বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রবিক্ষোভের আঁচ

0
52

পিয়ালি দাস, বীরভূমঃ

বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পড়ল ছাত্রবিক্ষোভের আঁচ। একদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গুরুদেবের ভূমিকা নিয়ে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার গুন গান গাইছেন দেশের রাষ্ট্রপতি ঠিক তখনই শিক্ষাঙ্গনে ভারী বুটের শব্দ এবং বন্দুকের নলের নজরদারি থেকে বিশ্বভারতীকে মুক্ত করার দাবি তুলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভে সামিল হলো। যদিও পুলিশি তৎপরতায় রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের তথা আশ্রম ও বিশ্বভারতীর ব্যথার কথা তুলে ধরতে পারলো না পড়ুয়ারা।

flames of student protest At the convocation ceremony of Biswabharati
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বভারতীর ছাত্রনেতা সুদাম সাহা জানিয়েছেন, বিশ্বভারতী কোন বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয় অথবা অপরাধীদের আখড়া নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার পীঠস্থান, যেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা নিয়ে খুলে দিয়েছিলেন নতুন নতুন দিগন্ত, বিশ্বভারতীতে ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক- অধ্যাপিকা, আশ্রমিকরা একান্নবর্তী পরিবারের মতো থাকেন সেই পরিবারকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলার জন্যই উপাচার্য হিটলার শাসন কায়েম করতে চলেছেন বিশ্বভারতীতে। সি.আই এস.এফ-এর নিয়োগের মাধ্যমে গুরুদেবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই বন্দুকের শাসন চালানো যাবে না, বিষয়টি নিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে বদ্ধপরিকর, যতদূর যেতে হয় ততদূরই যাব।

এস এফ আই নেতা সৌমেন সৌ, যিনি অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র, দাবি করেন বর্তমান বিশ্বভারতীর উপাচার্য খামখেয়ালিপনায় মহম্মদ বিন তুঘলককেও হারিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বভারতীতে আগামী দিনে কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র নজর নেই, কোন সমস্যার কথা ওনাকে জানাতে গেলে উনি তাচ্ছিল্যের সুরে ব্যবহার করেন। কার্যত বিশ্বভারতীর অধ্যাপক থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রত্যেকে ভয়ে সিটিয়ে গিয়েছে কিন্তু এইভাবে ভয় দেখিয়ে কখনো কোন গা-জোয়ারি মনোভাব কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দিতে কেও সফল হননি উপাচার্যও হবেন না।

বিশ্বভারতীর কর্মী সভার সভাপতি গগন সরকার বলেন দীর্ঘদিন ধরে কর্মীদের বকেয়া মেটাতে পারছে না বিশ্বভারতী। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপের টাকা মেটাতে পারছে না সেখানে সি.আই.এস.এফ-এর পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচা বিশ্বভারতী করবে কিভাবে? উপাচার্য মহাশয়ের মানবিকতা কি জলাঞ্জলি গিয়েছে! এইভাবে কেন্দ্রের পুলিশ বাহিনী দিয়ে উপাচার্য মহাশয় যদি নিজেকে সুরক্ষিত বলয়ে রেখে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং অন্যান্য কর্মীদের আন্দোলনকে দিশেহারা করে ফেলবেন তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।

বিশ্বভারতীতে সরকারি বন্দুক বাহিনীর আগমনকে মোটেও ভালোভাবে নিচ্ছেন না আশ্রমিকরা। সুপ্রিয় ঠাকুর, সুবোধ মিত্র প্রত্যেকেই বিশ্বভারতীতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং প্রবীণ শ্রমিক। দুজনে সি.আই.এস.এফ বিশ্বভারতীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত করার বিপক্ষে উপাচার্যের কড়া সমালোচনা করে। তাদের দাবি উনি গুরুদেবের আশ্রমের সাথে মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেননি তাই এই ধরনের ভাবনা তার মাথায় আসছে৷

এদিনই সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন গুরুদেব তার ভাষার মধ্য দিয়ে দেশের লোককে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন, জাতীয় শিক্ষার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিলেন। উনি বলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্যতা দেশবাসী হিসেবে নিজেকে গর্বিত করে। এই সেই আশ্রম বিশ্বভারতী, যেখানে গুরুদেব থেকেছেন, লিখেছেন, পড়িয়েছেন পড়েছেন, গড়ে তুলেছেন দেশের ভবিষ্যৎ সাহিত্য। গুরুদেব যখন বিশ্বভারতী আবিষ্কার করেছিলেন তখন এই জায়গাটা ফাঁকা মাঠে ধানজমি ছাড়া কিছুই ছিল না, সেখানে গুরুদেব শিক্ষার সোনার ফসল ফলিয়েছেন। সেই ফসলে ছিল দর্শন, সাহিত্য, সঙ্গীত, ইতিহাস, কলা ভাষা এবং অবশ্যই মানুষের মনের বিকাশ। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ ও লক্ষই বিশ্বভারতীর আগামী দিনের পথ প্রদর্শক এমনটাই বলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here