অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, স্পোর্টস ডেস্কঃ
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পরে গতবারের রানার্স চেন্নাইন এফসি এবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলকে যেখানে মাত্র দু’দিন প্রস্তুতি নিয়ে এই ম্যাচে নামতে হচ্ছে, সেখানে চেন্নাইন এফসি আরও একদিন কম পাচ্ছে এই ম্যাচের আগে। মাত্র দু’দিনের মধ্যে একদিন বিশ্রামেই চলে গিয়েছে।
লাল-হলুদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে এলি সাবিয়া, এনেস সিপোভিচ, অনিরুদ্ধ থাপা, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, রহিম আলিদের, তার পরে একটা গোটা দিনের বিশ্রাম অবশ্যই প্রয়োজন। পরের ম্যাচটা আরও কঠিন। তার সঠিক প্রস্তুতিও খুবই জরুরি। তার জন্য বরাদ্দ মাত্র একদিন। কিন্তু অগত্যা এই চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে এমন গায়ে গায়ে ম্যাচ যে থাকবে, তা জেনেশুনেই তো দলগুলি এ বারের আইএসএলে খেলতে নেমেছে।গত দুই ম্যাচে এটিকে মোহনবাগান পাঁচ পয়েন্ট খুইয়েছে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ০-১ হেরে এফসি গোয়ার সঙ্গে ১-১ ড্র করে। তার আগে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটি জয় ও দু’টি ড্র ছিল তাদের।
ফের সেই জায়গায় ফিরে আসতে গেলে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে বৃহস্পতিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে জয়ে ফিরতেই হবে। না হলে লিগ টেবলের সেরা চার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে তাদের।তিন নম্বরে থাকা এফসি গোয়া মাত্র দু’পয়েন্ট কম পেয়ে প্রীতম কোটালদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। চার নম্বরে হায়দরাবাদ এফসি-র সঙ্গেও তাদের ব্যবধান চার পয়েন্টের।
মঙ্গলবার ওডিশা এফসি তাদের ১-১ গোলে রুখে না দিলে হাবাসদের আরও কাছাকাছি চলে যেত হায়দরাবাদ। তাই এখন জয় ছাড়া এগিয়ে চলার কোনও রাস্তাই নেই এটিকে মোহনবাগানের সামনে।
আরও পড়ুনঃ পিছিয়ে থেকেও ট্রাউ ম্যাচ ড্র করল মহামেডান
চেন্নাইনের সামনেও এখন এই একটাই রাস্তা খোলা সেরা চারে ঢোকার। গত বার তারা লিগ টেবলের একেবারে নীচ থেকে সেরা চারে উঠে এসেছিল। এ বারও সেই জায়গাটাতেই পৌঁছনোই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু একের পর এক ফয়সালাহীন ম্যাচ খেলায় তাদের এগোনোটা ক্রমশ গতিহীন হয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত ১২টি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই ড্র করেছে তারা। জয়ের সংখ্যা না বাড়ালে প্লে অফে পৌঁছনোর আশা শেষ হয়ে যাবে।
চেন্নাইন এফসি গত পাঁচ ম্যাচে তিন গোল করেছে। দুই দলের প্রথম লেগের ম্যাচও গোলশূন্য হয়। এ দিকে রয় কৃষ্ণার যেমন গোলের খরা চলছে, তেমনই চেন্নাইন এফসি-র এসমায়েল গনসালভেসও নিয়মিত গোল পাচ্ছেন না। রয় কৃষ্ণা গত পাঁচটি ম্যাচে মাত্র দু’টি গোল করেছেন। প্রথম চার ম্যাচে চার গোল করে যে ভাবে প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার। তার পরে তাঁর এই পারফরম্যান্স দল ও সমর্থকদের কাছে বেশ হতাশাজনক। ডেভিড উইলিয়ামসও এ পর্যন্ত ন’বার মাঠে নেমে একটিমাত্র গোল করেছেন।
আরও পড়ুনঃ ইংল্যান্ড সিরিজ পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক ঢোকানোর অনুমতি দিতে পারে বোর্ড
যদিও গোল নিয়ে তেমন চিন্তিত নন দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার এডু গার্সিয়া, যিনি গত ম্যাচে ফ্রি কিক থেকে এক অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে তিনি বলেন, “আমার কাছে গোলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জয়। ভাল গোল করলে তো আনন্দ হয়ই। কিন্তু ম্যাচ জিতলে সেই গোল আসল মর্যাদা পায়। গত ম্যাচে আমার গোলটার পরে যদি আমরা গোল না খেতাম, তা হলে অনেক বেশি আনন্দ পেতাম।”
বৃহস্পতিবার চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে এডু বলেন, “আমরা এমন দুটো দলের বিরুদ্ধে পাঁচ পয়েন্ট নষ্ট করেছি, যারা এই লিগের দুই সেরা দল। তবু আমরা দুইয়ে রয়েছি। আগের ম্যাচগুলো নিয়ে আর ভাবতে চাই না, এখন আসন্ন ম্যাচটায় জেতার কথা ভাবছি। চেন্নাইন শক্তিশালী দল। তা সত্ত্বেও আমাদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে। মাত্র পাঁচটা গোল খেলেও গতবারের মতো বেশি গোল করতে পারিনি আমরা। এই জায়গাটাতেই বেশি উন্নতি দরকার আমাদের।”
কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস অবশ্য মানতে রাজি নন যে, গত দুই ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট খুইয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে তাঁর দল। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “পাঁচ পয়েন্ট খোয়া যাওয়ায় কোনও চাপ নেই। ভাল-খারাপ সময় আসেই। গোয়া ও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওদের লিগ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের ভাল খেলে যেতে হবে। টেবলের ওপরে থাকতে হবে। সে জন্য আমাদের আক্রমণে আরও উন্নতি করতে হবে।”
আরও বেশি জয় পাওয়ার জন্য আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে আরও ভারসাম্য আনতে হবে বলে মনে করেন হাবাস। তিনি বলেন, “এটাই ম্যাজিক ওয়ার্ড, ব্যালান্স। আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে আরও ভারসাম্য আনা দরকার। গোল করতে হবে আমাদের। ৩০ গোল করলাম, অথচ ২৫ গোল খেয়ে বসে রইলাম, এটা মোটেই পছন্দ নয় আমার। মুম্বই ম্যাচের পরে আমাদের গোলের গড় নেমে গিয়েছে। আক্রমণ নিয়েই শুধু চিন্তিত আমি।”
চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচ নিয়ে সবুজ মেরুন কোচের বক্তব্য, “এই ম্যাচটার প্রস্তুতির জন্য আমরা মাত্র দু’দিন হাতে পেয়েছি। তবু খেলতে তো হবেই। চেন্নাইন শক্তিশালী দল। ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। ওরা যদি নিজেদের ছোটখাটো ভুলগুলো শুধরে নিতে পারে, তা হলে ম্যাচটা জিততেও পারে। এ বারের আইএসএলে প্রতিযোগিতা সবচেয়ে কঠিন। যে কোনও দল, যে কোনও ম্যাচে অন্য যে কোনও দলকে হারাতে পারে।”
অন্য দিকে চেন্নাইন এফসি-র হাঙ্গারিয়ান কোচ কসাবা লাজলো তাঁর দলের গোলখরা নিয়ে বলেন, “আমরা যদি ডিফেন্সে নিজেদের গোছাতে যাই, তা হলে আক্রমণে দুর্বল হয়ে পড়ছি। আক্রমণে নজর দিতে গিয়ে রক্ষণে গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। ম্যাচগুলোর মাঝে সেই সময়টাও পাচ্ছি না যে ছেলেদের একটু সময় নিয়ে সব কিছু বোঝাব। আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি অখুশি নই। কিন্তু আমরা গোল করতে পারছি না, এই ব্যাপারে আমি অখুশি। আমাদের স্ট্রাইকাররা যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু তাদের ভাগ্য তাদের সাহায্য করছে না। চেষ্টা করছি, এই অল্প সময়ে যাতে ভুলগুলো শোধরানো যায়।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584