এডুকে ছাড়া নর্থ ইস্ট ম্যাচে এটিকে- মোহনবাগান

0
67

অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ

টানা সাত ম্যাচে জয়হীন থাকার পর সদ্য জয়ে ফেরা নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে জয় পাওয়া যে সোজা হবে না, তা ভাল করেই জানেন এটিকে মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তাই ব্যর্থতার জেরে তাদের প্রধান কোচ জেরার নুস মাঝপথে দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। সেই দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর সহকারী খালিদ জামিল।

ATK Mohunbagan | newsfront.co

নুসকে ছাড়া প্রথমবার মাঠে নেমে জামশেদপুর এফসি-র মতো দলকে হারিয়ে জয়ে ফিরেও এসেছে তারা। তাই মঙ্গলবারের ম্যাচে ফেভারিট দলের কোচ হাবাস কোনও ভাবেই গুয়াহাটির দলটিকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার ভুল করতে চান না।

মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে অঘটনের মাধ্যমে এ বারের লিগ শুরু করেছিল যারা, এসসি ইস্টবেঙ্গলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ২-০ গোলে তাদের হারিয়েছিল যারা, সেই নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রেখেই সোমবার হাবাস বলেন, “ফুটবলে দুটো ম্যাচ কখনও এক রকমের হয় না। আমাদের গতবারের ম্যাচে লড়াই হয়েছিল। সেই ম্যাচে আমরা জিতেছিলাম ঠিকই। তবে সে জন্য আমরা এ বার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নই। নর্থইস্টের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে এবং আমরা জানি, ওদের হারাতে গেলে আমাদের নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের দলে ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। আমাদের কাজটা ওরা কঠিন করে তুলতে পারে”।

সাত ম্যাচে না হলেও দুই ম্যাচে জয় না পাওয়ার পরে গত ম্যাচে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে জয়ে ফিরেছে এটিকে মোহনবাগান। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জয় এনে দেন পরিবর্ত হিসেবে নামা অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস।

আরও পড়ুনঃ মারাদোনার সই জাল করার অভিযোগ তার ডাক্তারের বিরুদ্ধে

সেই ম্যাচে জয়ের পর এখন যে তাঁর দলের ছেলেরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, তা জানিয়ে স্প্যানিশ কোচ সোমবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “চেন্নাইনের বিরুদ্ধে আমরা ৯০ মিনিটই ভাল খেলেছি। তবে ভাল খেললেও শেষ পর্যন্ত যে জয় দরকার, তা বুঝেছিল ছেলেরা। তাই আমরা আমাদের গতানুগতিক সিস্টেম কিছুটা পাল্টাই। তার জেরেই হয়তো গোল আসে সে দিন”।

দুঃসংবাদের মধ্যেও আশা

তবে এটিকে মোহনবাগান শিবিরে দুঃসংবাদ, গত ম্যাচে চোট পাওয়ায় মঙ্গলবার ফতোরদার ম্যাচে নাও নামতে পারেন দলের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডু গার্সিয়া ও ডিফেন্ডার শুভাশিস বসু। এই দুই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় দলে না থাকলেও হাবাস চাইছেন শুরুতেই বিপক্ষের গোলে বল জড়িয়ে দিতে। তাঁর বিশ্বাস, এর ফলে সারা ম্যাচে আরও ভাল ও গোছানো ফুটবল খেলতে পারবে তাঁর দল।

“গোল করাটা খুব জরুরি। সে আগেই হোক বা পরে। তবে শুরুতে গোল করাটা খুব দরকার। তাতে শান্তিতে, গুছিয়ে ম্যাচটা খেলা যায়। ১-০ গোলে জিতলেই আমি খুশি। প্রচুর গোলে জেতার দরকার কী?”, বলেন আইএসএলের সবচেয়ে সফল কোচ।প্লে-অফের দৌড়ে তারা অনেকটা এগিয়ে থাকলেও এটিকে মোহনবাগান শিবিরে যে নক-আউট পর্ব নিয়ে ভাবনা এখনও শুরু হয়নি, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন হাবাস। তাঁর দলের খেলোয়াড়রাও একই কথা বলছেন। যেমন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ।

তিনিও এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে বলেছেন, “প্লে অফে চলে গিয়েছি, এই কথা মাথায় রেখে মঙ্গলবার আমরা মাঠে নামতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট অর্জন করা। আমাদের লক্ষ্য লিগ টেবলের শীর্ষে থেকে শেষ করা। বাকি সব ম্যাচ জিতে সেটাই করতে চাই আমরা”।

প্রথম লেগে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে জয়ের প্রসঙ্গে হাভি বলেন, “ওই ম্যাচটা জিতেছি বলে যে এই ম্যাচেও জিতব, এই প্রতিশ্রুতি কোনও দলের পক্ষে দেওয়াই সম্ভব নয়। ওদের রক্ষণ বেশ শক্তিশালী। ওরা মাত্র তিনটে ম্যাচ হেরেছে। আমরা আরও একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে চলেছি। এই ম্যাচে জেতা মোটেই সহজ হবে না আমাদের। তবে এটাও ঠিক যে এক নম্বরে যেতে গেলে এই ম্যাচে আমাদের জিততেই হবে”।

আরও পড়ুনঃ ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মোহনবাগানে ঈশ্বরন

গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের মতে, “প্লে-অফ নয়, লিগ শীর্ষে ওঠার কথা ভাবছি আমরা। ১২টার মধ্যে আটটা ম্যাচে গোল না খেয়ে মাঠ ছেড়েছি, এই ম্যাচেও সেই লক্ষ্যই থাকবে। নিজেদের গোল অক্ষত রাখতে পারলে, আমাদের স্ট্রাইকাররা গোল করবেই, সেই বিশ্বাস আমার আছে। আর লিগ শীর্ষে না ওঠার কারণ দেখছি না। মুম্বইয়ের সঙ্গে এখনও আমাদের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ বাকি। তাই ওদের হারানোর সুযোগ আছে। আমরা সব ম্যাচ জিতলে ও ওরা একটা ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করলে আমাদের লিগ শীর্ষে থেকে শেষ করা সম্ভব”।

চলতি মাসেই প্রথম সপ্তাহে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেই ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছিল হাবাসের দল। রয় কৃষ্ণার গোলের পরে নিজের গোলেই বল ঠেলে দিয়েছিলেন ভিপি সুহের। তার পরে অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে চলতি হিরো আইএসএলে। তবে নিজেদের সেরা চারের বাইরে বেরোতে দেননি সবুজ-মেরুন শিবিরের ফুটবলাররা।

গত ম্যাচের আগে টানা সাত ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। তিনটি জয় ও ছ’টি ড্রয়ের ফলে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা চার নম্বরে থাকা হায়দরাবাদ এফসি-র ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। একটা জয়ই তাদের হায়দরাবাদের সমকক্ষ করে তুলতে পারে।এমন আত্মবিশ্বাস যে শিবিরে, সেই শিবিরকে মাঠে আটকানোর কী পরিকল্পনা করছে নর্থইস্ট শিবির? সহকারী কোচ অ্যালিসন খারসিনতিউয়ের কথায় পাওয়া গেল তার আভাস।

অ্যালিসন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “এটিকে মোহনবাগান ফুটবলাররা গতিময়, বুদ্ধিমান ও কার্যকরী। ওদের বেশি সময় দিলে চলবে না। ওরা যে স্টাইলেই খেলুক, আমাদের ম্যাচটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যখন বল আমাদের দখলে থাকবে না, তখন তা নিজেদের দখলে আনার জন্য খাটতে হবে ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। বল পায়ে থাকলে পাইনাল থার্ডে আমাদের নিখুঁত হতে হবে। দল হিসেবে ডিফেন্ড করতে হবে আমাদের। ওদের বেশি জায়গা ও সময় দিলে চলবে না”।

গত ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-কে তারা অনেকটা এই ভাবে খেলেই হারায়। অ্যালিসন সে দিন জেতার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সব দিক থেকেই ভাল খেলেছি। আক্রমণে আমরা বল নিজেদের পায়ে রাখতে পেরেছি। ফাইনাল থার্ডেও নিখুঁত থাকতে পেরেছি। রক্ষণও ভাল হয়েছে আমাদের”।

বেঙ্গালুরু এফসি থেকে সদ্য তারা নিয়ে এসেছেন জামাইকান ফরোয়ার্ড দেশর্ন ব্রাউনকে। যিনি জামশেদপুরের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নেমেই গোল করে দলকে ২-১-এ জেতান। তিনি এ দিন জানান নর্থইস্ট ইউনাইটেডের খেলার স্টাইলের সঙ্গে তিনি দ্রুত মানিয়ে নিতে পারছেন। ফলে এখানে তাঁর খেলতে কোনও অসুবিধাই হচ্ছে না। বলেন, “এখানকার স্টাইলের সঙ্গে আমি মানিয়ে নিতে পারছি। এই ধরনের ফুটবলেই আমি বেশি অভ্যস্ত। কারণ, এখানে অনেক বেশি ক্রস পাই, চেজ করতে পারি। অনেক বেশিবার বল পাচ্ছি। ফলে এখানে আমি অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করছি”।

এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে ব্রাউনের বক্তব্য, “আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলব। ওরা (এটিকে মোহনবাগান) ভাল দল ঠিকই। কিন্তু এই লিগে যে কোনও দল অন্য যে কোনও দলকে হারাতে পারে। শুরু থেকেই আমরা ভাল খেলতে পারলে ফল আমাদের পক্ষেই থাকবে নিশ্চয়ই”।

শুধু ব্রাউন নন, মঙ্গলবার এটিকে মোহনবাগান রক্ষণকে নজরে রাখতে হবে উরুগুয়ের মিডফিল্ডার ফেদরিকো গালেগোর ওপরও। টানা কয়েকটি ম্যাচে বিবর্ণ থাকার পরে গত ম্যাচে তিনিই দলের দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। এটাই তাঁর পরিচিত পারফরম্যান্সের নমুনা। ফলে এমনটাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে নর্থইস্টের এই তারকা ক্রমশ ফর্মে ফিরছেন।

এছাড়া ফরোয়ার্ড লুই মাচাডো, ইদ্রিসা সিলা, ব্রিটো, রোচারজেলা, খাসা কামারা, ডিলান ফক্সরা তাঁদের ফর্মে থাকলে সবুজ-মেরুন শিবিরকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এডু গার্সিয়া, শুভাশিস খেলতে না পারলেও অবশ্য সমস্যা বাড়তে পারে তাদের।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here