সৌন্দর্যের পূজারী হতে ইচ্ছুক নবীনেরা এই লেখাটিতে এক সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার নির্যাসের সন্ধান পেয়ে সম্ভবত আনন্দ পাবে।
পূর্বসূরী মহান শিল্পীদের নিবেদিতচিত্তে ভালোবাসুন।নতমস্তক হোন ফিদিয়াস আর মাইকেল এঞ্জেলোর সামনে।একজনের সৃষ্টিগুলির স্বর্গীয় সুষমাকে,আর অন্যজনের সুতীব্র যন্ত্রণাবোধকে শ্রদ্ধা করুন,ভালোবাসুন।ভক্তিনম্রতা মহৎ প্রাণের শক্তিশালী সোমরস।
তবে পূর্বসূরীদের অনুকরণের থেকে দূরে থাকবেন।ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তার মধ্যে সৃষ্টির কালজয়ী যে উপাদান লুকিয়ে আছে তার সন্ধান করতে শিখুনঃতাহল,প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন।সমস্ত প্রতিভাধরদের মধ্যেই এই দুটি শক্তিশালী আবেগের সমাহার দেখবেন।এঁরা সকলেই প্রকৃতির পূজারী ছিলেন এবং সর্বদা সত্যের সাধনা করেছেন।তাই ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা আপনাদের হাতে সেই চাবিকাঠি দেবে,যা দিয়ে গতানুগতিকতা থেকে আপনারা মুক্তি পাবেন।ঐতিহ্যের বোধই স্বয়ং আপনাদের বাস্তবতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণে নিয়োজিত করবে এবং রক্ষা করবে যে কোন গুরুকে অন্ধ অনুসরণের থেকে।
শিল্পীর কাছে সবই সুন্দর।কারণ তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি প্রতিটি এবং প্রাণীর প্রতিটি বস্তুর চরিত্রবৈশিষ্ট্যকে অর্থাৎ বহিরঙ্গের অন্তরালে তার অন্তর্নিহিত সত্যরূপটিকে আবিষ্কার করে।এই যে সত্য রূপ,এই তো সৌন্দর্য। উপাসনা করার মতো নিষ্ঠা নিয়ে চর্চা চালিয়ে যানঃআপনারা সত্যানুসান্ধানী,তাই সুন্দর আপনাদের কাছে ধরা দেবে।
মূর্তি গড়ার একেবারে শুরুতেই তার প্রধান ভঙ্গীগুলি সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলুন।বলিষ্ঠ ও প্রকটরূপে রূপায়িত করুন প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের,মাথার,দুটি কাঁধের,শ্রেণীচক্রের(pelvis) এবং পা দুটির ভঙ্গিমাকে।শিল্পের দাবি -সুনির্দিষ্টতা।শরীরের রেখাগুলির গতিময়তাকে ফুটিয়ে তুললেই আপনি স্থানের(space)ধারণার সৃষ্টি করতে পারবেন এবং সফল হবেন মূর্তির গভীরতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে।মূল ভঙ্গীগুলি ফুটিয়ে তোলা শেষ হল,মানে সবাটাই দাঁড়িয়ে গেল।আপনার মূর্তি ইতিমধ্যে জীবন্ত উঠেছে।এইবার পুঙ্খানুপুঙ্খ সূক্ষ্ম কাজগুলো জেগে উঠবে এবং নিজেরাই একটার পর একটা আকার নেবে।
মূর্তি গড়ার সময় – সেটিকে দ্বিমাত্রিকভাবে নয় কল্পনা করবেন ত্রিমাত্রিকভাবে।…
সমস্ত শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীরাই স্থানের অনুভূতি সৃষ্টির চেষ্টায় ডুব দিয়েছেন।ত্রিমাত্রিকতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলার মধ্যেই তাদের শক্তি নিহিত।
এটি মনে রাখবেনঃরেখা বলে কিছু নেই,আছে আয়তন।…
চাই ধৈর্য!নিছক উদ্দীপনার উপর ভরসা করবেন না।ওটি ক্ষণস্থায়ী। জ্ঞান,মনোঃসংযোগ,কর্মনিষ্ঠা ও আকাঙ্ক্ষাই শিল্পীর একমাত্র গুণাবলী।সৎ ও নিষ্ঠাবান কারিগরের মতোন করে সযত্নে নিজের কাজটি শেষ করুন।…
পরিপূর্ণভাবে,দুর্দমনীয়ভাবে সত্যনিষ্ঠ হন।যা অনুভব করবেন তাকে প্রকাশ করতে কদাচ দ্বিধা করবেন না,এমনকি প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে দাঁড়াবেন।কিন্তু লোকের নজর কাড়ার জন্য ভাঁড়ামি, নাটুকেপনার আশ্রয় নেবেন না।সারল্য, শিশুর মতো অনাবিল সারল্য চাই।সব থেকে সুন্দর শিল্প বস্তুগুলো আছে আপনার চোখের সামনেই;যেগুলো আপনার সবথেকে পরিচিত – তারমধ্যেই।…
কু শিল্পীরা সবসময়ল দেখে অন্যের চোখ দিয়ে, আসল কথা আবেগাপ্লুত হতে পারা,ভালোবাসতে পারা,স্বপ্ন দেখতে পারা,সৃষ্টির স্পন্দনে স্পন্দিত হতে পারা,নিয়ত জীবনকে অনুভব করতে পারা,
শিল্পী হওয়ার আগে মানুষ হওয়া। পাস্কালের ভাষায় -” সত্যিকারের বাগ্মিতার কাছে মেঠো বাগ্মিতা উপহাসে পর্যবসিত হয়।সত্যিকারের শিল্পীর পাশে তথাকথিত শিল্প উপহাসের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।”
সমস্থ আবেগ নিয়ে আপন লক্ষ্যের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করুন।তার বড় সুন্দর আর কিছু নেই।অরিসকেরা যা কল্পনাতেও আনতে পারে না,তার থেকেও অনেক অনেক উপরে এর স্থান।
শিল্পী নিজেই মহান এক দৃষ্টান্তস্থল। তিনি তাঁর কাজে বিভোরঃনিজের কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করার মধ্যেই রয়েছে তাঁর দুর্মূল্য প্রাপ্তি।
কিন্তু হায়! আজ হতভাগ্য কারিগড়দের বোঝাতে হয়,তারা নিজেদের কাজকে যেন ঘৃণা না করে।যতদিন না প্রতিটি মানুষের মানসিকতা হবে শিল্পীসুলভ,অর্থাৎ যতদিন না সকলে নিজ দায়িত্ব পালনের মধ্যেই সত্যিকারের আনন্দ খুঁজে পাবেন ততদিন পৃথিবী আনন্দময় হয়ে উঠবে না।
‘দি টেস্টামেন্ট অব রোঁদা’ রচনাটি মূল ফরাসী থেকে অনুবাদঃসৌরভ বোস
ব্যবহৃত সমস্ত ছবিই ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584