উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
২০১১ সালে যদি প্যারামিলিটারি নামিয়ে বিধানসভা ভোট করা যায়, দুহাজার একুশে কেন পারা যাবে না? বুধবার রাজ্য বিজেপি দফতরে ভিড় ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তিনি আরও বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতি শাসন চাই না। কিন্তু প্যারামিলিটারি দিয়ে ভোট করানোর পক্ষপাতী। রাজ্যের বিভিন্ন সাধারণ মানুষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, যে ভাবে রাজ্যে রোজ মানুষ খুন হচ্ছে, রোজ বোমা পিস্তল নিয়ে ধুন্ধুমার চলছে, তারা কী শান্তিতে ভোট দিতে পারবেন ? তাই তাঁরা চাইছেন এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে গাইড লাইন দিক। এবিষয়ে দেশের শীর্ষ আদালতে একটি মামলাও করা হয়েছে।“
আরও পড়ুনঃ উস্কানি সম্প্রচারের অভিযোগে ২০ হাজার ইউরো জরিমানা রিপাবলিক ভারত টিভির
পরে তিনি আরও বলেছেন,”গণতন্ত্রে সব দলই সভা করতে পারে। বিজেপি সভা করলেই অভিযোগ করা হচ্ছে বাইরের লোক এনে সভা করছে বিজেপি। কেন? আর বিজেপির সভা শেষ হলেই সেই জায়গায় তৃণমূলকে কেন সভা করতে হচ্ছে?” পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,”প্রত্যেক মাসেই প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বাংলায় আসবেন।“
একই সঙ্গে বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা মন্ডল খাঁর তৃণমূলে চলে যাওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়ার দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “উনি আমাদের দলের প্রাথমিক সদস্য কি না আমি জানি না। সেই সুজাতা দেবীর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে যেভাবে সৌগত রায় লাফাচ্ছেন, তাতে আমি অবাক?” রামনগর বিজেপি হামলা করছে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, “আমাদের হামলা করার শক্তিও নেই, ইচ্ছাও নেই।“
আরও পড়ুনঃ ঝগড়ুটে, মারধর করত সুজাতার বিরুদ্ধে আইনি নোটিসে অভিযোগ সৌমিত্রর
অমিত শাহ ভুল তথ্য দিচ্ছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কত চাকরি দিয়েছেন, কত উন্নয়ন করেছেন, কত রেশন দিচ্ছেন তার সঠিক তথ্য দেওয়া হোক। অমিত শাহ সহ আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা যার বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজ করছেন, তাদের ধরে এনে চমকানো হচ্ছে।“
অন্য দিকে সায়ন্তন বসু থেকে অগ্নিমিত্রা পাল সহ নেতানেত্রীদের শোকজ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “বিজেপিতে থাকতে গেলে দলের নিয়ম কানুন সবাইকেই মানতে হবে । এরকম বার্তা সবাইকে দিতে দলের মধ্যে অনিয়ম ভাবে কোনো মন্তব্য করা হলে, যা দল বিরোধী হবে, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে শো-কজ করা হতে পারে।“
আরও পড়ুনঃ পাত পেড়ে খেয়েই চলে গেলেন! শোনেননি কথা, শাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ বাউল শিল্পীর
অন্যদিকে দল বিরোধী মন্তব্য করায় বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর পর এবার বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকে শো-কজ় করল রাজ্য বিজেপি। চিঠিতে লেখা হয়েছে, দলের মত ছাড়া, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি না নিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে দলীয় স্বার্থ বিরোধী বিরূপ মন্তব্য করেছেন। দলের অনুমতি ছাড়া কেন তিনি এমন মন্তব্য করেছেন তা সাত দিনের মধ্যে তাঁকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক ও আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছিল রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকেও। সেই প্রেক্ষিতেই এই কড়া চিঠি ধরানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর ৷
আরও পড়ুনঃ সায়ন্তনের পরে অগ্নিমিত্রাকে শো-কজ নোটিস বঙ্গ বিজেপির
অগ্নিমিত্রাকে শো-কজ় ধরিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সায়ন্তন বসুকে যেদিন শো-কজ় করা হয়ে সেই একই দিনে ২২ ডিসেম্বর লেখা হয় অগ্নিমিত্রার চিঠিটি ৷ যদিও একদিন পরে বুধবার সকালে চিঠি পান তিনি ৷ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুমতি নিয়েই যে চিঠি লেখা হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়েছে শো-কজ়ে। দিলীপ ঘোষকে এই শো-কজের চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে আরও খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছেন, কোন বিধায়ককে দলে নেওয়া হবে আর কাকে নেওয়া হবে না, তা দল ঠিক করবে। দলে কারও যোগদান নিয়ে এবং অন্য দল থেকে আসা কোনও বিধায়ক বা সাংসদের বিরুদ্ধে আগ বাড়িয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না বলে বিজেপির সূত্রে খবর।
শো-কজ়ের বিষয়ে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পল বলেন, “আমি দলের একজন সৈনিক। দল আমাকে এই মন্তব্যের জন্য শো-কজ় করেছে। আজই আমি এই চিঠির উত্তর দেব ৷” এদিন বিজেপি দফতরে বেশ কিছু লোকজন বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন দিলীপ ঘোষের হাত থেকে। এদিন বিজেপিতে যোগদান করেন বিজ্ঞানী নারায়ণ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট হাইকোর্টের আইনজীবী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584