মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
“প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না, কারণ দ্বিতীয় কাজে তুমি যখন ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে।” “ব্যর্থতাই সফল হওয়ার রাস্তা দেখাবে।”- এই বাণীগুলির মাধ্যমে যিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনিই হলেন মিসাইল ম্যান। ১৯৩১ সালে ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। পুরো নাম আবুল পকির জৈনুলাবদিন আব্দুল কালাম। তাঁকেই সমগ্র দেশ সহ বিশ্বে মিসাইল ম্যান বলে চেনে।
একদিকে তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, পাশাপাশি ছিলেন একজন লেখক এবং সমাজবিদ। একাধিক কাজের মধ্যে তাঁর অবদান রয়ে গিয়েছে, যা আজও অনস্বীকার্য। নিজের কাজের মধ্যে দিয়েই সাফল্য পেয়েছেন এপিজে আব্দুল কালাম। জীবদ্দশায় সম্মান হিসেবে পেয়েছেন একাধিক পুরষ্কারও। এই সাফল্যের কাহিনী যতটা সহজ, সাধারণ ঘরের ছেলের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার জার্নিটা ততটা সহজ ছিল না।
স্কুল জীবন থেকেই বায়ুসেনার বিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুলে লেখাপড়া করতেন তিনি। সাধারণ মানের ছাত্র হলেও লেখাপড়ার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। আর্থিক পরিস্থিতি ভাল না হওয়ায় লেখাপড়ার পাশাপাশি কাগজ বিক্রি করেই সংসার চালাতেন বিশ্বের মিশাইল ম্যান। স্কুল জীবন শেষ করে ১৯৫৪ সালে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হন তিনি। এরপর মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি নিয়ে লেখাপড়া করেন এপিজে আব্দুল কালাম।
ডিআরডিও-র হভারক্রাফ্ট প্রকল্প পরিচালনার মধ্যে দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। সালটা ১৯৬২। আব্দুল কালাম ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোতে যোগ দেন। এরপরই ধীরে ধীরে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠতে শুরু করেন তিনি। সেইসময়ে তিনি মহাকাশে রোহিনী তথা SLV3 উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপন করেন। জানা যায়, ইসরোয় তাঁর কাজ দেখার পর নাসাতেও যোগ দেওয়ার সুযোগ এসেছিল।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানী রাজা রামান্নার সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের প্রথম পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করেন এপিজে আব্দুল কালাম। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বেই পোখরানে ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য পরমাণু বোমা পরীক্ষায় সফল হয়। এরপরই দেশের সফল পরমাণু বিজ্ঞানী হিসাবে গণ্য করা হয় এপিজে আব্দুল কালামকে। অবশেষে ২০০২ সালে এল সেই সন্ধিক্ষণ। দেশের কাজে নিজেকে সমর্পণ করলেন কালাম। ২০০২ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। বেশকিছুদিন অগ্নি এবং পৃথ্বীর মতো মিসাইল তৈরির তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। ঠিক এই কারণেই সমগ্র দেশ সহ বিশ্বে মিসাইল ম্যান নামে পরিচিতি পান ভারতের এই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।
আজ মঙ্গলবার তাঁর ষষ্ঠতম মৃত্যুবার্ষিকী। এমন দিনে স্মরণে আসে তাঁর বলা সেই অবিস্মরণীয় বাণীগুলি। মানুষের মনোবল দৃঢ় করার যাদুকাঠি রয়েছে তাঁর বাণীতে। এপিজে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, “প্রত্যেকের সমান প্রতিভা নেই। কিন্তু প্রত্যেকের প্রতিভার আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে।” তিনি আরও বলেছিলেন, “মানুষ তাঁর ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে না পারলেও অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। আর এই অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যতে পরিণত হয়।” এরকমই কিছু বাণীর মধ্যে দিয়ে এপিজে আব্দুল কালাম সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন আর বলেছেন, স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যেতে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584