সামিম মনসুর,নিউজডেস্কঃ
গত ২৭ জুন কেন্দ্রিয় সরকার একটি নতুন খসড়া বিল জনসমক্ষে এনেছে। খসড়া বিলের নাম ‘Higher Education Commission of India Act, 2018 (Repeal of University Grants Commission Act)’ যার উদ্দেশ্য, ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন বা ইউ জি সি – কে সরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি নতুন কমিশন গঠন করা। বিলে কমিশনের প্রস্তাবিত নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারতের উচ্চশিক্ষা কমিশন (HECI)’।
প্রস্তাবিত বিলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যাকে মোকাবিলা করা, বিশ্বিদ্যালয়গুলির স্বায়ত্তশাসনের ইত্যাদি কথা বলা হয়েছে। এর সাথে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে এইচ ই সি এলকে আর্থিক অনুদান দিয়ে চালানোর কথা লেখা রয়েছে।
ইউজিসি বর্তমানে নিজেই আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পন্ন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিভিন্ন আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে, এছাড়াও ছাত্রদের গবেষণা জাতীয় কার্যক্রমে প্রধান ভূমিকা রাখে।
বর্তমান প্রস্তাবিত বিলে ইতিমধ্যেই শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য সচেতন মহল থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে।
প্রথমত, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে আর্থিক অনুদানের ক্ষমতা দেওয়ায় এইচ ই সি এল এর স্বাধীনতা যথেচ্ছভাবে খর্ব হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষায় নিযুক্ত শিক্ষকেরা নিজেদের স্বাধীনতা হারাতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, বিলে কমিশনের চেয়ারম্যানকে ‘অনৈতিকতা’-র কারণে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক দ্বারা বরখাস্ত করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। নৈতিকতা-র মানদণ্ড স্পষ্টভাবে কিছু না বলার কারণে অনেকেই এখানে দলতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার আশঙ্কা করছেন। কেন্দ্রে কোনো ক্ষমতাসীন দল তার মানদণ্ড অনুযায়ী গোটা দেশের উচ্চশিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কি?
তৃতীয়ত, ইউজিসি কেন্দ্রীয় সরকার এবং গবেষক তথা পড়ুয়াদের মধ্যে একটি সংযোগ রক্ষাকারীর ভূমিকা এতদিন নিয়ে এসেছে। নীতি নির্ধারকদের অনেকেই একে ‘buffer’ বলেও মনে করেন, যা নতুন আইনের ফলে উঠে যাবে, এবং সরকারের মর্জির ওপর ভিত্তি করে প্রত্যক্ষভাবে ছাত্র, গবেষকদের কার্যক্রম ঠিক করতে হবে। ফলত প্রশাসনিক কাজে সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
চতুর্থত, উপরিক্ত কারণগুলির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্বশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ করা যাবে না। কেননা, প্রায় সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্র সরকারের কাছে থাকবে।
একথা অনস্বীকার্য যে, ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষাকে বহুমুখী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলির স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন। শিক্ষাকে বস্তুমুখী, বৈজ্ঞানিক করার সাথে তাকে প্রয়োগমুখী হওয়ারও প্রয়োজন আছে। ইউজিসি কে আরো বেশি শক্তিশালী এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে আনা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ গুলির শুধু র্র্যাংক ভিত্তিক পর্যালোচনার বাইরে, শিক্ষক নিয়োগ সহ আরও কার্যকরী ভূমিকা দ্রুত নিতে পারার মতো ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার প্রয়োজন আছে।
কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বিলটিকে নিয়ে জনসাধারণের মতামত চাওয়া হয়েছে আগামী ৭ জুলাই অবধি। দীর্ঘদিন ধরে ঘুন ধরে থাকা উচ্চশিক্ষার বেহাল দশা কাটানোর জন্য মাত্র এগারো দিন সময় দেওয়ায় সরকারের উচ্চশিক্ষা সংস্কারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, আগামী বর্ষা অধিবেশনে সংসদে উক্ত বিলটি সরকার পাশ করানোর জন্য পেশ করবে। দেখা যাক, আগামী দিনে এই নিয়ে কোনো গঠনমূলক কার্যক্রম শিক্ষিত সমাজ সরকারের কাছে রাখতে পারে নাকি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584