কলকাতা থেকে নিজের গাড়িতে মেদিনীপুরে রোগীর বাড়িতে পৌঁছে দিলেন চিকিৎসক

0
26

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন অনেক রোগীর পরিজন। আবার কর্মগুণে এই চিকিৎসকরাই অনেক সময়ে হয়ে ওঠেন ভগবানের প্রতিরূপ। ঠিক যেমন অভিজ্ঞতা হল মেদিনীপুরের ময়না গ্রামের বাসিন্দা ১৪ বছরের কিশোরী পরিণীতা দাস ও তাঁর পরিবারের।

patient | newsfront.co
রোগীর বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বিরল হার্নিয়া রোগ থেকে জটিল অস্ত্রোপচারের কিশোরীকে সুস্থ করে তোলাই শুধু নয়, খোদ নিজের গাড়ি চালিয়ে এসএসকেএম থেকে মেদিনীপুরের ময়না গ্রামে ১২৫ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে দিয়ে গেলেন অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক বাবলু সর্দার। তার এই মানবিক কাজ মন জয় করে নিয়েছে সকলেরই।

কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত দুই শিশুকে নিয়ে পার্ক সার্কাস থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সাড়ে ৫ কিলোমিটার আসতে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক ৯২০০ টাকা চাইলেও এক চিকিৎসক মধ্যস্থতা করে তাদের অন্য অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠান। আর এবার নিজের কাজের মাধ্যমে নজির সৃষ্টি করলেন এসএসকেএমের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসক বাবলু সর্দার।

আরও পড়ুনঃ নব সাজে সজ্জিত কোচবিহারের পুলিশ হাসপাতাল

জানা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ১৪ বছরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পরিণীতা দাস আক্রান্ত হয়েছিলেন বিরল হার্নিয়া রোগে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই ছাত্রীর তলপেটে কয়েক মাস ধরে ব্যাপক যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে মাসিকের যন্ত্রণা মনে করা হলেও পরে দেখা যায়, সেটি অন্য কিছু।

সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তাকে নিয়ে আসা হয় এস এস কে এম হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করার পরে জানতে পারেন, মেয়েটি বিরল হার্নিয়া রোগে আক্রান্ত। তলপেটে প্রচুর রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। রোগিণী ভীষণ রকম ভয় পেয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুনঃ করোনার ভয়ে অবহেলা সকলের, বাড়িতে ৬ ঘণ্টা সংজ্ঞাহীন পড়ে থেকে মৃত্যু বৃদ্ধার

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কম বয়সে অস্ত্রোপচারের ধকল সইতে না পেরে অপারেশন টেবিলেই হার্ট অ্যাটাক হয় রোগীর। কিন্তু হাল না ছেড়ে চিকিৎসকরা প্রায় ৫০ মিনিট ধরে সিপিআর বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা চালু রাখেন। ধীরে ধীরে রোগীর হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক হয়। এরপর রোগীকে আই টি ইউ’তে পাঠানো হলে ফের আবার হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ে। আবার অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তোলা হয়। তারপর শনিবার দুপুরে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

চিকিৎসকদের দাবি, পর পর দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে এভাবে বাঁচিয়ে ফেরত নিয়ে আসাটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু দুর্বল ওই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠালে ছিল করোনা সংক্রমণের ভয়, যার ধকল রোগী নিতে পারবেন না। তাই চিকিৎসক বাবলু সর্দার সিদ্ধান্ত নেন, নিজের গাড়িতেই কিশোরী ও তার পরিবারকে ময়নার ওই গ্রামে পৌছে দেবেন। এরপর কথামতো বাবলুবাবু সহকর্মী চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা থেকে ১২৫ কিমি দুরে ময়না গ্রামে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসেন রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের।

চিকিৎসকদের এই ব্যবহারে আপ্লুত পরিণীতা দাসের পরিবার, গ্রামের লোকেরাও। যদিও চিকিৎসক বাবলু সর্দার নিজের কোনও প্রশংসা শুনতে নারাজ। তার কথায়, “চিকিৎসক হিসাবে আমরা তো রোগীর শুধু হাসি মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। ওকে সুস্থ করে বাড়ি পৌছে দিতে পেরে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here