নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ২৯ জুলাই ভারতের মাটি ছুঁয়েছিল ফ্রান্স থেকে উড়ে আসা পাঁচটি মাল্টিরোল ফাইটার জেট। অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভারে পুরোপুরি সজ্জিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে হরিয়ানার অম্বালা বিমানঘাঁটিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেগুলি ভারতীয় বায়ুসেনার কাজে যোগ দিল।
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনে অন্তর্ভুক্ত হল পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনার নয়া যুদ্ধবিমানকে এদিন জলকামানের মাধ্যমে স্যালুট জানানো হয়। হরিয়ানার আম্বালা এয়ারবেসে সর্ব ধর্ম পুজোর মধ্যে দিয়ে ধূমধাম করে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে। এ দিনের ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদোরিয়া।
আরও পড়ুনঃ অযোধ্যায় মসজিদের চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে হাসপাতাল নির্মাণ
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে দেশের সীমান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারতীয় বায়ু সেনায় পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমানের অন্তর্ভুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ সীমান্তে ভারতীয় বায়ু সেনার ভূমিকার প্রশংসা করেন রাজনাথ সিং। তাঁর কথায়, ‘রাফালের অন্তর্ভুক্তি ভারত-ফ্রান্স কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রেও সম্পর্ক দৃঢ় করল।’
আরও পড়ুনঃ প্রতিরক্ষায় বর্ধিত বিদেশি বিনিয়োগে পর্যালোচনার নিদান কেন্দ্রের
ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে জানান, ‘আমাদের দুই দেশের কাছেই আজকের দিনটি অত্যন্ত কৃতিত্বের। ভারত-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের পাশাপাশি বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতীয় নির্মাতাদের আরও সংহতকরণের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গত ২৯ জুলাই হরিয়ানার অম্বালায় ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে অবতরণ করে পাঁচটি রাফাল। বিমানগুলি ফ্রান্স থেকে উড়িয়ে এনেছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটরাই। অম্বালা ঘাঁটিতে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল স্বয়ং।
আরও পড়ুনঃ স্ব-নিধি প্রকল্পে এবার অনলাইনে মিলবে ‘স্ট্রিট ফুড’
গত বছরের অক্টোবরে ফ্রান্স সফরে গিয়ে রাজনাথ সিং বোর্দোর রাফাল উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম রাফাল বিমানের ‘চাবি’ পান ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। দশেরায় রীতি মেনে অস্ত্র পুজো করে তিনি সওয়ার হন সেই যুদ্ধবিমানে।
২০১৬ সালে ভারত-ফ্রান্স চুক্তি হয়। ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি অনুযায়ী ফান্স থেকে মোট ৩৬টি রাফাল বিমান কিনবে ভারত। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি ৩১টি যুদ্ধ বিমানের এ দেশে পৌঁছনোর কথা । ভারতীয় বায়ুসেনার দু’টি রাফাল স্কোয়াড্রনের মধ্যে প্রথমটির ঠিকানা হরিয়ানার অম্বালা। দ্বিতীয়টি হবে উত্তরবঙ্গের হাসিমারা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে।
দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে রাফাল অন্যতম। ১০ টন ওজনের রাফালের রেঞ্জ ৩৭০০ কিলোমিটার। এর ১৪টি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি ভারী ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধাস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতে পারে। সাড়ে নয় টনের বেশি ওজন বইতে পারে রাফাল। শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে রাফাল। এই ফাইটার জেটের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর ওয়েপন সিস্টেম ও রাডার।
অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইল যোগ করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। মেটিওর ও স্কাল্প মিসাইল বানিয়ছে ইউরোপিয়ান অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএ।
‘মেটিওর’ হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। ওজন ১৯০ কিলোগ্রাম। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। প্রতিটি মেটিওর মিসাইলের দাম ২০ কোটি টাকা। ‘স্কাল্প’ হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। দৈর্ঘ্যে ৫.১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কিলোগ্রাম। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল।
আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায় এই মিসাইল। রাফালে রয়েছে আরবিই২ অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড রাডার। যে কোনও পরিস্থিতিতে ও আবহাওয়ার অবস্থায় শত্রুপক্ষের এয়ারক্রাফ্টের খোঁজ দিতে পারে। একসঙ্গে অনেকগুলো টার্গেটে নজর রাখতে পারে এই রাডার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584