মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
পুরসভার প্রশাসক মন্ডলী থেকে প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ায় দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের একাংশ। আজ মাথাভাঙায় তৃণমূল কংগ্রেসের ওই বিক্ষোভের জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
স্মারকলিপি দিতে গেলে মাথাভাঙা পুরসভার প্রশাসক লক্ষপতি প্রামাণিকের সাথে বিক্ষোভকারীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। পুরসভার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে মাথাভাঙা থানার পুলিশ ছুটে আসেন মাথাভাঙা পুরসভা চত্বরে। মাথাভাঙা পুরসভায় প্রথমবার প্রশাসক নিয়োগ করার সময় বিদায়ী বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চন্দন দাস প্রশাসক মন্ডলীতে ছিলেন।
সম্প্রতি ফের ওই কমিটি রদবদল করায় চন্দন দাসকে ওই কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আর ওই ঘটনায় চন্দন দাস অনুগামী তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমতে শুরু করে। এদিন সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের মাথাভাঙা শহর ব্লক কমিটির সহ-সভাপতি চন্দ্র শেখর রায় বসুনিয়া বলেন, “মাথাভাঙা শহরের সকলের প্রিয় দলের একনিষ্ঠ কর্মী কাজের মানুষ চন্দন দাস কে বিনা কারণে প্রশাসক মন্ডলী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা কোন মতেই আমরা মেনে নিতে পারছি না।
আরও পড়ুনঃ রানীডাঙ্গা নেতাজি মিনি মার্কেট স্বাভাবিক করার দাবিতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ ব্যবসায়ীদের
আমাদের দাবি প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য হিসেবে পুনরায় চন্দন দাসকে নিয়োগ করতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।” যদিও এদিনের এই বিক্ষোভকে দল বিরোধী কাজ বলেই মনে করছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের মাথাভাঙ্গা শহর ব্লক সভাপতি তথা মাথাভাঙা ১ নং ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, “এদিনের ঘটনার সাথে দল কোন মতেই যুক্ত নয়, যারা এই কাজ করেছে আমার মনে হয়েছে তারা দল বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত।
বিষয়টি সবিস্তারে জেলা সভাপতি কে জানানো হয়েছে। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।” মাথাভাঙা পুরসভার প্রশাসক লক্ষপতি প্রামাণিক বলেন, “একটি স্মারকলিপি আমাকে প্রদান করা হয়েছে, আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং দলীয় স্তরে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সচেষ্ট হব।”
আরও পড়ুনঃ কেশপুরে মৃত দলীয় কর্মীর পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য প্রদান তৃণমূল জেলা সভাপতির
মাথাভাঙার বিধায়ক তথা মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “মাথাভাঙা পুরসভার কি ঘটনা ঘটেছে তা সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখছি।” উল্লেখ্য, নতুন প্রশাসক করা হয়েছে লক্ষপতি প্রামাণিককে। প্রশাসক মন্ডলীতে রয়েছেন কবিতা রায়, নির্মল কুমার সাহা, কিশলয় বিশ্বাস, গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। শেষের দুজন নতুন সদস্য। একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলো যেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সেখানে কোচবিহারে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রায়ই প্রকাশ্যে চলে আসছে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র হারাতে হয়েছে তৃণমূলকে। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কোচবিহার কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মাত্র ২ টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। জেলার আরও দুটি বিধানসভা কেন্দ্রেও পিছিয়ে ছিল তারা।
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রতিটি ব্লকে চলছে কংগ্রেসের ডেপুটেশন কর্মসূচি
এই অবস্থায় দলকে শক্তিশালী করার বদলে সাংগঠনিক পরিবর্তন অথবা প্রশাসনিক পদের পরিবর্তন করতে গিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভের জেরে ক্রমশই দল দুর্বল হচ্ছে বলে তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা নেতৃত্বের অনেকেই মনে করেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের এক জেলা নেতার কথায়, “সাংগঠনিক পরিবর্তন নিয়ে একজন বিধায়কের মতামত গুরুত্ব না দেওয়ায় মিহির গোস্বামীর মত একজনকে হারিয়েছে দল। এবার প্রশাসনিক পদ পরিবর্তন নিয়েও গোষ্ঠী বিরোধ। কোচবিহারে দল কি আগামী বিধানসভায় জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, না পরাজয়ের সেটাই বুঝে উঠতে পাড়ছি না।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584