শুভম বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতাঃ
মুম্বইয়ের ট্রেন্ড কি তাহলে ধরে ফেলল শহর কলকাতাকেও! মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিতে সংক্রমণের পরেই আচমকা বেড়ে গিয়েছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।সূত্রের খবর, এবার খাস কলকাতাতেও মিলল ফুটপাথবাসী ২ ভিক্ষাজীবীর দেহে সংক্রমণ। বেসরকারি সূত্রে খবর, শুধু এরা ২ জনই নন, গত ২৪ ঘন্টায় কলকাতায় আরও ১১ জন আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে দুই ফুটপাথবাসীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় রীতিমত উদ্বেগে স্বাস্থ্যভবন। এদের এক জন ভর্তি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আর অন্য জনের চিকিৎসা চলছে এমআর বাঙুরে। এরা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এই ঘটনা গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেবে বলেই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
জানা গিয়েছে, ৩ এপ্রিল ৪০ বছর বয়সী এক অসুস্থ ভিক্ষাজীবীকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন বৌবাজার থানার এক পুলিশ অফিসার। এলাকায় টহল দিতে গিয়ে তিনি কবিরাজ রো-তে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। ওই ব্যক্তির জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ ছিল।
প্রাথমিক চিকিৎসায় ওই ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সোমবার তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সোমবার রাতেই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এলে মঙ্গলবারই তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, একই ভাবে গার্ডেনরিচ থানা এলাকার টুকরাপট্টি থেকে ৫৯ বছর বয়সী এক অসুস্থ ফুটপাথবাসীকে ১ এপ্রিল স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ওই ভিক্ষাজীবীকে ভর্তি করে নাদিয়াল হাসপাতালে। জানা যায়, তিনি মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকার মিঠা তালাও এলাকার বাসিন্দা এবং ওই এলাকায় ভিক্ষা করতেন।
সোমবার তাঁর শারীরিক অবস্থার আচমকা অবনতি হলে এবং তাঁর লালারসের নমুনাও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সোমবার রাতে তাঁর রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ওই দুই ভিক্ষাজীবী ছাড়াও বেসরকারি সূত্রে রাজ্যে আরও উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ১১ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রাজাবাগান এলাকার ৪৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তিরও সোমবার রাতে রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।
মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া লেনের ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিরও সোমবার রিপোর্টও পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও গণেশ টকিজ এলাকার ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ এবং গিরিশ পার্ক এলাকার ৫২ বছরের এক মহিলারও সোমবার রাতে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
হাওড়া গোলাবাড়ি এলাকার ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিরও লালারসের নমুনাও করোনা পজিটিভ এসেছে । একই সঙ্গে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজাবাজারের বাসিন্দা ৪০ বছরের এক যুবকেরও নমুনা পরীক্ষা করেও সোমবার করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। তাঁকেও মঙ্গলবার এমআর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলিপুর কমান্ড হাসপাতালের সেনা চিকিৎসকের পর এ বার এক সেনারও করোনা পজিটিভ এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে উত্তরবঙ্গেও। এ বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কালিম্পঙের মহিলার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই নার্স। আচমকা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
সেই রিপোর্টে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেই গত রবিবার মৃত্যু হওয়া উত্তর-পূর্ব রেলের এক কর্মীর ছোট ছেলেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলা জানা গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক মঙ্গলবার সকালে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ বলে জানানো হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে আক্রান্ত বেড়ে ৬৯ এবং ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোন পরিসংখ্যান সঠিক, সরকারি না বেসরকারি, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584