তাপস দাস
সবে বন্ধ উঠেছে। রাজ্যপাট বিনয় তামাংয়ের হাতে। শিলিগুড়ি ভায়া মিরিক দার্জিলিং পৌঁছেছি। মাঝে মিরিকে দুপুরে আশি টাকা প্লেট নিরামিষ ভাত । “কলকাতা হোটেলের” বাঙ্গালী মালিক বললেন পাঁচ মাস পরে রাসবিহারী থেকে গতকাল এসেছেন , আজ হোটেল খুলছেন। খরিদ্দার নেই। শেয়ার ট্যাক্সি করে মিরিক হতে দার্জিলিং। যাত্রী আমরা চারজন মাত্র। মিরিক পৌর ভবনের সামনে নজরে পড়ল পোড়া গাড়ি। এই সময়টা পাহাড়ে ভরা মরসুম। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যটক গিজগিজ করে।
কোথাও কোনখানেই গজমম-র কোন পোস্টার পতাকা নজরে পড়লো না। অবাক করার মত। সৌরিন বাজারে জি এন এল এফ এর পতাকা উড়ছে। ঘিষিং এর ছেলে মোহন ঘিষিং এখন নেতা। মিরিকেও তাই জে এন এল এফ এর ঝাণ্ডা।
দার্জিলিংয়ে বন্ধ নেই। দোকান খোলা। হোটেল খোলা। গাড়ি চলছে। কিন্তু যাত্রী নেই, খরিদ্দার নেই, পর্যটক নেই। আমরা ম্যাল লাগোয়া হোটেলে উঠেছি। চারজনের জন্য ডরমিটরি রুমের ভাড়া আটশো টাকা। অন্য হোটেলে ছয়শো টাকা পর্যন্ত বলেছিল। সন্ধের সময় ম্যালে খুব হলে গোটা দশ পনেরোজন পর্যটক। কাপড়ের দোকান থেকে কেনা খরিদের জন্য হাঁক ডাক।
গুরুং উধাও। অন্তত প্রকাশ্যে নেই। বিনয় তামাং থেকেও নেই। দার্জিলিং ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বন্ধ রাজনীতি অর্থনীতিকে এতটাই বেসামাল করেছে যে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে উন্মাদনা তলানিতে। পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে গোর্খাল্যান্ডের মোয়া ঝুলিয়ে কখনও ঘিষিং কখনও গুরুং সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এখন যেমন বিনয় তামাং অনিত থাপা। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে এক বয়স্ক ভদ্রলোক যেমন বলেই ফেললেন তামাং থাপা জুটি অনেক টাকার খেলা। গোর্খাল্যান্ড হবে না। শুধু শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ পিষে যাচ্ছে রাজনীতির কারবারি টেনিয়াদের হাতে। আপাতত দার্জিলিংয়ে গুমোট ভাব। বিমল গুরুং না থেকেও আছে। ৩০ তারিখ হোটেলের বয় জানালো আজ গুরুং আসবেই। আসেনি। ট্যাক্সি ড্রাইভার বলছে বন্ধ চাই না। নেতারা বন্ধ করে। রাস্তায় সি আর পি এফ আর বাংলা পুলিশ। কেমন যেন ঝড়ের পূর্বাভাস। সেনা সরে গলে পাহাড় অন্য রূপ নিতে পারে। অনিবার্য পরিণতি পাহাড় ভালো নেই। গুরুং দিদি তামাং এসবের মাঝে বোটানিক্যাল গার্ডেন জঙ্গলে ভরে গেছে। নোংরা আবর্জনার স্তূপে পরিণত। মিরিক লেকের ওপর কচুরিপানা ছাড়া কিছু নেই। রাস্তার ধারে এত বেশি ইমারত উঠেছে যে মেঘ দেখা যায় না। কংক্রিটের শহর। সিংমারিতে পোড়া পুলিশের গাড়ি। রাস্তায় ছাই হয়ে পড়ে আছে বিমল গুরুংয়ের ছেলের অডি গাড়ি। ফেরার পথে কাশিয়াং স্টেশনে প্রথম দেখলাম গজমম-র পতাকা। তবে গুরং না অনিত থাপা। আর এক রাজা। এখানে শ্রমিকের দাবি নিয়ে আন্দোলন নেই, বেকারের চাকরি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। ঘুমিয়ে থাকা উপত্যকা। যে কোন দিন জেগে উঠতে পারে। পাহাড় থেকে সেনা সরলেই অনিবার্য ভাবে অন্য পাহাড়। কারণ বয়স্ক ভদ্রলোক গল্পের ছলে বলে ফেলেছিলেন বিনয় তামাং গোর্খাল্যান্ড দাবীর সাথে বেইমানি করেছে। বিমল গুরুংয়ের সাথে বেইমানি করেছে। ফিরে আসার পথে কানে ভাসছে ” দাদা সাইট সিন, ট্যাক্সি লাগবে না কি?” একজন নয় একসাথে পাঁচজন ড্রাইভার।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584