নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
২০২০ সালটা শুরু থেকেই একটার পর একটা দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের দাপটে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। এর মধ্যেই নক্ষত্রপতন হল ভারতীয় থিয়েটার জগতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, মঙ্গলবার প্রয়াত হলেন ইব্রাহিম আলকাজি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। আলকাজির মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন এই থিয়েটার ব্যক্তিত্বের পুত্র ফয়জল আলকাজি।
ইব্রাহিম আলকাজি বলতেন, কুরুক্ষেত্র তৈরি হতে পারে ফাঁকা মঞ্চে শুধু সঞ্জয়ের চোখ দিয়ে। ভারতীয় থিয়েটারকে আমূলে পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি, অনেকের মতেই তিনি আধুনিক ভারতীয় থিয়েটার জগতের রূপকার।
১৮ই অক্টোবর, ১৯২৫ সালে পুনেতে জন্ম ইব্রাহিম আলকাজির। জন্মসূত্রে তাঁর বাবা সৌদি আরবীয়, মা কুয়েতের বাসিন্দা ছিলেন। নয় ভাই-বোন ছিলেন আলকাজিরা। দেশভাগের পর সকলেই পাকিস্তানে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। কিন্তু আলকাজি থেকে গিয়েছিলেন ভারতেই। বম্বের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পড়তেন তিনি। চল্লিশের দশকের শুরুতে তিনি সুলতান ‘ববি’ পদমসীর থিয়েটার গ্রুপ কোম্পানিতে যোগ দেন। এরপর লন্ডনে গিয়ে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টসে যোগ দেন তিনি। সালটা ১৯৪৭।
তিন বছরের মধ্যে বিবিসি পুরস্কার জিতে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ৫০টিরও বেশি নাটকের নির্দেশনার দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। গিরীশ কন্নড়ের তুঘলক, মোহন রাকেশের আষাড় কা এক দিন, ধর্মবীর ভারতীর অন্ধ যুগ এবং শেক্সপিয়ারের লেখা একাধিক নাটক ও অজস্র গ্রীক নাটক ভারতীয় দর্শকদের কথা মাথায় রেখে মঞ্চস্থ করতেন ইব্রাহিম আলকাজি।
চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে মুম্বইয়ের থিয়েটার জগতের পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। তবে অচিরেই সেই খ্যাতি ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন আলকাজি। তখন তাঁর বয়স ৩৭ বছর। ন্যাশান্যাল স্কুল অফ ড্রামায় আগামী ১৫ বছর একটানা ডিরেক্টরের পদে ছিলেন তিনি। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে অভিনয়ের স্কুলের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি, আজ পর্যন্ত তিনি এনএসডি’র ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘসময় কাটানো ডিরেক্টর।
মর্ডান ইন্ডিয়ান থিয়েটারকে নবরূপে সাজিয়েছিলেন আলকাজি। তাঁর হাত ধরেই এনএসডি’র পাঠ্যক্রমে এসেছিল বিপুল রদবদল। শিল্পের প্রশংসক ছিলেন তিনি, মুক্তমনা চিন্তাধারার জন্য সবসময়ই প্রশংসা কুড়িয়েছেন আলকাজি। সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়েছিল তাঁর ভাবনা। বিজয় মেহতা, ওম শিবপুরি, বলরাজ পন্ডিত, ওম পুরি, নাসিরুদ্দিন শাহ, মনোহর সিং-এর মতো অসংখ্য প্রতিভাবনা অভিনেতাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। আলকাজি ছাড়া ভারতীয় থিয়েটারের চালচিত্র অসম্পূর্ণ।
ভারতীয় থিয়েটার জগতে তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকারের তরফে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত ভারতীয় থিয়েটার জগৎ। বলা যেতে পারে, আজ ভারতীয় থিয়েটারে একটা যুগের অবসান ঘটল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584