ময়নাতদন্ত না করে সর্পদষ্ট হয়ে মৃত শিশুর দেহ নিয়ে ঝাড়ফুঁক

0
322

নিজস্ব সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ারঃ

“এক মায়ের কোলে থেকে আরেক মায়ের কোলে দেই, সারা রাত্রি থাকুক এই বলেই ওঝা জোরে জোরে বলতে লাগলো ‘মা তোর সন্তান তোর কাছে দিলাম তুই যা করার কর মা’ সাধারণত সিনেমায় রঙিন পর্দায় দেখা যায় এমন দৃশ্য বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটল আলিপুরদুয়ারে।

Death of child by snake bite | newsfront.co
শম্পার নিথর দেহ।নিজস্ব চিত্র

সাপে কাটা মৃত শিশুকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে এনে ঝাড়ফুক করল ওঝা। আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিন মাঝের ডাবরি গ্রামের এই ঘটনায় বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে গেছে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ দক্ষিন মাঝের ডাবরি গ্রামের গীতা রায়ের ১৮ মাসের একমাত্র মেয়েকে সাপে দংশন করে। বাড়ির উঠোনে খেলার সময় সর্পদংশন করে।

তারপর আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু হয় শিশুটির। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। হাসপাতালেই মারা যায় শিশুটি। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির ময়নাতদন্ত করতে চায়। কিন্তু পরিবারের লোকজন বাধা দেয়।

grand mother of shampa | newsfront.co
শম্পার দিদিমা।নিজস্ব চিত্র

ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতালের বন্ডে সই করে বাড়িতে এনে শিশুটির ঝাড়ফুঁক শুরু হয়।

বাড়ির মনসা ঠাকুরের মন্দিরের সামনে কলাপাতায় শুইয়ে চলে ঝাড়ফুঁক। ওঝা ডেকে তাকে দিয়ে ঝাড়ফুঁক চলে। পায়ে সাপে দংশন ক্ষত থেকে রক্ত চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করেন ওঝা। কিন্তু সব বিফল হয়। কারন হাসপাতালেই ১৮ মাস বয়সের শিশুকে মৃত বলে ঘোষনা করেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার রাতেই শিশুটিকে বাড়ির সামনে নদীর ধারে কবর দেওয়া হয়।

এই ঘটনা শনিবার জানাজানি হতেই আলিপুরদুয়ারের ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। জানা গিয়েছে শিশুটির নাম শম্পা রায়।

mother of shampa | newsfront.co
মৃত শম্পার মা।নিজস্ব চিত্র

মৃত শম্পার মা বলেন, “ আমি বাড়িতে ছিলাম না। বাড়িতে খেলার সময় মেয়েকে সাপে কামড় দেয়। ও চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। ক্ষত স্থানে চুন লাগানোর পর পা ফুলে যায়। কোন গাড়ি পাই নি। অন্যের বাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই মেয়েকে। চিকিৎসা শুরুর পর হাসপাতালে মেয়ের মৃত্যু হয়। আমরা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে দেই নি। বাড়িতে এনে ঝাড়ফুঁক করা হয়। বাড়িতেই মনসা ঠাকুরের মন্দির রয়েছে। সেখানে রেখে ঝাড়ফুঁক করেন ওঝা। কিন্তু সাপের কামড়ের ফুটো খুঁজে পাননি ওঝা। সেই কারনে বিষ বের করা যায় নি। মেয়েকে আর বাঁচানো যায় নি। রাতেই মেয়েকে কবর দেওয়া হয়”

আরও পড়ুনঃ অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য

Science worker | newsfront.co
বিজ্ঞান কর্মী।নিজস্ব চিত্র

এদিনের ঘটনার পর একটি সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।পরে ঘটনাস্থলে যান আলিপুরদুয়ার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থা। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থার সম্পাদক কৌশিক দে বলেন, “প্রথমত যে সাপটিকে ধরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পিটিয়ে মারা হয়েছে সেটি কোন বিষাক্ত নয়। কিন্তু শিশুটিকে গোখরো জাতীয় বিষাক্ত সাপ কামড়েছিল। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু এক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়েছিল। তার উপর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত না করে কুসংস্কারের বশে শিশুটিকে ঝাড়ফুঁক করা হয়েছে। আমরা ওই ওঝাকে খুঁজছি। ওনার সন্ধান পেলে পুলিশে অভিযোগ জানানো হবে। এলাকায় আমরা সচেতনতা তৈরি করব।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here