করোনাতেই মৃত্যু কি না জানতে হাসপাতালগুলিকে ৩৪দফা তথ্য পূরণের নির্দেশ স্বাস্থ্য ভবনের

0
52

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

রাজ্যে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা যাই থাকুক, মৃত্যু নিয়ে যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়, তার জন্য সতর্ক প্রশাসন। সেই কারণেই এখন থেকে কোন করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলে তার মৃত্যু করোনা ভাইরাসের জন্যই হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ৩৪ দফা তথ্য পূরণের নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য ভবন।

health department | newsfront.co
প্রতীকী চিত্র

এই ব্যাপারে রোগীর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে জানতে ও হাসপাতাল-নার্সিংহোমের সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখতে রাজ্যের তরফে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটিও তৈরি হয়েছে। তবে এই ৩৪ দফা মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানার জন্য না কি মৃত্যুসংখ্যা চাপা দেওয়ার জন্য, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।

আরও পড়ুনঃ ৯ মিনিটে পুড়ল ৬ কোটি টাকার বাজি, ছয়গুণ দূষণ বাড়াল শহর কলকাতার

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা জানার জন্য রোগীর সংক্রমণের উপসর্গ, তার রোগের খতিয়ান, কী কী শারীরিক সমস্যা ছিল, অতীতের রোগের তালিকা ইত্যাদি ৩৪টি বিষয়ে অনুসন্ধান করে ফর্ম পূরণ করতে হবে সেই রিপোর্ট জমা করতে হবে স্বাস্থ্য দফতরে। পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটি তা দেখার পরেই নিশ্চিত করা যাবে, ওই রোগীর মৃত্যুর কারণ করোনার সংক্রমণে না কি অন্য কোন কারণে। বেশ কয়েকটি পর্যায়ে মৃত রোগীর তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।

প্রথম পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে: রোগীর নাম, পরিচয়, ঠিকানা ছাড়াও সাম্প্রতিক কালে তাঁর কোনও বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড আছে কি না। চিকিৎসার সময় রোগীর হাইপারটেনশন বা ডায়াবেটিস ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।কিডনির ক্রনিক রোগ, হার্টের সমস্যা অথবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ছিল কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন।মৃতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা ছিল সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখতে হবে, রোগীর শরীরের তাপমাত্রা, জ্বর ছিল কি না এবং থাকলেও কতটা সময় ধরে ছিল। জ্বরের কারণ কি সংক্রমণ, নাকি আরও অন্য কোনও কারণ? সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ ছিল কি না? রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন কি না। শ্বাসকষ্ট তীব্র বা মৃদু সেটাও স্পষ্ট করতে হবে।

তৃতীয় পর্যায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২৪টি বিষয়ে খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে হবে হাসপাতালগুলিকে। সেগুলি হল, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বা আর্টেরিয়াল অক্সিজেন স্যাচুরেশন, রক্তের পরীক্ষা, এবিজি (ABG) টেস্ট, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) অর্থাৎ রক্তে কী পরিমাণ হিমাটোক্রিট, হিমোগ্লোবিন, আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লেটলেটস রয়েছে। এছাড়াওসোডিয়াম, পটাসিয়াম টেস্ট লিভার ফাংশন, ইউরিয়া টেস্ট, মূত্রনালীর সংক্রমণ ছিল কিনা, ক্রিয়েটিনিন ও ব্লাড-সুগার টেস্ট সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন টেস্ট (CRP ) বাধ্যতামূলক।

তাছাড়া প্রো-ক্যালসিটেশন টেস্ট, চেস্ট-এক্স রে, ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাফি, লোয়ার অ্যাবডোমেন আলট্রাসোনোগ্রাফি (USG), থোরাক্সের সিটি স্ক্যান অতীতে রোগীর ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া ছিল কিনা তারও পরীক্ষা জরুরি। সেই সঙ্গেই স্ক্রাব-টাইফাস টেস্ট জরুরি রক্তে এনজাইমের মাত্রা কতটা জানার জন্য ক্রিয়েটিন ফসফোকাইনেজ টেস্টও করতে হবে।

রাজ্যের তরফে ঠিক করে দেওয়া যে ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা হয়েছে, সেই কমিটিতে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।

বাকি তিন সদস্য হলেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিও থোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সায়েন্সের প্রধান চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায়, পিজি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের প্রধান চিকিৎসক আশুতোষ ঘোষ এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল।

স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসকদের অনেকেই দাবি করেছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যুর সংখ্যাকে চাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে এতগুলি জটিল পরীক্ষার পর্যায় বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। একজন রোগীর মৃত্যুর পর এতগুলি তথ্য পূরণ করা কোনও হাসপাতালের পক্ষেই সম্ভব নয়।

কারণ কিছু ক্ষেত্রে রোগীর পরিবারের লোকজনও সম্পূর্ণ তথ্য থাকবে না। তাই বেশ কয়েকটি দফা বাদ চলে যেতেই পারে। আর অন্যান্য দফা গুলি পূরণ করা হলেও কোনও না কোনওভাবে তথ্য যাচাই করে সেটি অন্য কারণে মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হবে।

কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। সেক্ষেত্রে হৃদরোগে মৃত্যু হলেও মৃত্যুর অনুঘটক হিসেবে কাজ করে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসই। কিন্তু রাজ্যের বেঁধে ৩৪ দফা নির্দেশিকা অনুযায়ী এই তথ্য কোনওদিন সামনে আনা সম্ভব নয়।

এক স্বাস্থ্য কর্তার মতে, “সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করেই সিদ্ধান্ত নেবে যে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে। যাতে মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনও সংশয় না থাকে, সেই কারণেই এত নিখুঁত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন।”

তাঁর কথায়, করোনা আক্রান্ত রোগীর যে কোনও কারণে মৃত্যু হতেই পারে। কিন্তু অযথা যে কোনও মৃত্যুকে করোনা ভাইরাসের জেরে মৃত্যু বললে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। সেই কারণেই এই কঠোর নির্দেশিকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here