৩০০ বছরের প্রাচীনতম কাশিমবাজারের পাতালেশ্বর শিব মন্দিরের বর্তমান ও অতীত

0
743

শুভব্রত সরকার, মুর্শিদাবাদঃ

মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে কাশিমবাজার এক সুপ্রসিদ্ধ নাম। একসময় ফরাসি, ডাচ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সকলেই এখানে বাণিজ্য কুঠি গড়ে তুলেছিল। হুগলি, পদ্মা ও জলঙ্গীর মাঝখানে অবস্থিত ত্রিভুজাকার শহরটিকে অনেকে কাশিমবাজার বলে বর্ণনা করেছেন। এই কাশিমবাজার প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের অনেক সাক্ষ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শোনা যায় ১৭ দশকে ভাগিরথী নদী তার গতিপথ কিছুটা পরিবর্তনে করে কাশিমবাজারের পাশে দিয়ে ফরাসডাঙ্গা পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল কাটিগঙ্গা।

Cossimbazar pataleswar shiv mandir
কাশিমবাজারের পাতালেশ্বর শিব মন্দির। নিজস্ব চিত্র

কথিত আছে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে কাটিগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছিল পাতালেশ্বর শিব মন্দির। যেটা যেকোন মুর্শিদাবাদের এক অন্যতম শিব মন্দির। হিন্দু পুরান অনুসারে এখানকার শিবলিঙ্গকে বলা হয় স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ। এই স্বয়ম্ভু কথার অর্থ যে পাতাল থেকে একাই উঠে এসেছে। আসল মন্দিরটি ছিল ৬৪ স্কোয়ার ফুট জায়গার উপরে। ২০০৬ সালে মন্দিরটির উন্নতির জন্য পাতালেশ্বর মন্দির কমিটি তৈরি করা হয়।

Cossimbazar pataleswar shiv mandir
নিজস্ব চিত্র

প্রাথমিক অবস্থায় এই অঞ্চলের আদিবাসীরা ও ব্যবসায়ীরা মন্দিরটির উন্নতিকল্পে চার লক্ষ টাকা দান করেন। পরবর্তীকালে মন্দিরটিকে একটু বৃহৎ আকার দেওয়া হয়।

এই কাটিগঙ্গাতে প্রতিবছর অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। এই মন্দিরের উত্তর দিকে রয়েছে সতীদাহ ঘাট। যেখানে রাজা রামমোহন রায়ের মতো ব্যাক্তিত্বরা এসেছিলেন। এই পাতালেশ্বর মন্দিরের নিকটে রয়েছে ১০০ বছরের পুরোনো পাথুরেঘাটা শিব। যেটি বাঁধাঘাট নামে সুপরিচিত। এই সতীদাহ ঘাট ও বাঁধাঘাটকে ব্যাসকাশি বলা হয়। কথিত আছে এই অঞ্চলে ১০৮ টি শিব মন্দির রয়েছে।

Shiv mandir
নিজস্ব চিত্র

কথিত আছে থমাস দানিয়েল নামে একজন চিত্রকার বাঁধাঘাটে একটি দূর্গা অঙ্কন করেছিলেন যেটি জায়গা পেয়েছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।

এই মন্দিরের প্রবেশ পথে আমরা দেখতে পাবো ৪০ ফুট উচ্চতার একটি শিবমূর্তি। মন্দিরের প্রধান দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে এক সুদৃশ্য বাগান। এই বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যেতে পারবো বাবার মন্দিরে। মন্দিরটি অনেক পুরোনো হলেও সেটিকে পরিমার্জন করে দেওয়া হয়েছে নতুন রূপ। মন্দিরের সামনেই এক প্রাচীন বটবৃক্ষ ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে।

আরও পড়ুনঃ কাশিমবাজার রায় প্যালেস… ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন

মূলমন্দিরের বামদিকে রয়েছে মনসা মন্দির ও ডানদিকে দেখতে পাবো গনেশ মন্দির। এই মনসা মন্দিরের ঠিক পেছনে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষ বহনকারী সুপ্রাচীন সতীদাহ ঘাট। সমগ্র মন্দিরটি কংক্রিট ভাবে ঘেরা রয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কাটিগঙ্গা। কাটিগঙ্গার পার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বসার জায়গা। এই জায়গা আপনাকে এনে দেবে চিরশান্তি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সহায়তায় ভক্তরা পেয়ে থাকেন বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা।

আরও পড়ুনঃ মুর্শিদাবাদে ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ও মহম্মদ সেলিম

প্রতিবছর শিবরাত্রিতে এখানে সাত দিন ব্যাপী বিরাট মেলা বসে, হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষ দিন হাজার হাজার মানুষের প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। এখানে প্রতিদিন পুজো হয়। বাবার কৃপা পেতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এই ঐতিহ্যবাহি শিবমন্দির দর্শনে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here