অমিত শংকর মুখার্জি বলেন, ‘এলাকার মানুষজন যাতে ভাল থাকেন, সেটা দেখাও আমাদের কর্তব্য। কোনও সহকর্মীকে জোর করা হয়নি। মানসিক আবেদনে সাড়া দিয়েই সকলে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকা সাধ্যমত চেষ্টা করছি আমরা।’

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here