মোহনা বিশ্বাস, কলকাতাঃ
করোনায় একেবারে নাজেহাল অবস্থা গোটা বিশ্বের। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও থাবা বসিয়েছে কোভিড-১৯। আর তাতেই জব্দ হয়েছি আমি, আপনি প্রত্যেকে। বাড়ি থেকে বেরনোর জো নেই। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গৃহবন্দি প্রায় সকলেই। পাঁচ দফা লকডাউন শেষে ষষ্ঠ দফায় শুরু হয়েছে ‘আনলক ২’। পঞ্চম দফাতেই শুরু হয়েছিল ‘আনলক-১’। এই আনলক-১-এই ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিতে শুরু করে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকার।
কিন্তু সমস্ত কিছু আবার আগের মতো চালু করতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ মাধ্যম। আর সেখানেই বিপদে পড়েছিলেন একাধিক মানুষ। করোনা সংক্রমণের সময়ে মানুষের সেই বিপদ কাটাতে বিকল্প পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে ‘সাইকেল’কে তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিল সাইকেলপ্রেমী সংগঠনগুলি। সেই মতো সবচেয়ে সুরক্ষিত যান হিসাবে ‘সাইকেল’কেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দূষণ কমাতেও সাহায্য করে দু’চাকার সাইকেল। শহরে দূষণ কমাতে এবং সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে করোনা সংক্রমণ শুরুর অনেক আগে থেকেই লড়াই করছেন কলকাতার সাইকেল প্রেমী মানুষরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত সাইকেল প্রেমীরা অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে সাইকেলকেই সঙ্গী করেন। লকডাউনে সাইকেলের থেকে নিরাপদ যান আর কিছু হয় না। এমনটাই মনে করছেন রাজ্যবাসীও।
সম্প্রতি দেখা গেছে সাইকেল ব্যবহার করায় বাতাসে দূষণের মাত্রা কমে গিয়ে স্বচ্ছ নীলাকাশ উঁকি দিচ্ছে। তাই এ রাজ্যে সাইকেলের চাহিদাও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যেই কলকাতার ফলতা এসইজেডে একটি সাইকেল কারখানা চালু হল।
পূর্ব ভারতের অন্যতম সাইকেল প্রস্তুতকারক সংস্থা এই সাইকেল কারখানটি চালু করলো। ভারতের যে কোনও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির মধ্যে এই প্রথম চালু হল কোনও আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ও ইন্টিগ্রেটেড সুবিধাযুক্ত বাইসাইকেল কারখানা। এর ফলে আরও উন্নতমানের ই-বাইক এবং বাইসাইকেল তৈরী করে পরবর্তী সময়ে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বেশি পরিমাণে রফতানি করতে সক্ষম হবে এই সংস্থা। ভারতের অভিজাত এই বাইসাইকেল কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং পোল্যান্ডে সফলভাবে তাঁদের ব্র্যান্ডের সাইকেল এবং ই-বাইক রফতানি করছে।
আরও পড়ুনঃ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা
সম্প্রতি সংস্থাটি লন্ডনে অফিস স্থাপন করেছে ও ব্রিটেনে পূর্ণাঙ্গ কাজ শুরু করেছে। এই সংস্থাই প্রথম স্বল্প মূল্যে সাইকেলের বিশ্বব্যাপী প্রচলিত সুপার-বাইক বৈশিষ্টগুলি দেশে এনেছে। ফলতার নতুন কারখানায় তৈরী হবে এই সংস্থার সাইকেল এবং ই-বাইক, যার উন্নত লিথিয়াম, আয়ন ব্যাটারি এবং উচ্চ প্রযুক্তি দূষণ মুক্ত পরিষেবা দেবে। বৈদ্যুতিক সাইকেল মানেই পরিবেশ বান্ধব এবং জিরো এমিশন প্রযুক্তিযুক্ত বাহন।
আরও পড়ুনঃ করোনাকে জয় করে নিজের প্লাজমা দান করলেন প্রথম কলকাতা পুলিশ কর্মী
বিশ্বজুড়ে মানুষের সাইক্লিংয়ের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই উন্নত ই-বাইক। বিদেশের অধিকাংশ জায়গায় যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন, হল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং রোমানিয়ার গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখেই তৈরী করা হয়েছে এই অ্যাডভান্স লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিযুক্ত ই-বাইক।
পয়লা জুলাই এই কারখানার উদ্বোধন উপলক্ষে সংস্থার পরিচালক সুবীর ঘোষ জানালেন, “এই উন্নত অটোমেটেড অ্যাসেমব্লিং লাইন থাকায় আমরা বর্তমান পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায় সাইকেলের যোগান দিতে পারবো। বর্তমানে এই কোভিড পরিস্থিতিতে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে সাইকেলের চাহিদা খুব বেশি। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে এই লকডাউন চলাকালীন ব্রিটেনে ১৩ লাখ সাইকেল এবং ই-বাইক বিক্রি হয়েছে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্রিটেনের সঙ্গে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলি জনগণকে ট্রেন বা বাসের মতো গণপরিবহনে যাতায়াত করতে নিষেধ করেছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584