কাশিমবাজার রায় প্যালেস… ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন

0
660

শুভব্রত সরকার, মুর্শিদাবাদঃ

মুর্শিদাবাদ একদা ছিল বাংলা, বিহার, ওড়িশার রাজধানী। মুর্শিদাবাদের আগের নাম ছিল মুকসুদাবাদ। ১৭০৪ সালে নবাব মুর্শিদকুলি খান রাজস্ব আদায়ের স্থান পরিবর্তন করে ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন মুকসুদাবাদে।

Cossimbazar
নিজস্ব চিত্র

কথিত আছে দিল্লি মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের অনুমতি পেয়ে মুকসুদাবাদের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মুর্শিদাবাদ। এই মুর্শিদাবাদের এক ঐতিহাসিক শহর কাশিমবাজার। কথিত আছে কৈসম খানের নাম অনুসারে এই অঞ্চলটির নাম রাখা হয় কাশিমবাজার।

Historical palace
মুর্শিদাবাদের রায় প্যালেস। নিজস্ব চিত্র

১৭ শতকের আগে এই এলাকার ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মুর্শিদাবাদ প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই এই শহরটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ঐতিহাসিকরা বলেন, ইউরোপীয়রাই সর্বপ্রথম এখানেই বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল। সপ্তগ্রাম পতনের পর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ইংরেজ, ডাচ, ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সকলেই এখানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। হাজার ১৯ শতকের গোড়ার দিকে হুগলি নদীকে কাশিমবাজার নদী বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। ইতিহাস বলে এই শহরটি ছিল মহারাজদের আবাসস্থল।

Cossimbazar Mahal
নিজস্ব চিত্র

অবিভক্ত বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জমিদার পরিবার গুলির মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাশিমবাজার রায় পরিবারের ৩০ বিঘা বসতবাড়ি। যা আজ কাশিমবাজার রাজবাড়ি নামে পরিচিত এই রাজবাড়ী আজও ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী বহন করে চলেছে প্রায় আড়াইশো বছর পরেও এই রায় পরিবারের রাজবাড়ী আজও আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইতিহাসের কথা। ইতিহাস বলে ১৯২৫ সালে রাজ্যপালের দায়িত্ব পান কমলা রঞ্জন রায় একদা কাশিমবাজার ছিল ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত মহারাজ কৃষ্ণকান্ত নন্দীর তৈরি বৃহত্তম বাজার পরবর্তীকালে এই রেশম বাজারের হাল ধরেছিলেন দীনবন্ধু রায়।

Temple
নিজস্ব চিত্র

১৭৭০ সালে দুর্ভিক্ষের বিপর্যয় বাংলার রেশম শিল্প গভীর সংকটে পড়লে দিনবন্ধু রায়ের পুত্র জগবন্ধু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি নেন পরবর্তীকালে জগবন্ধু এক বিশাল জমিদারি কেনেন পূর্ববঙ্গের রংপুর ও সরাইল থেকে এবং এক নতুন যুগের সূচনা হয় রায় পরিবারে রাজা আশুতোষ নাথ পর্যন্ত রায় পরিবারের ঐতিহ্য অম্লান ছিল।

Gopal thakur

রায় পরিবারের সমবেত উদ্যোগে আজও সুদৃশ্য প্রাসাদটি স্বমহিমায় অবস্থান করছে। প্রাথমিক সংস্কারের পর রাজবাড়িটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে কাশিমবাজার রেলওয়ে স্টেশন এর নিকটবর্তী এই রাজপ্রাসাদটি আজ অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রাসাদটির সম্যকভাবে রয়েছে এক সুদৃশ্য বাগান প্রাসাদটির মূল দরজা দিয়ে যদি আমরা ভেতরে প্রবেশ করি তাহলে প্রথমেই দেখতে পাবো নাচঘর, তার পাশে রয়েছে শয়ন কক্ষ সেখান থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবো সভাগৃহ। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী রয়েছে তৎকালীন ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল খাট টানা পাখা হুঁকো রাজাদের ব্যবহৃত জামাকাপড় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী নানা মূর্তি। সেখান থেকে বেরিয়ে পিছনের দিকে গেলে দেখতে পাব টেনিস কোর্ট তার পাশেই রয়েছে মহিলাদের অন্দরমহল সেখান থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাব সুদৃশ্য রাধাগোবিন্দ মন্দির রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে দুর্গা মন্দির।

Cossimbazar Roy Palace
কাশিমবাজার দুর্গা মন্দির। নিজস্ব চিত্র

এই দুর্গা মন্দিরের দুর্গাপুজো আজও ইতিহাসের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে দুর্গা মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে শিব মন্দির ও লক্ষী ঘর। আজও সেই রাজবাড়ী দেখতে গেলে মনে করিয়ে দিবে আমাদের ইতিহাসের পাতাকে। এই সুবিশাল ঐতিহ্য বহনকারী রাজবাড়ীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী জানালেন রাজবাড়ী দর্শনের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা।

Cossimbazar ray palace
কাশিমবাজার রায় প্যালেস। নিজস্ব চিত্র

জানা গেল, এই রাজ বাড়ির ভেতরে রয়েছে সুদৃশ্য ঐতিহ্য বহনকারী গেস্ট হাউস তার এক পাশে রয়েছে বাঙালির রসনা তৃপ্তির জন্য ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্ট পাশাপাশি আপনি যদি রাজকীয় পরিবেশে কোন অনুষ্ঠান করতে চান রয়েছে তার ব্যবস্থা আরও জানা গেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থাবা বসিয়েছে পর্যটকদের আনাগোনাতে দূর থেকে ইতিহাসের ঐতিহ্য দেখতে আসা পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাতেগোনা যদি আপনারা রাজকীয় পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাতে চান এবং ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করতে চান অবশ্যই ঘুরে যান মুর্শিদাবাদের রাই প্যালেস।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here