ওয়েব ডেস্ক, দিল্লিঃ
গতকাল রবিবার সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে রাজ্যসভায় জোড়া কৃষি বিল পাশ আটকে দিতে চেয়েছিল বিরোধীরা। সেই অনুযায়ী এদিন রাজ্যসভায় কৃষিবিল পেশ হতেই বিরোধীরা একজোট হয়ে শুরু করেন বিরোধিতা। অথচ শত বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল কৃষিবিল।
এদিন রাজ্যসভায় বিল পাশের বিরোধিতা করেছিলেন বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল, অকালি দল, ডিএমকি, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টির সাংসদরা। সেই সময় তুমুল হইহট্টগোল হয়। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল অধিবেশন। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী দলের সাংসদরা। বিক্ষোভের জেরে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ রাজ্যসভার আট জন সাংসদকে সোমবার সাসপেন্ড করা হল।
আগামী এক সপ্তাহের জন্য বিরোধী দলের আট সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু এদিন অভিযুক্ত বিরোধী সাংসদদের শাস্তি ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও, ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ সিংয়ের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবও খারিজ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ সম্মিলিত প্রতিবাদেও ব্যর্থ বিরোধীরা, লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ কৃষি বিল
এদিন শুরুতেই সাসপেন্ড হওয়া আট বিরোধী সাংসদকে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্লোগান দিতে দিতে অধিবেশন কক্ষ ছাড়েন ওই সাংসদরা। সভায় উপস্থিত বাকি বিরোধী সাংসদরা সোচ্চারে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। এরপরই হইহট্টগোলে সকাল ১০টা পর্যন্ত সংসদের কাজ মুলতুবি ঘোষণা করা হয়।
পরে ফের রাজ্যসভার কাজ শুরু হলে চেঁচামিচি শুরু হয়। তাই আবারও সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। ১১.০৭ পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয় রাজ্যসভা। রবিবার রাজ্যসভায় ওই বিল পেশের পর সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়।
আরও পড়ুনঃ সম্রাট আপনার কাপড়গুলি কোথায়- সংসদে প্রশ্ন মহুয়ার
সাসপেনশনের তালিকায় তৃণমূলের সাংসদ দোলা সেনও রয়েছেন। তাঁদের অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। রয়েছেন কংগ্রেসের তিন সাংসদও। আম আদমি পার্টির এক জন এবং সিপিএমের দুই সাংসদকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
পাশাপাশি, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবটিও খারিজ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল ওই সিদ্ধান্তকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা’ বলে বর্ণনা করেছে।
আরও পড়ুনঃ সামনে এল বাংলায় সংবাদমাধ্যমের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রচারের ওয়েবসাইট তালিকা
সংসদে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রথম থেকেই চেপে ধরেছিল বিরোধীপক্ষ। সেই প্রতিবাদই চূড়ান্ত রূপ পায় রবিবার রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করানো সময়। ওয়েলে নেমে আসেন কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিরোধী দলের সাংসদরা। অভিযোগ, ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ সিং বারংবার উত্তেজিত সাংসদদের আসনে গিয়ে বসার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিক্ষুব্ধ সাংসদরা।
অভিযোগ, প্রতিবাদ করার সময়েই তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে কিছু নথিপত্র ছেঁড়ার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের মতে, সেটি বিলেরই প্রতিলিপি। আবার অনেকে বলছেন, সেটি রাজ্যসভার রুলবুক। সভার কাজে বিঘ্ন ঘটানো ও ডেপুটি চেয়ারম্যানকে অপমান করার অভিযোগে আজ অভিযুক্ত বিরোধী সাংসদদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
সভায় ধ্বস্তাধস্তির সময় ডেরেককে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ হতে পারে না!’’ গোলমালের পর ডেরেক বলেছিলেন, ‘‘সরকার সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সংসদের যাবতীয় আইন ভেঙেছে। তারা কি আশা করে এর পরেও বিরোধীরা সেটা বসে বসে দেখবে!’’
বস্তুত, ওই প্রতিবাদের সময় রাজ্যসভায় বিরোধীদের মধ্যে একটা কক্ষ-ঐক্য এবং সমন্বয়ও চোখে পড়েছে। দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি এবং সিপিএম। যার প্রেক্ষিতে সোমবার সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূলের ডেরেক, দোলাকে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584