প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়ের অন্তিম যাত্রা

0
157

পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ

দেশ স্বাধীন হয়েছে,কিন্তু স্বপ্নের ভারত? দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যত হতাশ হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মিলন পাড়ার বাসিন্দা তথা জেলার একমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী যে মনীন্দ্র নাথ রায় বক্তব্য রেখেছিলেন এই প্রতিবেদকের কাছে।আজ তিনি সকলকে ছেড়ে নিজেই চলে গেলেন একরাশ দুঃখ বেদনা নিয়ে।আজ তার রায়গঞ্জের মিলন পাড়ার বাসভবনে অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়ের মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র

তাঁর শেষ যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন রায়গঞ্জ পৌরসভার পৌরপতি সন্দীপ বিশ্বাস।উল্লেখ্য পরাধীন ভারতে জেলখাটা তাম্রপদকপ্রাপ্ত মনীন্দ্র বাবু গতবছর বলেছিলেন এত মানুষের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু দেশের হাল এমনটা হবে ভাবিনি।অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার বেড়া থানা এলাকায় ১৯২৩ সালে জন্মেছিলেন মনীন্দ্র বাবু।তিনি বর্তমানে ছেলের সঙ্গে থাকতেন রায়গঞ্জের মিলন পাড়ায়। ৪০ এর দশকে অবিভক্ত বাংলার অজপাড়া গাঁয়ে বসে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন।অষ্টম শ্রেনীতে উঠেই তার মুক্তির আন্দোলনের হাতে খড়ি।কিশোর অবস্থা থেকেই পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার ইচ্ছে প্রবল ভাবে তার মধ্যে ছিল।এমনকি আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী নেতাদের মিছিল অথবা সমাবেশ এ বক্তব্য শুনতে ছুটে গেছেন অনেকবার।প্রথম জীবনে সক্রিয় ভাবে এই আন্দোলনের অংশগ্রহন না করলেও পরবর্তীতে তিনি স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকারীদের খবর আদানপ্রদান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় অভিযোগে জেলার বাইরে যাওয়ার উপড় তাঁর বিধিনিষেধ অরোপ করেছিল ব্রিটিশ সরকার।এরপর গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সক্রিয়ভাবে তিনি স্বাধীনতা অন্দোলনে অংশ গ্রহন করেছিলেন।তৎকালীন বহু সংগ্রামীদের সঙ্গে তিনি অংশ গ্রহন করেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ব্রিটিশের বিভিন্ন কার্যকালাপের গোপন বহু তথ্য পাচার করার অপরাধে একবার মনীন্দ্র বাবু ধরাও পড়ে যান ব্রিটিশ সরকারের কাছে।সেই দমদম জেলে বসেই তাকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হয়।এর পর সাধের স্বাধীনতা ভারতবর্ষ অর্জন করার পর ,তিনি রায়গঞ্জে চলে আসেন এবং রায়গঞ্জে নবগঠিত পুরসভা গঠন হলে সেই সময় পুরসভায় চাকরি পান তিনি।বর্তমানে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামি হিসেবে নিয়মিত ভাতাও পেতেন।বহু বার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।আজ নিয়তির কাছে রেখে গেলেন তার অগণিত প্রিয় মানুষদের। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।প্রবীন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। আজ তার অন্তিম যাত্রায় অংশ নেন রায়গঞ্জের বহু মানুষ।

অন্তিমযাত্রায় মনীন্দ্র নাথ রায়।নিজস্ব চিত্র

ভারত সরকারের তাম্রপত্র প্রাপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ শহরের মিলনপাড়ার বাসিন্দা মনীন্দ্র নাথ রায় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ভাবশিষ্য হিসেবে দেশমুক্তির লড়াইয়ে নেমেছিলেন তরুন বয়স থেকেই।স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস বলেন , “আজ রায়গঞ্জবাসীর কাছে দুঃখের দিন৷ রায়গঞ্জে একমাত্র জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে মনীন্দ্র নাথ রায় ছিলেন, আজ তাকেও হারালো রায়গঞ্জবাসী। রায়গঞ্জ পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁর শেষযাত্রায় অংশগ্রহন করে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here