শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
নিজেদের তত্ত্ব তাহলে কি নিজেরাই বাতিল করল সরকার! সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের পর এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিনের বুলেটিনে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, এতদিন ডেথ অডিট কমিটি বসিয়ে কিছু মানুষের মৃত্যু করোনাতে এবং কিছু মানুষের মৃত্যু করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে দাবি করলেও এদিন সমস্ত কিছু যোগ করে মোট ৪০৫ জন মৃত্যুর হিসেব দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নিজস্ব ডেথ কমিটিকে বাতিল ঘোষণা করে তাহলে কি ওই ৭২ জনের মৃত্যু করোনাতেই হয়েছে, এমন মেনে নিল রাজ্য সরকার? যদিও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সরকারিভাবে এই নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে যখন করোনায় মাত্র ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তখনই এই কো-মরবিডিটি তত্ত্ব আচমকা সামনে নিয়ে আসা হয়। সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে করণাতে এবং বাকি তিনজনের করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে।
WB COVID-19 Daily Health Bulletin: 8th June, 2020.
A detailed snapshot of all relevant details on COVID-19 in WB. Keep checking.পশ্চিমবঙ্গ কোভিড-১৯ দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিন: ৮ই জুন, ২০২০।
পশ্চিমবঙ্গের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেতে নজর রাখুন।#BengalFightsCorona pic.twitter.com/mVpA4aXaeL— Department of Health & Family Welfare, West Bengal (@wbdhfw) June 8, 2020
আর অন্য উপসর্গে মৃত্যু মানেই তা করোনাতে মৃত্যু নয়। এরপরই নবান্নে গঠিত হয় বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে এক্সপার্ট কমিটি। অনেকে আবার এদের ডেথ অডিট কমিটি বলেও ঘোষণা করেন।
WB COVID-19 Daily Health Bulletin: 7th June, 2020.
A detailed snapshot of all relevant details on COVID-19 in WB. Keep checking.পশ্চিমবঙ্গ কোভিড-১৯ দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিন: ৭ই জুন, ২০২০।
পশ্চিমবঙ্গের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেতে নজর রাখুন।#BengalFightsCorona pic.twitter.com/8iBaaVDrVc— Department of Health & Family Welfare, West Bengal (@wbdhfw) June 7, 2020
এরপরেই নবান্নের তরফে সমস্ত হাসপাতালগুলিতে ৩৪ দফা প্রশ্ন পাঠানো হয়। কোনও রোগীর করোনাতে মৃত্যু হলে তার আগের সমস্ত উপসর্গ, তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, কতবার অপারেশন হয়েছে এবং তার ফলাফল কি, এই সমস্ত তথ্য দিতে বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে কেজরিওয়াল ও লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সংঘাত চরমে
তার ওপর নির্ভর করে ডেথ অডিট কমিটি চূড়ান্ত করত, কার মৃত্যু করোনাতে এবং কার মৃত্যু করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে। এভাবে করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে ৭২ জনের মৃত্যু আলাদা করা হয়েছিল। যাদের করোনাতে মৃত্যু, তারাই রাজ্যের তরফে ঘোষিত ক্ষতিপূরণের দাবিদার ছিলেন। এই ৭২ জন সেই অর্থে দাবিদার ছিলেন না।
কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, কোন ব্যক্তির যখন করোনা থাকাকালীন মৃত্যু হচ্ছে, সেটি যে অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলছে না, সেই যোগসুত্র সম্বন্ধে কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে এই কমিটি? ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেও এইভাবে মৃত্যুর পৃথকীকরণ নিয়ে প্রশ্ন করে।
তারপর এই বেশ কিছুদিন আগে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই ডেথ অডিট কমিটি তার তৈরি নয়, এটি স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি। এমনকি, তার কিছুদিন বাদে করোনা মৃত্যু পৃথকীকরণের জন্য ওই কমিটিতে কেস পাঠানোও বন্ধ হয়ে যায়। কো-মরবিড অর্থাৎ করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে মৃত্যু আটকে যায় ৭২ জনেই।
যদি সরকারিভাবে এই কমিটি বাতিলের কথা কখনো ঘোষণা করা হয়নি। প্রতিদিন বুলেটিনে করোনায় মৃত্যু বৃদ্ধির সঙ্গে এই কো-মরবিড ৭২ জনের মৃত্যু হিসেবও দেওয়া থাকত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা আর বাড়ছিল না।
এরপর সোমবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে চমকে যান সকলে। দেখা যায়, ওই করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গে ৭২ জনের মৃত্যুও যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে করোনার মোট মৃত্যুর হিসেবে। এমনকি জেলাওয়ারি তথ্যেও যুক্ত করে নেয়া হয়েছে সমস্ত হিসাব।
এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি নিজস্ব তত্ত্ব নিজেরাই বাতিল করে সব মৃত্যু করোনাতেই মেনে নিল সরকার! একই সঙ্গে দাবি উঠতে শুরু করেছে, ওই ৭২ জন কি করোনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পাবেন? যেখানে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের করোনা থাকাকালীন অন্য উপসর্গ মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল।
সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে ছড়িয়েছে ধোঁয়াশা। তবে এই প্রসঙ্গে যে রাজ্য সরকার ব্যাকফুটে, এদিন সংশোধিত বুলেটিনই যেন তার জবাব দিয়ে দিল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584