নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এবিসি নিউজ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া কাঠগড়ায় তুলেছে প্রধানমন্ত্রী মোদিকেই।ভারতের শোচনীয় করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সরাসরি সমালোচনার মুখে পড়লো মোদি সরকার।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিগত এক সপ্তাহ জুড়ে শুধু ভারতের চর্চা। শনিবার দেশের দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে তিন লক্ষের কাছে পৌঁছেছে। যা গোটা বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ এবং অতিমারী শুরুর পর থেকে এই হারে সংক্রমন প্রথমবার হল।
শুধু সংখ্যাই নয়, এই মুহূর্তে ভারত পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা দিতেও কার্যত ব্যর্থ। বহু রাজ্যে হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেনের অভাব এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে হাসপাতালে মানুষ মারা যাচ্ছেন করোনা চিকিৎসার ন্যূনতম উপাদান অক্সিজেন না পেয়ে। কার্যত দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র একেবারে ভেঙে পড়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এখন শুধু ভারতের হাহাকারের খণ্ডচিত্র, এমনকি গণহারে করোনায় মৃতদের চিতা জ্বলছে সে ছবিও উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রথম পাতায়।
আরও পড়ুনঃ বেসরকারি হাসপাতালে ৬০% বেড রাখতেই হবে করোনা রোগীদের জন্য, নির্দেশ স্বাস্থ্য দপ্তরের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সংবাদসংস্থা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট মোদি সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে লিখেছে, “এই পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যেত। সরকার দ্রুত সমস্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। হাজার হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছেন, সিনেমা হল খুলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার কুম্ভমেলায় ধর্মীয় জমায়েতের অনুমতি দিয়ে এতবড় বিপদ ডেকে এনেছে।”ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র ভাষায় সরাসরি আক্রমন করেছে সম্পাদকীয়তে।
তাতে লেখা হয়েছে “নরেন্দ্র মোদির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেশের এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তোষামোদকারীদের পরামর্শ শুনে আত্মবিশ্বাসে ভুগেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতি করেছেন। এখন তাঁর উচিত সর্ব সমক্ষে নিজের ভুল স্বীকার করে সিদ্ধান্ত সংশোধন করা। তাঁর উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় সেটা দেখা।
সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখুক। তাঁর দলের আদর্শের বাইরে গিয়ে এখন একতার বার্তা দেওয়া, জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবনতির জন্য ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা মোদীকে তাঁর চিন্তাভাবনার অভাবের জন্যই কাঠগড়ায় তুলবেন।”ব্রিটেনের তথা বিশ্বের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্য বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, “বেশ কিছু কারণে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দিয়ে কুম্ভমেলায় লক্ষাধিক মানুষের জমায়েতের অনুমতি দেওয়ার ফলে এই রেকর্ড সংখ্যক রোগীর ভিড়ে হাসপাতালগুলিতে বেড ও অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। রোগীর পরিজনরা চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছেন।”
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রের নির্দেশে কোভিড মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার ৫২টি পোস্ট সরিয়ে দিল টুইটার
অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, “মোদি সরকারের পরিকল্পনাবিহীন পদক্ষেপ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তিনটি কারণে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে- সরকারের প্রতিক্রিয়া, মানুষের অসচেতন দৃষ্টিভঙ্গি এবং করোনা ভ্যারিয়েন্ট।”
আমেরিকার বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের দাবি, “শক্তি ও ক্ষমতার সঙ্গে প্রয়োজন ছিল মোদি সরকারের দায়িত্ববোধের। দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। মোসাহেবরা মন্ত্রিসভায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে করোনা মোকাবিলার জন্য বাহবা দিয়েছেন আর সেই বাহবায় উৎসাহিত হয়ে সরকার সমস্ত বিধিনিষেধ আলগা করেছে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584