ওয়েবডেস্ক, নিউজফ্রন্টঃ
কেবলমাত্র আমেরিকার স্বদেশি শ্রমিক ছাড়া কোনো রকম প্রবাসী শ্রমিককে তার দেশে থাকা এবং অর্থ উপার্জনের আর কোনো রকম অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে সরাসরি শেষ রাতের টুইট করে জানিয়ে দিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে মুদ্রাস্ফিতী এক ধাক্কায় তলানিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে পরবর্তী বছরেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় আমেরিকার অর্থনীতি, যে কারনে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে চরম দুরাবস্থার শিকার হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা নাগারের পরিবার সহ বহু প্রবাসী ভারতীয়। প্রায় দশ বছর ধরে পরিবার পরিজন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাসরত আমেরিকার মাটিতে। বর্তমানে যাদের একটি বছর পাঁচের কন্যাসন্তানের জন্ম হয় সেখানেই। যারা এই মুহূর্তে অপেক্ষারত কেবলই একটি ‘গ্রিন কার্ড’-এর, যা না পেলে আমেরিকার বাসভূমি স্থায়ীভাবে ছেড়ে চলে আসতে হবে বছর ৩৯-র সফটওয়্যার ডেভলপার প্রিয়াঙ্কার পরিবারকে ভারতের মাটিতে।
সোমবার এবিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সেদেশে স্থায়ী বসবাসের আবেদন জানালে তিনি মঙ্গলবার রাতের ট্যুইট -এ সরাসরি ভাবে তা নাকজ করে দেন। তিনি জানান, তিনি সে দেশে উন্নতি সাধন করতে তৎপর। তাই এসিদ্ধান্ত মানতেই হবে। ৬০দিনের বেশী কোনো ভাবেই প্রবাসীদের তিনি তার দেশে রাখতে পারবেন না বলে মঙ্গলবার টুইটে সরাসরি জানিয়ে দেন ট্রাম্প।
অন্যদিকে বছর ৩৪-র আটলান্টা সুবুর্ব -র বাসিন্দা সফটওয়্যার ডেভলপার হারকমল সিং খুরালা জানান, প্রতি রাতে ঘুমতে গিয়েও দুঃস্বপ্ন দেখেছি যদি রাষ্ট্রপতি এদেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে নিজের দেশে গিয়ে সহজে কাজ পাওয়াও যথেষ্ট কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তার দুই কন্যা সন্তান যারা বর্তমানে দুই সন্তান সে দেশেরই স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু সে দেশের ভিসা কর্মসূচীর শুরু হয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিবার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েই তাকে ফিরে আসতে হবে ভারতের মাটিতে।
অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি এমনই জানান, প্রত্যেক বছর প্রতি দেশের মতো ইণ্ডিয়া থেকেও বহু নাগরিক এখানে আসেন তাদের কাজ ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এবং তারা সে দেশের নাগরিকত্ব লাভের উদ্দেশ্য পরবর্তীতে ‘গ্রীন কার্ড’ -র ও আবেদন করেন। তাই প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন -র ওপরে আমেরিকান ডলার যা তাদের মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে। তাই এই দুঃসময়ে তিনি এর প্রতিকার করতে চান ভারতীয় প্রবাসী শ্রমিকদের ছাটাই করেই।
আরও পড়ুনঃ ফের এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি-ই
অবশ্য, তিনি স্বীকার করেন যে, এক্ষেত্রে হয়তো বহু বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ কর্মীকে হারাতে হবে। কিন্তু আমেরিকার অর্থনৈতিক হাল ফেরানো এবং সে দেশের মানুষদের স্বার্থে তার এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তিনি জানান প্রায় ৫০ বছর ধরেও বহু প্রবাসী যারা সে দেশে ব্যাবসা সূত্রে থেকে পরবর্তীতে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। সেদেশে অ্যাপেল গুগুল ও ফেসবুকের মতো যথেষ্ট নামী এবং প্রবাসী সংস্থাও রয়েছে।
‘আমি কোনো ভাবেই এটিকে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে তা বলতে পারি না, কারণ এটি প্রবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত একটি ঘটনা ‘ – বলে টুইটের মাধ্যমে জানান আইনজীবী নন্দিনী নায়ার ট্রাম্পকে। প্রবাসী উচ্ছেদের ভিত্তিতে। যা কিনা রীতিমতো তাদের জীবনকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
কিন্তু, ট্রাম্প এবিষয়ে কোনো কথায় তেমন কর্ণপাত না করে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি এই মুহূর্তে আমেরিকার কর্মচারীদের সর্বচ্চো সুরক্ষা দিতে মরিয়া। এমনকি অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা ফেরবার পরেও ভারতীয় কর্মচারীদের আমেরিকানদের সাথে কোনো রকম প্রতিযোগিতায় যাওয়া ঠিক হবে না বলে তিনি আরও কিছু ঘৃতাহুতি করেন আমেরিকানদের মানসিকতাকে। এমনকি, এখনও প্রায় ৮ লাখেরও বেশি মানুষ গ্রীন কার্ডের অপেক্ষায় করছেন বলে তিনি জানান।
এই ‘ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট’ –র জেরে যখন জর্জ্জরিত প্রবাসী ভারতীয়র দল বর্তমানে প্রবাসীদের সকলকেই যখন নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে ফিরে আসতেই এসিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হবার পর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়র সোমক গোস্বামী জানান ২০১১-তে তিনি ও সেদেশে গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন জানালে তা তার কাছে এসে পৌঁছায়নি। কিন্তু , ২০১৭ সালে তার বন্ধুরা সেই আবেদন জানালে তাদের তা খারিজ হয়ে যায়। তাই এমুহূর্তে দাড়িয়ে তিনি জানান, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ভারতীয়’।
(তথ্যসূত্রঃ নিউইয়র্ক টাইমস)
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584