প্রশাসনের সাথে আমজনতার মেলবন্ধন ঘটাতে অরাজনৈতিক উদ্যোগ ‘বাপ কে বলো’

0
118

আলিনুর মন্ডল, বসিরহাটঃ

‘দিদিকে বলো’-এর পর এবার ‘বাপ কে বলো’। না এটা কোনও রাজনৈতিক দলের জনসংযোগ কর্মসূচি নয়। কিন্তু সরকারি অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার মন্ত্র এই ‘বাপ কে বলো’। জনা ৩৫-৪০ জন যুবক-যুবতী ৯ জুন ‘বাপ কে বলো’ ফেসবুক পেজ তৈরি করে ফেলেছেন। এখানে কোনও রাজনীতির রং নেই বলেই উদ্যোক্তাদের দাবি। তবে এই ক’দিনেই রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে ‘বাপ কে বলো’।

BaapKeBolo | newsfront.co
ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত বহু মানুষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাছাড়া অন্যান্য সমস্যার কথাও তাদের জানাচ্ছেন অনেকে। রীতিমতোন প্রশান্ত কিশোরের “দিদিকে বলো” কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে “বাপ কে বলো”।

ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মূলত লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৮টি আসনে জয় পাওয়ায় অশনি সংকেত দেখে তৃণমূল। ‘দিদিকে বলো’-র মাধ্যমে রাজ্য ব্যাপী জনসংযোগের কর্মসূচি নেয় ঘাসফুল শিবির। বহু মানুষ সেখানে যোগাযোগও করে। এরপর গেরুয়া শিবির পাল্টা দিলীপ ঘোষের চা চক্র শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ আমফানের ত্রাণ দ্রুত পাঠাতে গিয়ে দুর্নীতির কথা কবুল মমতার! ঘোষণা ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের

তারপর বিজেপি কর্মসূচি নেয় ‘আর নয় অন্যায়’। এসব রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ। কিন্তু এত প্রচেষ্টা সত্বেও আমফানে স্বজনপোষণ ও লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এর আগে লোকচক্ষুর আড়ালে কাজ করলেও এবার সরাসরি ফেসবুক পেজ খুলেই মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে টিম ‘বাপ কে বলো’।গবেষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, নার্স, শিক্ষক, ছাত্র সহ নানা পেশার লোকজন রয়েছে এই টিমে।

পিএইচডি গবেষক সাগির হোসেন, অপ্টোমেট্রির ছাত্র মুহাম্মাদ ওবাইদুল্লাহ্ বলেন, “এখানে ‘বাপ কে বলো’ মানে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলো। অনেক ক্ষেত্রে নীচুতলায় সরকারি দফতরে ঘুঘুর বাসার জন্য সাধারণের কাজ আটকে থাকে। বঞ্চনার শিকার হয় মানুষ। আমরা চাই, জণগন নিজেদের অধিকার নিজেরাই বুঝে নিক। আমরা নানা ভাবে যোগাযোগ করিয়ে দেব। সাহায্য় করব। সরকারি সাহায্য় না পেলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানান। ফোন করুন, মেসেজ করুন। প্রয়োজনে যে কোনও আধিকারিকের মোবাইল নম্বরও যোগাড় করে দেব। মানুষ তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার বুঝে নেবেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা পাশে থাকব।”

আরও পড়ুনঃ করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন অশোক ভট্টাচার্য

তাঁরা জানিয়ে দেয়, ‘বাপ কে বলো’-তে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। এমনকী বিদেশে সমস্যায় পড়লেও ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই টিম। মুর্শিদাবাদের শেখ আলাউদ্দিন রিয়াধে এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হওয়ার পর সেখানে কোনও হাসাপাতাল ভর্তি নিচ্ছিল না। তারপর সে ‘বাপ কে বলো’ পেজে বিষয়টি জানায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা উদ্য়োগ নেয়। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা হয়।

সাগির, ওবাইদুল্লাহ বলেন, “এর আগে পিছনে থেকেই কাজ করছিলাম। এখন সরাসরি পেজ তৈরি করেই মানুষের সমস্যার সমাধান করতে চাই। এমনও দেখা গিয়েছে আমরা কাজ করে দিয়েছি কোনও স্থানীয় নেতা তাঁর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাই এখন সরাসরি মানুষের দরবারে চলে এসেছি। রাস্তা খারাপ, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, বিদ্যুত দফতরে সমস্যা,মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা, আধার কার্ড, সরকারি প্রকল্প, হাসপাতালে অব্য়বস্থা সহ যে কোনও বিষয়ে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘বাপ কে বলো।’ আমরা মানুষের পাশে থাকার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতকোত্তর পড়ার পর সেখানেই বিএড করছেন উত্তর ২৪ পরগণার মাটিয়া থানার রাজাপুর গ্রামের পিঙ্কি খাতুন। তাঁর মেজো বোন ফিলোজফি অনার্স নিয়ে পড়ছে যাবদপুরেই। ছোট বোন পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। পাঁচজনের সংসারে বাবা সফিকুল মন্ডল একমাত্র রোজগেরে। জনমজুরের কাজ করে।

পিঙ্কির কথায়, “সাগির হোসেনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর যাবতীয় সরকারি সাহায্য় পেয়েছি। দাদারাই উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমিও বিডিও অফিসে গিয়েছি। জানেন, ঝড়ের পর একটা ত্রিপলও জোটেনি।” আমফান ঘূর্ণঝড়ে পিঙ্কিদের বাড়ি ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। উড়ে গিয়েছিল টালির চাল। দীর্ঘ দিন কাজ নেই তাঁর বাবার।

হাসনাবাদের পাটলিখানপুরের খলিসাখালির জগন্ময় ঘোষ সহ ১৭টি পরিবার বাড়ি ছেড়ে আমফানের ঝড়ের পর এখন রয়েছেন নদী বাঁধের ওপর। কোনও সাহায্য় না পেয়ে সরাসরি বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন। সেখান থেকেই কিছু ত্রিপল জোটে। টিম ‘বাপ কে বলো’ সদস্যদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন বলে জানালেন জগন্ময়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীর শিকারিপাড়ার মিনিরা লস্করের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমেই যোগাযোগ। মিনারা বলেন, “আমফানের পর ত্রিপল ও খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সাগির, ওবাইদুল্লাহ্। গ্রামের কেউই এখনও বাড়ির ক্ষতিপূরণ পাননি।” এখন মিনিরাদের ভরসা এই ‘বাপ কে বলো’ টিম।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here