উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
প্রথমে নিজের ফেসবুক পেজে লিখলেন, প্যাক আপ। তারপর একাডেমি চত্বরে ফ্লেক্স ব্যানার টাঙিয়ে লিখলেন, দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্য করতে তিনি আছেন। তিনি তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। তার সমালোচকরা বললেন, প্রচারে থাকার জন্য অভিজ্ঞ এই নেতার অভিনব চেষ্টা। কিন্তু তারপরই ভুল ভাঙালেন ফেসবুক লাইভে এসে। বিধানসভা ভোটের মুখে ফের চর্চায় মদন মিত্র।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘টাইম ফর প্যাক-আপের’ পর এবার প্রাক্তন মন্ত্রীর নামে পোস্টার পড়ল কলকাতায়। দুঃস্থ শিল্পীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে পোস্টারে ছয়লাপ বাংলার একাডেমির লাগোয়া এলাকা। একুশে নির্বাচনেই কি নয়া ইনিংস শুরু করতে চলেছেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী? জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্য রাজনীতির অন্যতম রঙিন চরিত্র বলে মনে করা হয় তাকে। তবে এখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেক দূরে মদন মিত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একটি পেজ খুলেছেন তিনি। নাম, সিটিজেন মদন মিত্র। পেজটি লাইক করেন বা ফলো করেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়।
আরও পড়ুনঃ ভাইপো বলছি না, খোকাবাবু বলছি! নাম না করে অভিষেককে বিঁধলেন দিলীপ ঘোষ
শনিবার রাতে সেই পেজে একটি পোস্ট দেন মদন। লেখেন, ‘প্যাক আপের সময়’! প্রাক্তন মন্ত্রীর এই পোস্টকে ঘিরে এখন জোর আলোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকী, পোস্টটির নিচে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক-জনিত নানা রকমের মন্তব্য করেছেন অনেকে। কিন্তু ঘটনা হল, বিষয়টি আর শুধু ভার্চুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ নেই, চলে এসেছে বাস্তবের দুনিয়ায়, বলা ভালো রাস্তায়।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম অভিজাত এলাকা বাংলার একাডেমির বাইরে রাস্তায় দেখা গেল মদন মিত্রের নামে একাধিক পোস্টার। পোস্টারে লেখা, ‘দুঃস্থ শিল্পীদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’ আপাত দৃষ্টিতে এই পোস্টারে কোনও রাজনৈতিক রং নেই। দেখলেই বোঝা যাবে, পোস্টারগুলি লাগানো হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটি সংগঠনের তরফে।
আরও পড়ুনঃ ডিপি বদলে রাজ্যজুড়ে সংহতি জ্ঞাপন শুভেন্দু অনুগামীদের
‘দাদার অনুগামী’র পর এবার কি তাহলে ‘মদন অনুগামী’! জল্পনার ডানা কিন্তু মেলেছে বহুদূর। সামনেই তো আবার বিধানসভা নির্বাচন। ‘দুই-এ দুই-এ চার’ করে ফেসবুক লাইভে এসে মদন বলেন,‘গতকাল রাত থেকে একের পর এক ফোন পাচ্ছি। সকলেই জানতে চাইছে হঠাৎ ফেসবুকে প্যাক-আপ কথাটি কেন লিখেছি। তবে পরিষ্কার করে বলি শুনুন…।’ নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে এভাবেই ফেসবুক লাইভে এসে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন মদন মিত্র সঙ্গে জানিয়ে দিলেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।
দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকেও তার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। তাই তো আজও তিনি রাস্তায় নামলেই হাজারো স্লোগান ওঠে, ‘যব তক সুরজ চাঁদ রহেগা, মদন মিত্রকা নাম রহেগা।’ তার লাইভেই তা স্পষ্ট।
আরও পড়ুনঃ কৃষক বিক্ষোভে ব্যতিব্যস্ত সরকার, গভীর রাতে নাড্ডার বাড়িতে শাহ-সিং
নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে গর্বিত মদন মিত্র তাই বর্তমানে তৃণমূলের নামী সাংসদ, নেতা-মন্ত্রীদের খানিকটা খোঁচা দিয়েই বলে দিলেন, “যারা জনপ্রিয় বলে পদগুলো পেয়েছেন, তাদের ছ’বছর পর দেখব। রাজনীতির ময়দান থেকে যদি সরে যান, তাহলে তারপরও কতখানি জনপ্রিয় থাকেন।”
আকারে ইঙ্গিতে যেন বলে দিতে চাইলেন, আগামী বছর নির্বাচনের আগে দলের উচিত তাকেও আপন করে নিয়ে বিশেষ পদ দেওয়ার। কারণ দলের জন্য যেমন তিনি পরিচিতি পেয়েছেন, তেমনই তিনিও এই দলকে অনেক কিছু দিয়েছেন। অনেক জয় এনে দিয়েছেন। দলের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। ভবিষ্যতেও করবেন না।
এই মধ্যেই আবার টেনে আনেন দলবদলের জল্পনার প্রসঙ্গ। নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে খোঁচা দিয়ে কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, “আমিও চপারে চড়িনি। তাই বলে কি জনপ্রিয় হইনি?” সেই কথার রেশ টেনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দল তার দিক থেকে সাময়িকভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেও তিনি আজীবন এই দলের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবেই কাজ করে যাবেন। ‘লোভে’ পা দেবেন না। মদন মিত্রর কথায়, “অনেকে ভাবেন আমার হয়তো এখন দুঃখ হয়, রাগ হয়। কিন্তু জানবেন, মদন মিত্র সেই আগের মতোই রয়েছে। যে প্রয়োজনে প্রাণ দেবে, কিন্তু বেইমানি করবে না।”
আর প্যাক-আপ? লাইভে নেতা বলেন, প্যাক আপ মানে শুধুই কোনও কিছু শেষ করে ফেলা? এভাবে আসলে প্যাক আপ মানে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আসরে নামা। বুঝিয়ে দেওয়া তৃণমূলের ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা কতখানি। আর ২০২১ নির্বাচনে সেই দলকেই জেতানো। অর্থাৎ দল তাকে কোনও পদ না দিলেও আগামী নির্বাচনে নিজের দলকে জেতাতে সবরকম প্রয়াস করবেন, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন মদন মিত্র।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584