নিজস্ব প্রতিবেদন, নিউজ ফ্রন্টঃ
‘ব্ল্যাকহোল’ বা কৃষ্ণগহ্বরের ভবিষ্যতের চেহারা ঠিক কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে একটি পূর্বাভাস দেন প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। প্রায় ৫০ বছর পরে হকিংয়ের সেই পূর্বাভাসকে সঠিক প্রমাণ করলেন আমেরিকার বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজির ( MIT) জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল।
ইউনিভার্স বা ব্রহ্মাণ্ডের সুদূরতম কোন এক প্রান্ত থেকে পৃথিবীতে পৌঁছনো মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে হকিংয়ের পূর্বাভাস প্রমাণ করা সম্ভব হলো। প্রমাণ হলো কোনও ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যতের চেহারা ঠিক কেমন হতে পারে তা নিয়ে হকিংয়ের পূর্বাভাসে কোনও ত্রুটি ছিল না।
বিংশ শতাব্দীর সাতের দশকের একেবারে শুরুর দিকে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেন যে ব্ল্যাকহোলের পরিসর বা আয়তন সর্বদা উত্তরোত্তর বাড়ে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কখনো কমতে পারেনা। বস্তুত এটিই হকিংয়ের ‘ব্ল্যাকহোল এরিয়া থিয়োরেম’। সেসময় অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই এ তত্ত্ব সহজে মানতে চাননি, অবশেষে প্রায় ৫০ বছর পরে হকিং যে একেবারে সঠিক ছিলেন তা প্রমাণিত হলো এমআইটির গবেষণায়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনও পুকুরে ঢিল ছুঁড়লে জলে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় আর তা ধীরে ধীরে ক্রমশ বড় আকার নিয়ে যেমন পাড়ে পৌঁছয়, ঠিক তেমন ভাবেই, ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলেও তৈরি হয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যা পৃথিবীতে পৌঁছতে সময় লেগে যায় কয়েকশো কোটি বছর। আর তা বিশ্লেষণ করেই জানা ওই সুদূর অতীতে ঠিক কোন মহাজাগতিক ঘটনা ঘটেছিল।
হকিং এই ব্ল্যাকহোলকে অভিহিত করেছিলেন ‘রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোল’ বলে। কিন্তু কেন রাক্ষুসে? ব্ল্যাক হোলের চেহারার উদাহরণ দিতে গেলে বলতে হয় তা কিছুটা খাবারের থালার মতো, আর থালার চারপাশের যে উঁচু অংশ সেটি হলো ‘ ইভেন্ট হরাইজন’। কোনও ব্ল্যাক হোলের আশপাশে থাকা গ্যাসের মেঘ বা নক্ষত্ররা এই ইভেন্ট হরাইজনের সীমানা পেরিয়ে একবার যদি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পড়ে, তাহলে অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টান অতিক্রম করে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি বেরিয়ে আসতে পারে না আলোও। তাই একে বলা হয় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। আর ব্ল্যাকহোলের মধ্যে যা কিছু ঢুকে পড়ে তা’তো থেকেই যায় গহ্বরে ফলে ক্রমশ বাড়ে তার আকার ও আয়তন। স্টিফেন হকিংয়ের আগে কোন কোন বিজ্ঞানী মনে করতেন যে ব্ল্যাকহোলের মুখে যা কিছু মহাজাগতিক বস্তু এসে পড়ে তা একধরনের ঘূর্ণির সৃষ্টি করে ব্ল্যাকহোলের দেহে যার ফলে তা ছোট হতে পারে আয়তনে। কিন্তু গত শতকে সে তত্ত্ব খারিজ করে স্টিফেন হকিং-ই প্রথম বলেন যে ক্রমান্বয়ে মহাজগতিক বস্তুগুলি গহ্বরে জমতে থাকায় উত্তরোত্তর আয়তন বৃদ্ধি হয় এই রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোলের, তা কিছুতেই কমতে পারেনা।
৬ বছর আগে আমেরিকার ‘লাইগো’ অবজারভেটরিতে প্রথম ধরা পড়ে কোনও মহাকর্ষীয় তরঙ্গের বার্তা। তা বিশ্লেষণ করে এমআইটির গবেষক দল জানতে পারেন যে কয়েকশো কোটি বছর আগে দুটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং তার ফলে দু’টি ব্ল্যাক হোল মিলে একটিতে পরিণত হয়। সেই সময় ব্রহ্মাণ্ডে যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয় কয়েকশো কোটি বছর পর সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ৬ বছর আগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছয়।
এমআইটি-র গবেষকরা দেখেছেন, ওই সংঘর্ষের পর নতুন যে ব্ল্যাক হোলটি তৈরি হয় তার আয়তন আগের দু’টি ব্ল্যাক হোলের চেয়ে অনেক বড়। এতেই প্রমাণ হল, ৫০ বছর আগে হকিংয়ের তত্ত্ব ছিল একেবারেই সঠিক। একই সঙ্গে এও বলছেন বিজ্ঞানীরা যে ,এই ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আরও বেশি বিশৃঙ্খলার দিকে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘এনট্রপি’।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584