প্রীতম সরকার, স্পোর্টস ডেস্কঃ
বছর দুয়েক আগে কলকাতার এক নামী ক্লাবের কোচ দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘এখন আর বিদেশি ফুটবলারদের আদর্শ বলে কিছু নেই। তাঁরা শুধু টাকা রোজগারে ব্যস্ত। সেজন্য তাঁরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। চুক্তি ভেঙ্গে ‘খেপ’ খেলতেই তাঁদের আগ্রহ। কারন, খেপ খেললেই নগদ টাকা। আর টাকা পেলেই উদ্দাম জীবন। সেই সঙ্গে নারীসঙ্গ তো রয়েছেই।’
চলতি বছর করোনার কারনে কিহবে বিদেশি ফুটবলারদের ভবিষ্যত, সেটা সময়ই বলবে। কলকাতার ফুটবল ক্লাব মহমেডানের শাস্তির হুমকির ভয়ে অনুশীলনে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন বিতর্কিত ফুটবলার ফিলিপ আজা। ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আজা প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, “আর খেপ খেলবো না। নিয়মিত অনুশীলনে আসবো”।
শুধু মহমেডান নয়, কলকাতায় আসা নাইজেরিয়া, ঘানা বা আইভরি কোস্টের মতো দেশের ফুটবলারদের নিয়ে ময়দানের সব ছোট ক্লাবের সমস্যা এখন এক নিত্য ব্যাপার। অথচ লিগে ভালো ফল করতে গেলে দলে বিদেশি ফুটবলার দরকার। অথচ ছোট ক্লাবগুলির হাতে তেমন টাকা নেই। সেকারনে তাদের নথিভুক্ত ফুটবলাররা ‘খেপ’ খেলছেন, তা জানার পরেও চুপ ক্লাবের কর্তারা।
২০১৮-১৯ সালে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলার জন্য কাস্টমসের এজে স্ট্যানলি ইফিয়ানিকে প্রস্তাব দিয়েছিল মহমেডান। ক্লাব সেক্রেটারির অফিসে বসে ১ লক্ষ ২০ হাজার মাসিক টাকায় রফা হয়েছিল। তাতে মহমেডানের কালো-সাদা জার্সি গায়ে চাপাতে রাজি হয়ে যান এই নাইজেরিয়ান ষ্ট্রাইকার। কিন্তু দুদিন পরেই সেই নাইজেরিয়ান ষ্ট্রাইকার জানিয়ে দেন, ‘শরীরে চোট রয়েছে। মহমেডানে খেলতে পারবো না।’ অথচ তিনি তারপরে নানা ক্লাবের হয়ে ‘খেপ’ খেলে বেড়িয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। মহমেডানের প্রস্তাবের কয়েক গুন বেশি। আই লিগে খেলানোর জন্য আইভরি কোস্টের ফুটবলার গটচা আর্থুর ডিওমানেডেকে ‘ ওয়ার্কিং ভিসা’ করিয়ে এনেছিল রেনবো। গটচাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, মাসিক ৮০ হাজার টাকার চুক্তিতে খেলতে। অথচ কলকাতায় এসে রেনবো ক্লাবের হয়ে না খেলে বিভিন্ন ক্লাবে খেপ খেলেছেন। কারন ‘খেপ’ খেললে অনেক বেশি টাকা রোজগার করা সম্ভব। আর টাকা পকেটে থাকলেই জুটে যায় পছন্দের নারী।
খেপ খেললেই হাতে নগদ টাকা আসে। খেপ খেললে আয় কয়েক গুন বেশি। সেই টাকার আয়করও দিতে হয়না। অথচ ক্লাবের হয়ে খেললে আয়কর কেটে টাকা নিতে হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে অসংখ্য টুর্নামেন্ট হয়। ছোট ক্লাবের সব বিদেশি খেলয়ারই কম-বেশি খেপ খেলেন। কলকাতার ময়দানে রটনা রয়েছে, ওয়াইদি নামের এক নাইজেরিয় ফুটবলার ওই পাঁচ মাস খেপ খেলে অন্তত পনেরো লক্ষ টাকা আয় করেন।
আরও পড়ুনঃ দোষারোপের খেলা বন্ধ হোক, শোয়েবের প্রস্তাব ফেরালেন কপিল
মিজোরামের একটি ক্লাবের হয়ে ‘বিনা পয়সায়’ খেলে দেন। বিনিময়ে মিজোরামের ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর শর্ত হলো, ইন্ডিয়াতে প্রতি বছর আসার জন্য ‘ভিসা’ পেতে প্রয়োজনীয় চিঠি তাঁকে পাঠাতে হবে। কলকাতা ময়দান কর্তাদের হিসাবে, এমন প্রায় দু’শো বিদেশি ফুটবল খেলয়ার রয়েছেন, যাদের রুটি-রোজগার হলো ‘খেপ’ খেলা।
প্রতি ম্যাচে পাঁচ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন তাঁরা। পেন ওরজি, আনসুমানা, ইফিমেনা চার্লস, ওবাসি মোসেজের মতো সফল ফুটবলারদের তাই এখন দেখা যায় পাড়ায় পাড়ায়। ভিসা জোগার করতে আইনের ফাঁক নিতে পরোয়া করে না তাঁরা। হাতে প্রচুর ‘কাঁচা টাকা’ পেয়ে কলকাতার ‘উচ্ছৃঙ্খল জীবন’কে উপভোগ করতে পিছুপা হননা তাঁরা। অথচ কলকাতাকে ভালোবাসতে পারেন না। ভালোবাসতে পারেননা কলকাতার মেয়েদের।
কলকাতার মেয়েরা তাদের কাছে এখন স্রেফ সময় কাটানোর আর স্ফূর্তি করার ‘সামগ্রী’। কিন্তু কলকাতাকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন বিদেশি ফুটবল খেলয়ার মাজিদ বাসকার, জামশিদ ওকারি থেকে চিমা ওকারি পর্যন্ত – সকলেই। চিমা – জামশিদ তো কলকাতায় বিয়ে করে “কলকাতার জামাই” হয়ে গিয়েছিলেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584