জোটেই জট! সংযুক্ত মোর্চা জোটে ইতি টানল রাজ্য কংগ্রেস

0
205

জৈদুল সেখ, মুর্শিদাবাদঃ

অবশেষে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এল রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। জল্পনা ছিলই। ভোটের ফলে ভরাডুবির পরেই সেই জল্পনায় শিলমোহর দিল রাজ্য কংগ্রেস। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল আর কোনও সম্পর্ক থাকবেনা আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বাধীন আইএসএফের সাথে। রাজ্যের মহাজোটও একই সাথে ভেঙে যাওয়ার পথে।

cpim and congress | newsfront.co

নির্বাচনের আগে বা মাঝেও আব্বাস সিদ্দিকী ও অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মতপার্থক্যের ছবি বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। সংযুক্ত মোর্চায় আইএসএফ-কে অংশীদার করায় শুরু থেকেই আপত্তি ছিল প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর। প্রসঙ্গ ২৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশেও এর ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। বরং বামেদের এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান।

public meeting | newsfront.co

যদিও মুসলমান অধ্যুষিত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসন মিলতে পারে, এই আশায় শেষ পর্যন্ত আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট মেনে নেয় প্রদেশ কংগ্রেস। আর ফলাফল ঘোষণার পর এবার কোনওরকম রাখঢাক না করেই অধীর সরাসরি জানিয়ে দিলেন যে, ভবিষ্যতে তাঁরা আর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না।

রাজ্যে নির্বাচনের খাতিরে ত্রিশঙ্কু জোট বজায় রাখা হলেও কংগ্রেস দলের অন্দরে এই নিয়ে অসন্তোষ ছিল। একইরকম দ্বন্দ ছিল বামফ্রন্টের অন্দরেও। এদিকে ভোটের ফলে কংগ্রেস সিপিএম দুই দলের ভরাডুবির পরেই এবার কংগ্রেস জোট ভাঙার সিদ্ধান্ত নিল।

আরও পড়ুনঃ অবসরপ্রাপ্ত ডিজি’র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরির আবেদন খারিজ আদালতের

প্রসঙ্গত চার রাজ্যে ভরাডুবির পর গুলামের প্রস্তাব, “এরপর থেকে কোন দলের সঙ্গে কোথায় জোট করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত প্রদেশ নেতৃত্বের উপর ছাড়া ঠিক হবে না। কার্যকরী সমিতির থেকে কোনো সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কংগ্রেস প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক নয়। জাতীয় দল। তাই জাতীয় স্তরে দলের নীতি ও ভাবমূর্তির পক্ষে কোনটি ঠিক, তা নির্ণয় করে জোটসঙ্গী নির্ধারণ করা উচিত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলা ও অসমে ভরাডুবির পর সাম্প্রদায়িক দলগুলির থেকে দূরত্ব রাখতে চাইছে কংগ্রেস। তাই গুলাম নবির এই প্রস্তাব ভবিষ্যতে কার্যকর হলে রাজনৈতিক মহলের মতে জোটের ক্ষেত্রে আর প্রদেশ নেতৃত্বের কোনও ভূমিকা থাকছে না।রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম কংগ্রেসহীন বাংলার বিধানসভা। আর এর জন্য আইএসএফের সঙ্গে জোটকেই এদিনের বৈঠকে কাঠগড়ায় তোলা হয়।

প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরির উপস্থিতিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট দেন বাংলায় কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদ, তাতেই নাকি উঠে এসেছে এই তত্ত্ব। কংগ্রেসের এক সূত্রের বক্তব্য, বাংলা ও অসমে ভরাডুবির জন্য এদিন আইএসএফ এবং এআইইউডিএফ-এর মতো দুই সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে জোট করাকে দায়ী করা হয়।

আরও পড়ুনঃ হাতের মুঠোয় করোনা সংক্রান্ত তথ্য, নয়া অ্যাপ রাজ্য সরকারের

বৈঠকে বাংলার পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদের দাবি, বাংলায় আইএসএফের সঙ্গে জোটে তাঁর সায় ছিল না। কিন্তু বামেদের চাপে এই জোট গিলতে হয়েছিল প্রদেশ নেতৃত্বকে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভবিষ্যতে রাজ্যস্তরে কোনও জোট করার আগে ভালভাবে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। কয়েকটি আসন জেতার থেকেও দরকার জাতীয় স্তরে দলের ভাবমূর্তি ঠিক করার মতো বৃহত্তর বিষয়ে জোর দেওয়া।

এবারে প্রথম রাজ্যে একটিও আসন না পেয়ে খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস সিপিএম দুই দলই। তারপরেই দুই দলের অসন্তোষ চরমে পৌঁছয়। আজ কংগ্রেসের কর্মী সমিতির বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আজ এই ব্যাপারে জানান ভবিষ্যতে আর আইএসএফের সাথে কোনরকম সম্পর্ক রাখতে চান না তাঁরা।

দলীয় অনুশাসন মেনে অবশ্য এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি জিতিন প্রসাদ বা অধীররঞ্জন চৌধুরি কেউই। জিতিন বলেন, “আমি আমার পর্যবেক্ষণ দলকে জানিয়েছি। তা প্রকাশ্যে বলতে পারব না। এরপর যা ঠিক করার দল করবে। দলনেত্রী তো জানিয়েই দিয়েছেন তিনি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তৈরি করে হারের কারণ খুঁজবেন। আমার কাছে তাঁরা কিছু জানতে চাইলে জানাব।”

আরও পড়ুনঃ ত্রিপুরায় আক্রান্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার

সম্পর্কের ইতি, অবশেষে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এল রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই আজ একথা জানান তিনি। কংগ্রেস বেরিয়ে আসার পর বাকি দুই দল সিপিএম ও আইএসএফ জোট নিয়ে কি পদক্ষেপ নিতে চলেছে সেদিকে নজর থাকবে সবার। তবে কংগ্রেস বেরিয়ে আসার পর এই জোট যে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ল সেকথায় মানছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here