মুনিরুল তারেক, বাংলাদেশঃ
বাংলাদেশ সেনা বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় তুমুল বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে। ‘তিনি গাড়ি তল্লাশিতে বাধা দিয়েছেন’- পুলিশের এমন দাবি সন্দেহজনক এবং অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২১ পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা।
রাশেদ খান দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এস.এস.এফ) সাবেক কর্মকর্তা এবং যশোরের ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার মৃত: এরশাদ খানের ছেলে। তারা বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপ-সচিব।
চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশ্রস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও পুলিশের প্রতিনিধিসহ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ গাড়ি তল্লাশিতে বাধা, পুলিশের গুলিতে ভূতপূর্ব সেনা কর্মকর্তা নিহত
গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশ দাবি করেছিল- সাবেক মেজর রাশেদ খান তার ব্যক্তিগত গাড়িতে সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। তর্কে জড়িয়ে এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালায়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকেরা। পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যান।
আরও পড়ুনঃ করোনার ভ্রূকুটি, রাষ্ট্রীয় শোকের মাঝেই সামাজিক দূরত্বে বাংলাদেশে উদযাপিত ইদ
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের এবং দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি বাজেয়াপ্ত করেছে। গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশ সুপারের।
তবে পুলিশের এসব দাবি মৃত: সিনহা’র পরিবার, সাবেক সহকর্মী ও পরিচিতরা মানছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে- কেন গুলি করা হলো তাকে?
অনেকেই বলছেন, যেহেতু তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীতে ছিলেন, সুতরাং তার বিরুদ্ধে সরকারের কোনো অভিযোগ নেই। কিংবা কোনো অপরাধের সঙ্গে থাকলে তিনি এত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকতেও পারতেন না। পুলিশের বেপরোয়াপনার কারণেই মেধাবী এই সাবেক সেনা কর্তার জীবন প্রদ্বীপ নিভে গেল। আর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনকে সাধুবাদ জানিয়ে পুলিশের খামখেয়ালির দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার দাবিও অনলাইনে জানাচ্ছে জনতা।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, আগে তদন্ত হবে, তারপর প্রতিক্রিয়া। মৃত রাশেদ খানের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সেনা বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি কক্সবাজারের একটি হোটেলে থাকতেন। ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের জন্য তথ্য চিত্র নির্মাণের কাজ বেছে নিয়েছিলেন সিনহা রাশেদ।
তারা আরো বলেছেন, ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন সিনহা রাশেদ খান। প্রায় এক মাস তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন। তাঁর বন্ধুরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584