শ্যামল রায়,পূর্বস্থলীঃ
পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ২ নম্বর ব্লকের নতুনগ্রাম কাঠের পুতুলের জন্য সমাদৃত হলেও আজও পুতুলের দেশ হয়ে ওঠেনি নতুন গ্রাম।’পুতুল নেবে গো পুতুল’ এই গানটি আজও নতুন গ্রামের সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে। এখানকার শিল্পীরা আর্থিক অনটনের শিকার।পূর্বস্থলীর নতুনগ্রাম কিন্তু পুতুলের দেশ নয় নিছকই পুতুল শিল্পীদের গাঁ।
নতুন গ্রামের মিস্ত্রি পাড়ার মানুষরা সারা দিন ধরে কাঠ খোদাই করে পুতুলের শরীরে গড়েন মুখ গড়েন,নানান ধরনের রঙের কাজ করে যান নিরলসভাবে।বাড়ির পুরুষেরা খুঁজে আনেন নরম গাছের ডাল।তা যদি শিমুল পিটুলি কিংবা শেয়ার হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
আরও পড়ুনঃ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যাঁতাকলে পিষে হারাতে বসেছে পুতুল নাচ
তবে পেঁচা তৈরির জন্য গামা কাঠই চাই।পাখিদের মধ্যে না হোক পুতুলের মধ্যে পেচার দাম ই সব থেকে বেশি।খাটনি বেশি যে কাঠের তৈরি পেচায় আনতে হয়,পাথরের চেহারা সে তো সোজা কথা নয় তাই সারাদিনব্যাপী বাড়ির মহিলারা এই পুতুল তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ অসাধারণ শিল্প তৃপ্তির জন্য অনেক কে পুরস্কৃত করেন শম্ভু নাথ সূত্রধর এমনি একজন।শম্ভুনাথ সূত্রধর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়ার পর হয়ে যান শম্ভুনাথ ভাস্কর।সেই নতুন গ্রামের ভাস্কররা আজও কাঠের পুতুল তৈরি করে শুধু রাজ্যেই নয় ভিন রাজ্য পাড়ি দিচ্ছে তাদের শিল্প কাজ।
পুতুল গড়ার ফলেও গ্রামের হাল বিশেষ একটা পরিবর্তন হয়নি পেটের ভাত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবে সমস্ত কাজ সামলে পুতুল শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাদের সংগ্রাম এখনো অব্যাহত।
শম্ভুনাথের কনিষ্ঠ পুত্র দিলীপ ভাস্কর জানিয়েছেন যে,”বাবাকে সম্মান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি কিন্তু আমরাও আজ সেই নেশায় আচ্ছন্ন কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই শিল্পের কদর এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে।
গ্রামের পরিবর্তন কিছু হয়নি আমরা বারবার গ্রামের উন্নয়নে এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে জানিয়েছি যাতে পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটে, এই শিল্পের কাজে যুক্ত শিল্পীদেরও অনেকটাই পরিবর্তন হত যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার ভাল হতো কিন্তু সে ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি আমরা।এক সময় কেন্দ্রীয় সরকার এই কাজে সাহায্য করত এখন কেন্দ্র-রাজ্য কেউ আমাদের পাশে নেই তাই এই শিল্পের সাথে যুক্ত সকলেই যেন একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
নরম কাঠ পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার হয়েছে তেমনি গাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের তৈরি পুতুল গুলো সে দামে বিক্রি করতে পারছিনা তাই আর্থিকভাবেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি।কিছুদিন আগে পুতুলের মেলা হলেও সেরকম একটা বিক্রি হয়নি। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই মেলার আয়োজন করে থাকে এ বছর চতুর্থ বর্ষে পা দিয়েছিল।”
প্রায় শতাধিক পরিবার তাদের তৈরি রংবেরঙের পুতুলের পসরা নিয়ে এই মেলায় বসেন।
পেচা কাঠের তৈরি দেব দেবীর প্রতিমা ফার্নিচার প্রভৃতি এই মেলায় বিক্রি হয়ে থাকে এবং প্রতিদিন মেলা উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সম্মানিত বাউল গান ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশিত নাচ গান অনুষ্ঠিত হলেও মেলায় এখনো প্রচার সেরকম হয়নি।
এই গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে,এই গ্রামে শিল্পীরা সরকারি পুরস্কার পেলেও এখনো পর্যন্ত তাদের আর্থিক ভাবে উন্নতি এবং শিল্পের পরিকাঠামোর উন্নয়নে সরকার থেকে সেরকম সাহায্য মেলেনি।সরকারি ভাবে সাহায্য পেলে তাদের হাতের কাজের তৈরি পুতুল শুধু এই রাজ্যে নয় ভিন রাজ্য বিক্রির সম্ভাবনা আছে বলে তারা মনে করেন তাই সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি আরও উন্নতি ধরনের প্রশিক্ষণ চাইছেন তারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584