শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আমফান হয়েছিল ২০ মে। তার ২ সপ্তাহ পর কেন্দ্রের নির্দেশে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। জানা গিয়েছে, আর এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সরকারের অতিথি বলে উল্লেখ করে পরিদর্শন-সহ থাকা খাওয়ায় সমস্ত সুযোগ সুবিধা এবং সমস্ত তথ্য তুলে দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করল নবান্ন।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসে রাজ্য সরকারের তুমুল অসহযোগিতার পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন আরেকটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। থাকা খাওয়া তো দূর, ঠিকমতো রাজ্য সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তাও মেলেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল। শেষে বিএসএফের জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাজ শেষে রিপোর্ট জমা করেন ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। কিন্তু আচমকা এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর মতি বদলের প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলের অনেকেই।
আমফান সংক্রান্ত আন্ত্র-মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দলের সফরটিকে (জুন 4-6) সম্পূর্ণরূপে সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।@MamataOfficial রাজ্যর সর্বাঙ্গীন কল্যাণের স্বার্থে @PMOIndia কেন্দ্রের সাথে সমন্বয়সাধন করেই কাজ করতে হবে।(1/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) June 4, 2020
বৃহস্পতিবার নবান্নের বিপর্যয় মোকাবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যদের রাজ্যের সরকারি অতিথি ঘোষণা করা হল। তাই তাদের ভিআইপির মতো যাবতীয় সৌজন্য ও সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ রইল।’ সঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে আমফানের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় সাহায্যের জন্য সুপারিশ করবে।’
আরও পড়ুনঃ বাড়িতে বসেই মিলবে মদ! খাদ্য সরবরাহকারী অ্যাপের সাথে চুক্তি আবগারি দফতরের
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালেই পর পর দুটি ট্যুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেখানে তিনি লেখেন, আমফান সংক্রান্ত আন্ত্র-মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দলের সফরটিকে সম্পূর্ণরূপে সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। রাজ্যের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের স্বার্থে কেন্দ্রের সাথে সমন্বয়সাধন করেই কাজ করতে হবে। রাজ্যের বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রাজ্ঞজনচিত প্রতিক্রিয়া আশা করব। তারপরেই নবান্নের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় বিষয়টিকে দুইয়ে দুইয়ে চার বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুনঃ কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস
জানা গিয়েছে, সাত জনের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্মসচিব অনুজ শর্মার নেতৃত্বে শুক্রবার দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন। আমফানে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, সন্দেশখালি, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ হেলিকপ্টারে ঘুরে দেখবেন। শনিবার নবান্নে ফিরে তাঁরা মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা-সহ শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কীভাবে দুর্গতদের ক্ষতি পূরণ করা যায়, কোনও বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।
আমফানে বাংলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৮। ইতিমধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। সূত্রের খবর, এই প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণের পরেই রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দাবি করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত ২০ মে রাজ্যে আছড়ে পড়েছিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফান। ব্যাপক ক্ষতি হয় দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলিতে। রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য তার পর দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে গত ২২ মে রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির পরিদর্শনে আসেন মোদী। পরিদর্শন শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে নিয়ে বসিরহাটে একটি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন। ওই বৈঠকে রাজ্য সরকারকে অগ্রিম এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে তিনি জানান, আমফান বিধ্বস্ত এলাকাগুলি খতিয়ে দেখার জন্য একটা দল পাঠাবে কেন্দ্র। সেই দলটি রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের নিয়ে ক্ষতির একটা মূল্যায়ন করবে। রাজ্যকে কতটা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, তা ঠিক করা হবে তার পরই। সেই দলই এদিন সন্ধ্যায় রাজ্যে পা রাখার কথা। আশা করা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে রাজ্যে আমফান সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের কাজ শুরু করবেন এই কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584