উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
বামেদের নবান্ন অভিযানে এসে পুলিশের লাঠিতে জখম বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ডিওয়াইএফআই কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যু হল সোমবার কলকাতার একটি নার্সিংহোমে।
জানা গিয়েছে, ৩১ বছরের মইদুল ইসলাম মিদ্যা পেশায় অটো চালক ছিলেন। বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, ওই দুই সন্তান। তাঁর রোজগারেই সংসার চলত। তাঁর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছোনোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়রা। তরতাজা যুবকের এই পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না বাঁকুড়ার কোতুলপুরের চোরকোলা গ্রামের বাসিন্দারাও। গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
বামেদের নবান্ন অভিযানে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মইদুল। বামেদের অভিযোগ, নবান্ন অভিযানের দিন ওই যুব কর্মীকে পুলিশ ব্যাপক মারধর করে। সেই মারধরের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে প্রথমে ভর্তি করা হয় সিপিএম নেতা তথা চিকিত্সক ফুয়াদ হালিমের ক্লিনিকে। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ক্যামাক স্ট্রিটের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
আরও পড়ুনঃ নবান্ন অভিযানে আহত বাম যুব নেতার মৃত্যু
আজ সকাল ৭টা নাগাদ ওই বাম যুব কর্মীর মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুলিশ মর্গে। পুলিশ সূত্রে খবর, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে হবে ময়নাতদন্ত। পাশাপাশি, ময়নাতদন্তের গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানে আহত বাম কর্মীর মৃত্যু নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এই মৃত্যুকে খুন বলে যেখানে উল্লেখ করলেন, সেখানে রাজ্য সরকারকে স্বৈরাচারী বলে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।
আরও পড়ুনঃ ফরাক্কায় কন্টেনারের ধাক্কায় এক সিআইএসএফ মহিলা কনস্টেবলের মৃত্যু
গোপীনাথপুরে ডিওয়াইএফআই ইউনিট সম্পাদক ছিলেন মইদুল। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘ফরিদ’ নামে। পেশায় ছিলেন অটোচালক। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। কিন্তু বরাবরই ‘লড়াকু’ মানসিকতার ছেলে ফরিদ। এমনটাই বলছেন তাঁর সংগঠনের সতীর্থরা। ডিওয়াইএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘খুব সিরিয়াসলি রাজনীতি করতেন মইদুল। সংগঠনের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করত।”
মইদুলের বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর মা তাহমিনা বিবি, স্ত্রী আলেয়া বিবি। রয়েছে দুই সন্তানও। বড় মেয়ে সুরিয়া পারভিন পঞ্চম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে শুনিয়া পারভিন শিশু শ্রেণির ছাত্রী। মইদুলের রাজনৈতিক আন্দোলন বা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ তাঁদের কাছে নতুন কিছু ছিল না। কিন্তু সোমবার ভোরবেলা তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে আচমকাই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি।
শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। সেই সঙ্গে মনের কোণে উঠে আসছে নানা আশঙ্কাও। বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা যেন আচমকাই খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গোটা পরিবারকে। প্রিয় ফরিদের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584