মোহনা বিশ্বাস, কলকাতাঃ
করোনা ভাইরাস টলিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। করোনার করাল ছায়া পড়েছে ভারতেও। কোভিড-১৯-এর হাত থেকে রক্ষা পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। মৃতের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। সংক্রমণ যত ছড়াচ্ছে তত দীর্ঘমেয়াদী হচ্ছে লকডাউন। খাঁ খাঁ করছে রাস্তাঘাট। নিস্তব্ধতায় মোড়া জনমানবশূন্য ধূসর রাস্তা নিঃস্ব হয়ে একলা দিনযাপন করছে। এই মুহূর্তে লাল সতর্কতায় আবদ্ধ কলকাতার একাধিক জায়গা।
রেড জোনে গা ভাসিয়েছে কুমোরটুলিও। কুমোর পাড়ায় নাকি করোনা ঘাঁটি গেঁড়েছে। আর তাতেই ঘরবন্দি হয়েছেন কুমোরটুলির মৃৎ শিল্পীরা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ঘরে বসে থাকবেন তাঁরা? বাংলা বছরের শুরুতেই দুর্গাপুজো কমিটিগুলো কুমোরটুলি এসে প্রতিমা বায়না করে যায়। এবছর করোনার জেরে পুজো হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যরা।
প্রতিবছর নাওয়া খাওয়া ভুলে চূড়ান্ত ব্যস্ততার সঙ্গে প্রতিমা তৈরি করেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। এবার একেবারে উল্টো চিত্র ধরা পড়ছে। এ যেন এক অচেনা কুমোরটুলি।লকডাউন উঠলেও কাজের বরাত আসবে কিনা তা জানা নেই প্রতিমা শিল্পীদের। যখন এইরকম অনিশ্চয়তার সঙ্গে দিনযাপন করছেন কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পীরা ঠিক তখনই আশার আলো দেখালেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
আরও পড়ুনঃ এসএসকেএম-এ নার্সদের সংবর্ধনা আইএনটিইউসি সেবাদলের
১১মে, সোমবার এই পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষের উদ্যোগে বর্তমান দুরাবস্থার মধ্যে থাকা প্রতিমা শিল্পী ও সহকারীদের হাতে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা। শুধু তাই নয়, এবছর ৮৫তম বর্ষে পর্দার্পন করবে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব। আর সেই কারণে সোমবার মৃৎ শিল্পী মিন্টু পাল-এর হাতে ২৫ হাজার টাকার একটা অগ্রিম চেক তুলে দেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ। এদিন কুমোরটুলিতে প্রথম প্রতিমা বায়না করে আসে এই কমিটি। মধ্য কলকাতার নামজাদা পুজো কমিটিগুলির মধ্যে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দুর্গোৎসব কমিটি অন্যতম। আগের বছর সোনার দুর্গাপ্রতিমা করে দর্শনার্থীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই পুজো কমিটি।
আরও পড়ুনঃ ৫ দিনের জন্য বন্ধ হতে চলেছে বিজন সেতু, চেতলা আরসিসি ব্রিজ
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দুর্গোৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, “টেলিভিশন, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক জুড়ে এখন শুধুই করোনার খবর। এই একটা অসুখ গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। আর এই কঠিন সময়টাও একদিনে কাটবে না। কিন্তু করোনার জেরে পুজো থেমে থাকতে পারে না। কারণ, পুজো মানে শুধু পুজো নয়। পুজো মানে শুধুই আনন্দ নয়। পুজো মানে গরিব, প্রান্তিক মানুষের অনন্ত ৬ মাসের রোজগার। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার মতো একটা বড় বাজার। যে বাজারের সুফল পায় খেটেখাওয়া মানুষ। আর পুজো না হলে বাজারটা পুরো ধ্বংস হবে। আর তাতে মারা পড়বেন হাজার হাজার প্রান্তিক গরিব মানুষ। তাই ছোট করে হলেও পুজো হবে।”
তিনি এও আশ্বাস দেন যে, “দেশের এই দুর্দিনে আমাদের একসঙ্গে লড়তে হবে। পুজো ছোট করে হোক বা বড় করে প্রতিমা শিল্পীদের পাশে সর্বক্ষণ থাকবে পুজো কমিটিগুলি।” সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দুর্গোৎসব পুজো কমিটির কাজ থেকে এইরকম একটা বার্তা পেয়ে খুশি প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল।
তিনি বলেন, “সন্তোষ মিত্র স্কোয়ায় দুর্গোৎসব পুজো কমিটি বড় উপকার করেছে। এই অগ্রিম পাওয়া টাকা দিয়ে কারিগরদের হাতে কিছু অর্থ তুলে দিতে পারবো। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির এই বার্তা অন্যান্য পুজো কমিটিগুলিকে উৎসাহ দেবে। এইভাবে কুমোরটুলি শিল্পীদের পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দুর্গোৎসব কমিটিকে।”
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির এহেন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এভাবে সমস্ত পুজো কমিটিগুলো যদি এগিয়ে আসে, তাহলে মিলেমিশে হয়ত এবছর ছোট করে হলেও দুর্গাপুজো হবেই। আর তাতে উপকৃত হবেন মৃৎ শিল্পী থেকে শুরু করে কারিগররা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584