‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকের পদ্মমণি দিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে দূরভাষ আড্ডায় নবনীতা দত্তগুপ্ত।

নবনীতাঃ প্রথমেই জিজ্ঞেস করব অভিনয়ে আসাটা কীভাবে? মানে ছোট থেকেই কি ইচ্ছে ছিল নাকি অভিনয় নিজে এসে তোমায় ধরতে চেয়েছিল?
দিয়াঃ ক্যামেরার সামনে আমি প্রথম দাঁড়াই ক্লাস টু-তে পড়ার সময়। জি বাংলার হাউমাউখাউ-তে কনটেসট্যান্ট ছিলাম আমি। তখন বুঝতাম না অভিনয়ে আসা বা না আসা কাকে বলে। নাচ করতাম ছোট থেকেই। এরপর ক্লাস সিক্সে যখন পড়ি তখন একটা বিজ্ঞাপনে দেখি নতুন মুখের সন্ধান চলছে মেগা সিরিয়ালের জন্য। অডিশন দিই। পেয়ে যাই সুযোগ। সেদিনও ভাবিনি এটাই আমার প্রফেশন হবে। এরপর বাড়ির লোকের সাপোর্ট আর অন্যদের প্রশংসা পাই। ক্লাস ইলেভেনে যখন পড়ি তখন ভাবি আমার এই প্যাশনটা এবার প্রফেশন হলে ভালই হবে৷ আমার এই পথেই এগোনো উচিত। কোথাও একটা ভালোবাসা দানা বেঁধেছিল অভিনয়টার প্রতি।
নবনীতাঃ অভিনয়ে বেশ অনেকদিনই হল। কোন চরিত্রটা বেশি জনপ্রিয়তা দিল বলে তোমার নিজের মনে হয়?
দিয়াঃ হ্যাঁ প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। আর কোন ধারাবাহিক বেশি জনপ্রিয়তা দিল যদি জানতে চাও তাহলে বলব, মেগা সিরিয়ালে আমার প্রথম ব্রেক ‘সুবর্ণলতা’৷ তখন থেকেই মানুষ আমায় চিনেছেন৷ ভালোবেসেছেন। সবথেকে বড় কথা হল ধারাবাহিকের চরিত্ররা সবসময়ই মানুষের কাছে পরিচিতি পায় সেই চরিত্রের নামে। কিন্তু ‘সুবর্ণলতা’ করার সময় মানুষ আমায় দিয়া নামেই চিনত, ডাকত। এ এক বড় পাওয়া। এরপর ‘বধূবরণ’-ও আমাকে ভাল পরিচিতি দিল। অলি চরিত্রটা কোথাও গিয়ে খুব ইম্পর্ট্যান্ট ছিল ধারাবাহিকে। আর এই মুহূর্তে আমি রানিমায়ের বড় খুকি, পদ্মমণি। ‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকের পদ্মমণিকে আজ সবাই চেনে। একটা নেগেটিভ রোলে অভিনয় করেও যে এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় তা পদ্মমণি চরিত্রটা না করলে জানতে পারতাম না।
আরও পড়ুনঃ মুক্তির অপেক্ষায় ভালোবাসার অ্যালবাম ‘জিয়া জ্বলে’

নবনীতাঃ সুবর্ণলতাতে বেশ ছোট দেখেছি তোমায়। ওটাই কি প্রথম টেলিভিশনের কাজ ছিল?
দিয়াঃ না না, ই টিভির ছোটদের অনুষ্ঠান ‘গপ্পো সপ্পো’তে আমার প্রথম অভিনয়। তারপর ‘সুবর্ণলতা’।
নবনীতাঃ পদ্মমণি বা বড় খুকির চরিত্রটা নেগেটিভ৷ নেগেটিভ চরিত্র মানে যেটা তুমি নও সেটাই তোমাকে হয়ে উঠতে হচ্ছে। ব্যাপারটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
দিয়াঃ খুবই চ্যালেঞ্জিং৷ আসলে নেগেটিভ চরিত্রের কোনও আদল আমাদের কাছে থাকে না। আমি যেটা নই সেটা হয়ে উঠতে হচ্ছে প্রতিদিন। কী ভাবে কোন কথায় রি-অ্যাক্ট করব, নিজেকে স্থাপন করব, সেটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। পজিটিভ ক্যারেক্টারে কীভাবে রি- অ্যাক্ট করব সেটা আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার। কারণ আমরা আসলে সেরকমই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেগেটিভ রোলে বোঝা দায় পরের প্লটটা কী ভাবে আমাদের সামনে হাজির হবে।
এর জন্য আমি ‘রানী রাসমণি’ ধারাবাহিকের পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটারকে ধন্যবাদ জানাই। ওঁদের সহযোগিতা না থাকলে পদ্মমণি হয়ে উঠতে পারতাম না।
আরও পড়ুনঃ বিজ্ঞাপনে লাল্টু বিশ্বাস, শীঘ্রই আসছে ‘হামি ২’-র পোস্টার
নবনীতাঃ পরিচিতরা কেউ বড় খুকি বলে ডাকে?
দিয়াঃ শুধু পরিচিতরা নয়। যখন কোনও শো বা ওপেনিং-এ যাই তখনও সবাই আমাকে বড় খুকি বা পদ্মমণি বলেই ডাকে। আসলে বাঙালিরা তো মানুষকে খুব আপন করে নিতে পারে, যখন কোনও সিরিয়াল তারা খুব ভালোবেসে দেখেন তখন তাদের কাছে চরিত্ররা বড় আপন হয়ে যায়। আমিও আপন হয়ে গেছি, আজকাল সেটা ফিল করি। একটা নেগেটিভ রোলকে মানুষ এমনভাবে ভালোবাসতে পারে জানা ছিল না।
আরও পড়ুনঃ কেবিসি-র দ্বাদশতম সিজনে প্রথম কোটিপতি নাজিয়া
নবনীতাঃ অনস্ক্রিনে মায়ের সঙ্গে তো বেশ ঝগড়া। মতের অমিল। বাস্তবে দিতির সঙ্গে বন্ধুত্ব কেমন?
দিয়াঃ হ্যাঁ, আমিই রানিমার একমাত্র মেয়ে বা সিরিয়ালে আমিই একমাত্র চরিত্র যে কিনা রানি মায়ের সবকিছুকে ভুল বলে মনে করে। মায়ের কোনও কাজই তার কাছে ভাল মনে হয় না। কোনওকিছুতেই তাকে সাপোর্ট করে না৷ কিন্তু অফস্ক্রিনে আমাদের খুব ভাব। দিতিপ্রিয়া আমাদের সকলের থেকে অনেকটাই ছোট। ওকে আমরা নিজেদের ছোট বোনের মতোই ট্রিট করি। আর শুধু দিতিপ্রিয়া নয়, অনস্ক্রিনে যাদের সঙ্গে আমার বনিবনা হয় না তাদের সঙ্গেও আমার খুব ভাব৷…
নবনীতাঃ বেশ। এই মুহূর্তে হায়ার স্টাডিজ নিয়ে কিছু ভাবছ?
দিয়াঃ আমি যেহেতু অনেক ছোট বয়স থেকে কাজ শুরু করেছি, ফলে লেখাপড়া এবং প্রফেশন দুটো আমাকে খুব যত্ন নিয়ে ব্যালান্স করতে হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, গ্র্যানজুয়েশন সবই আমার এই অভিনয় করতে করতেই। ফলে কাজের প্রেশার আর পড়াশুনো দুটোই চলত সমতালে৷ গ্র্যারজুয়েশন করার পর মাস্টার্স করার ইচ্ছা ছিল। আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়তে চাই। বিষয়টা আমার বেশ পছন্দের। কিন্তু আমার কাজের প্রেশার এতটাই যে দুদিক ব্যালান্স করা এখন বেশ চাপের। মাসে ২৮ দিনই আমার কাজ থাকে, ৮/১০ ঘণ্টা থাকি সেটে। এই লকডাউনে খোঁজ নিয়েছিলাম যদি কোথাও ডিসট্যান্সেও পড়তে পারি। কিন্তু পরে ভাবলাম কাজের এত টাইট শিড্যুল সামলে লেখাপড়া করাটা সহজ হবে না। তাতে লেখাপড়াটা অবহেলিত হবে। পরে কখনও সুযোগ পেলে আবার লেখাপড়া করব।
নবনীতাঃ ওয়েব সিরিজ বা বড় পর্দায় অফার পেয়েছো কোনও?
দিয়াঃ হ্যাঁ আছে তো। বড় পর্দা এবং ওয়েব সিরিজ দুটো প্ল্যাটফর্ম থেকেই অফার আছে। সিরিয়ালে যতটা সময় দিতে হয় ওয়েব সিরিজ কিংবা বড়পর্দার জন্যও কিন্তু বেশ ভালই সময় দিতে হয়। ফলে দুটো একসঙ্গে চালানো একটু কঠিন। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে আগামী বছর আমায় বড় পর্দা কিংবা ওয়েব সিরিজে দেখবেন দর্শক।
আরও পড়ুনঃ ওয়েব ছবি পরিচালনায় শ্রীলেখা
নবনীতাঃ এই দিওয়ালিতে কী প্ল্যান? ভাইফোঁটা দাও কারোকে?
দিয়াঃ আমাদের বাড়িতে পুজো হয়। মামাবাড়িতেও পুজো হয়। প্রতিবারই বাড়ির পুজোতে মাকে হাতে হাতে সাহায্য করি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করি, আড্ডা মারি, বাজি ফাটাই, ফানুস ওড়াই। সারা বাড়ি প্রদীপ আর মোম দিয়ে সাজাই। এবছর বাজি ফাটাতে পারবনা। প্রদীপ জ্বলাব। খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি আমরা। সকলকে কিছু না কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে। হয়ত পরেও করতে হবে। পরের বছর এজজয় করব না হয়? তবে, বন্ধুদের সঙ্গে এবারও আড্ডা মারব, এটা ফিক্সড। আর ভাইফোঁটা কারোকে সেভাবে দিই না। কাকার ছেলে আছে। তিন বছর বয়স। পাঁচ বছর হওয়ার আগে তো দিতে পারব না ফোঁটা। ওকে তাই মিষ্টি, চকলেট, চিপ্স দিয়ে প্লেট সাজিয়ে দেব। এটুকুই।
নবনীতাঃ নিজেকে ফিট অ্যান্ড ফাইন রাখতে কী করো?
দিয়াঃ আমি মারাত্মক ফুডি। দিনে দু’প্লেট বিরিয়ানি খাওয়ার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু যেহেতু অভিনয় করি নিজেকে ফিট অ্যান্ড স্লিম রাখাটা জরুরি। তাই বাইরের খাবার সপ্তাহে একদিনের বেশি খাই না। জিমে যাওয়ার সময় পাই বা৷ বাড়িতেই জুম্বা করি। জুম্বা হল ডান্স ফর্ম এক্সারসাইজ। নাচও করি। তাতেই ফিট অ্যান্ড ফাইন থাকে আমার শরীর। সময় পেলে জিমে যাই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584