শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনা যুদ্ধে প্রায় প্রত্যেক দিনই স্ট্র্যাটেজি বদল করতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বিপুল হারে মৃত্যু সংখ্যা বাড়লেও সংক্রামিত রোগীর তুলনায় মৃত্যুর হার মাত্র ২ শতাংশ, এমনকি ডিসচার্জ রেটও ৭০.০৩ শতাংশ। তবে এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক, মোটামুটি অসুস্থ এবং অল্প অসুস্থ অথচ উপসর্গহীন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪১৩৩ জন রোগীকে বেছে নিয়ে চালু করা হচ্ছে ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। সারা দেশের মধ্যে রাজ্যে এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে দাবি করেন তিনি।
কিন্তু কী কারণে এই ধরনের নতুন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে? মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা জানান, বিভিন্ন রকম শারীরিক অবস্থায় থাকলেও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেই এদিন পর্যন্ত ৪১৩৩ রোগীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
কারণ এই রোগীদের ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখা অনেক বেশি জরুরি। তাই স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট এ এই বিশেষ কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হচ্ছে যেখানে প্রত্যেক রোগের অক্সিজেন স্যাচুরেশন, ব্লাড প্রেসার, পালস রেট সহ একাধিক পরিস্থিতি মাত্র এক ক্লিকেই জানতে পারবেন রোগীর পরিজনসহ রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকরাও। ৯৬ জন চিকিৎসক মিলে এই গোটা বিষয়টি পরিচালনা এবং নজরদারি দায়িত্বে থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ বেসরকারি বাস-মিনিবাসের কর মকুবের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, কথামতো বৃহস্পতিবার ২৫ হাজার টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা পার করেছে রাজ্য। এদিন টেস্ট হয়েছে ২৫৬০০ টি। এখনও পর্যন্ত করোনায় রাজ্যে মৃত্যুর হার মাত্র ২ শতাংশ। তাঁদের মধ্যেও অন্তত ৮৭.৬ শতাংশের কো-মরবিডে মৃত্যু হচ্ছে। বাড়িতে হোম আইসোলেশন এ থাকাকালীন অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ৯০-এর কম হয়, তাহলেই দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা দাবি করেন, বুধবার ২৫২২ জন সহ এখনও পর্যন্ত ৪২৫৮৪ জনকে টেলিমেডিসিনের সুবিধা দিয়েছে সরকার। টেলি মেডিসিনে একই সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন ও সাইকোলজি বিভাগের পড়ুয়ারা কাজ করছেন। টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করা হলে প্রথমে তাঁরাই রোগীর বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন।
আরও পড়ুনঃ এখনই বাতিল নয় জেক্সপো, জানাল কারিগরি শিক্ষা সাংসদ
এরপর পরিস্থিতি বুঝে ডাক্তারদের জানাচ্ছেন। এই পদ্ধতি ১ আগস্ট থেকে চালু করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৩৮৭৫ জনকে টেলি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করা হয়েছে। কারণ করোনা আক্রান্তের সঙ্গে তার পরিবারের ভীতি কাটানোর জন্য মানসিক কাউন্সেলিংটা ভীষণ জরুরি। টেলি মেডিসিন টোল ফ্রি নম্বর হল ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২।
ইদানীং বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এবার থেকে স্বাস্থ্য দপ্তরে ফোন করলে বিনামূল্যে মিলবে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও। সেই উদ্দেশ্য চালু হয়েছে নতুন টোল ফ্রি নম্বরও। নম্বরটি হল ৪০৯০২৯২৯। এতদিন পর্যন্ত সরকারি তরফে ৫৪৫৭১ টি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে এবং ৭২১৫৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য রাজ্যে শয্যা সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে করোনা রোগীদের জন্য শয্যার সংখ্যা ১১ হাজার ৫৬০টি। আগেই চালু হয়েছে প্লাজমা ব্যাংক। এবার কর্ড ব্লাড ব্যাংককেও কাজে লাগানোর কথা ভাবছে প্রশাসন।
এদিকে করোনা আবহে সরাসরি প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, হাউজ স্টাফ নিয়োগ করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০০ জন হাউজস্টাফ নিয়োগ হবে। এছাড়া আপাতত ৫৩ জন চিকিৎসক ও ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের কথাও ভাবা হয়েছে। তবে করোনা মহামারীর মত জরুরি পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে কোনও বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ না করে সরাসরি ওয়াক-ইন-ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া করোনা পরীক্ষার নামে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় অসাধু প্রতারণা চক্রে সাধারণ মানুষকে পা না দিয়ে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কোনওভাবেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনও এজেন্টের কথায় বিশ্বাস করবেন না।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584