মুনিরুল তারেক, বাংলাদেশঃ
১৯৯০ সালে বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গুয়াহাটি এলাকা থেকে চালু হয় জুয়া। ওই অনলাইন জুয়া চক্রের নাম শিলং তীর। বিভিন্ন এজেন্ট নিয়োগ করে পাতানো এই খেলায় এক দিকে যেমন নিঃস্ব হচ্ছেন বাংলাদেশীরা, অন্য দিকে জুয়াড়িদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ভারতে।
সেই জুয়া চক্রের চারজন বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গোয়েন্দা অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৯৯০ সালে চালু হওয়া জুয়া খেলাটি এক পর্যায়ে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার অসংখ্য মানুষকে সর্বস্বান্ত করে এই চক্রের পরবর্তী টার্গেটে পরে নেত্রকোনা জেলাকে। ওই জেলায় ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় চক্রটি।
আরও পড়ুনঃ ব্যাপক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত এক্সেনচারে, ভারতে কাজ হারাবেন প্রায় ১০ হাজার
নেত্রকোনা হয়ে ‘শিলং তীর’র থাবা পড়ে রাজধানী ঢাকায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রযুক্তির সহযোগীতায় গত ২৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইনে শিলং তীর জুয়ার বাংলাদেশি এজেন্ট শামিম মিয়া (৩০) ও আব্দুল আলীকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫ আগস্ট নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়ুয়াপনা বাজার এলাকা থেকে অপর এজেন্ট এরশাদ মিয়া (২৯) ও সোহাগ মিয়া (২৭) গ্রেফতার হয়।
তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ৬টি মোবাইল, ১টি রেজিস্টার খাতা, ১-৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিশিষ্ট ৪টি চার্ট সম্বলিত ব্যবহৃত শীট এবং ৫টি অব্যবহৃত চার্ট সম্বলিত শীট।
আরও পড়ুনঃ প্রায় ১১০০ বছরের প্রাচীন খাঁটি স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ করে। দেশি এজেন্টরা বিভিন্ন এলাকায় সেলসম্যান নিয়োগ করেন। সেলসম্যানদের কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরণের লালসা দেখিয়ে ভয়ানক শিলং তীর নামক জুয়ায় আশক্ত করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
শিলং ভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করে। ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত নম্বরগুলো যারা ক্রয় করে থাকে তাদের সঙ্গে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করেন। তখন জুয়াড়িরা নম্বর ও বাজি ধরা বিভিন্ন অংকের টাকা সেলসম্যানের কাছে প্রদান করে। সেলসম্যানরা বিক্রিত এই নম্বরের বিপরীতে টাকা সংগ্রহ করে এজেন্টের কাছে পৌঁছায়।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশকে করোনার ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের
রোববার ব্যতিত সপ্তাহের ৬ দিন বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৪টায় এই জুয়া খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রতে ১ থেকে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। যারা ওই নম্বরটি ক্রয় করে তারা বিজয়ী হয় এবং নম্বরের বিপরীতে ধরা বাজির টাকার ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে ফেরত পায়। কিন্তু অধিকাংশ জুয়াড়িই জয়ী হয় না। ফলে তাদের পুঁজি হারায়। জুয়াড়ি, সেলসম্যান এবং এজেন্টের মধ্যে সমস্ত লেনদেন সম্পন্ন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, সেলসম্যানরা জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন রেখে বাকি টাকা ঢাকার এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীর কাছে পাঠায়। শামিম ও আলী তাদের কমিশন রেখে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেত্রকোনার এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগে কাছে পাঠায়।
নেত্রকোনা থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা চলে যায় সিলেটের জাফলংয়ে। সেখান থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে টাকা চলে যায়। এভাবে প্রতিদিন এই চক্রটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রেফতার ৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584