শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
লকডাউনে যেমন বহু মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ঠিক তেমনই সুযোগ বুঝে পরিষেবা দিতে যেমন খুশি দর হাঁকতেও শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। শুক্রবার রাতে এমনই অভিজ্ঞতা হল হুগলির ঝিকিরার বাসিন্দা শ্যামল পালের। পার্ক সার্কাস থেকে কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল কলেজে ৫.৪ কিলোমিটার যেতে ৯ হাজার টাকা চেয়ে বসলেন এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক।
দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে করোনা আক্রান্ত ৯ মাসের শিশু এবং সাড়ে ৯ বছরের বালককে তাদের মায়েদের সঙ্গে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠল। শেষে এক চিকিৎসকের মধ্যস্থতায় রোগীকে শেষ পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেন অন্য আরেক চিকিৎসক।
বস্তুত, রাজ্যে উর্ধ্বগামী করোনা সংক্রমণে কলকাতার অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। সেই কারণে রাজ্যে করোনা বেডের মধ্যে ৪০ শতাংশ করোনা বেড ভর্তি হলেও ভর্তি হয়ে গিয়েছে বেশিরভাগ কলকাতার হাসপাতালগুলিই। কিন্তু জেলা থেকেও কলকাতার হাসপাতালে ভাল পরিষেবা পেতে ছুটে আসছেন বহু মানুষ। এমনভাবেই শুক্রবার হুগলির ঝিকিরার বাসিন্দা শ্যামল পাল এসেছিলেন কলকাতায়। তিনি জানান, তার ছেলে সাড়ে ৯ বছরের শুভজিতের গত সপ্তাহের শেষের দিকে শ্বাসকষ্ট ও পেট ব্যথা শুরু হয়। সোমবার পার্ক সার্কাসে একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ সঙ্কটজনক সোমেন মিত্র, ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত
তার মধ্যেই কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। অন্য শিশুদের সংক্রমণ এড়াতে রাতেই ওই বালকের পরিবার সহ করোনা পজিটিভ আসা ৯ মাসের এক শিশুকেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে এই রোগীর পরিবারকে যোগাযোগও করিয়ে দেন।
শ্যামলবাবু জানান, রাত হয়ে পার্ক সার্কাসের হাসপাতালের মধ্যে একটি অ্যাম্বুল্যান্সেই তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু তার চালক যেতে অস্বীকার করেন। এর মধ্যেই রোগী নিয়ে ওই হাসপাতালে উপস্থিত হয় অন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স। শ্যামলের মতোই অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজছিলেন অন্য শিশুটির বাবাও। ভাড়ার কথা না বলেই তারা দুই পরিবারই অ্যাম্বুল্যান্সে উঠে পড়েন।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও শুনশান কলকাতা, নাকা চেকিং-ড্রোনে নজরদারি পুলিশের
কিন্তু তারপরেই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের কথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শ্যামলবাবুর। তিনি জানান,‘ প্রথমে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক প্রতি রোগী পিছু ৬ হাজার টাকা চান। অর্থাৎ দুই রোগী মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা। তিনি ও ওই শিশুটির বাবা সঙ্গে সঙ্গে বলেন যে অত টাকা দিতে পারবেন না। অন্য শিশুর বাবাও বলেন ওই বিশাল পরিমাণ টাকা তিনিও দিতে পারবেন না।
অ্যাম্বুল্যান্স চালক দরাদরি করে দু’জন মিলিয়ে ৯ হাজার টাকা দিতেই হবে বলে দাবি করেন। কিন্তু তাতে শ্যামলরা রাজি না হওয়ায় রীতিমতো গালিগালাজ করে দুই নাবালক রোগী এবং তাদের মায়েদের হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেন তিনি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট দল থাকলেও কেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক এরকম ভাড়া চাইছেন, তার কোনও উত্তর মেলেনি।
এদিকে চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে হাসপাতালের কর্মীরা খবর দেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক। তিনি তখন উদ্যোগী হয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে দেন। মোশারফ আলি গাজি সেই অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের আবার কোভিড রোগী পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই কিট না থাকলেও মাত্র ২ হাজার টাকার বিনিময়ে রোগীদের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেন তিনি। রোগীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কেন এই দুর্যোগের সময় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এরকম জুলুমবাজি করছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শ্যামল বাবু এবং তার সঙ্গে থাকা ওই শিশুটির পরিবার। একইসঙ্গে উদ্যোগী চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584