শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
১৭ মার্চ, ২০০৭। কিংস্টনে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইউসুফ, ইউনিস, ইনজামাম, উমর গুলের পাকিস্তানকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ম্যাচটা ৩ উইকেটে জিতে গেল আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট-বিশ্ব চোখ কচলে তাকানোর জোগাড়। কিন্তু পরের দিনই হোটেলে নিজের কক্ষে পাকিস্তানের সে সময়ের কোচ বব উলমারের রহস্যজনক মৃত্যু আয়ারল্যান্ড-চমককে ঠেলে দেয় পেছনের পাতায়।
আইরিশদের পাশাপাশি পুরো ক্রিকেট-বিশ্বই হয়তো আশায়, এবার আয়ারল্যান্ডের অর্জনকে ম্লান করে দেওয়া কিছু ঘটবে না। সেই কিংস্টনেই যে গতকাল আবার অবিশ্বাস্য ইতিহাস গড়েছে আয়ারল্যান্ড! সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নাটক জমলেও শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে ম্যাচটা জিতেছে আয়ারল্যান্ড, তাতে সিরিজ জিতে গেছে ২-১ ব্যবধানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে এসেছে আইরিশরা!
অবাক করে দেওয়ার মতো কীর্তিটা আইরিশদের ক্রিকেটের ইতিহাসেও অনন্য জায়গা দখল করছে। দেশের বাইরে এই প্রথম আইসিসির টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতল আয়ারল্যান্ড!
A fantastic result for Ireland 🙌
After drawing ODI series against South Africa and Zimbabwe, they have now beaten West Indies in the West Indies! #WIvIRE
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) January 16, 2022
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দল যে একেবারে ভাঙাচোরা ছিল, এমন নয়। কাইরন পোলার্ডের অধীনে একটা প্রজন্ম বদল দেখা উইন্ডিজের এই দলে শাই হোপ, নিকোলাস পুরান, রোস্টন চেজ, জেসন হোল্ডার, আকিল হোসেন, আলজারি জোসেফরা ছিলেন। তাদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৪ রানে হেরেছিল আয়ারল্যান্ড, এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায়।
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে গতকাল টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিং। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শাই হোপের আগ্রাসী অর্ধশতকে (৩৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩) শুরুটা ঝোড়োই হয় উইন্ডিজের। ১১তম ওভারের শেষ বলে হোপ আউট হতেই উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙছে, স্কোরবোর্ডে রান ৭২। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপ। মাঝখানে হোল্ডার চেষ্টা করলেও ব্যক্তিগত ৪৪ রানে রান আউট হয়ে ফিরে গেলে ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানে অলআউট হয়ে যায় পুরো টিম।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকবার্নি ১০ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে উইন্ডিজের মিডল অর্ডার ভেঙে দিয়েছেন। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে উইন্ডিজের ধসের শুরু করা পেসার ক্রেইগ ইয়াং উইন্ডিজের ইনিংসের শেষও টেনে দেওয়ার পথে ৪৩ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডকে হারালেও টপ অর্ডারের অন্য তিন ব্যাটসম্যানের সৌজন্যে নিশ্চিত জয়ের দিকেই এগোচ্ছিল আইরিশরা। অধিনায়ক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান স্টার্লিং ৩৮ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় করেন ৪৪ রান।
আরও পড়ুনঃ যাবতীয় লড়াইয়ের অবসান! অবশেষে কোর্টের সিদ্ধান্তে অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে হচ্ছে জোকোভিচকে
তবে তিনি অর্ধশতক না পেলেও পেয়েছেন পরের দুই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি ম্যাকবার্নি ও হ্যারি টেক্টর। বল হাতে ঝলক দেখানো ম্যাকবার্নি ১০০ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় করেন ৫৯ রান, চারে নামা টেক্টর ৭৬ বলে ৩ চারে করেন ৫২ রান। দ্বিতীয় উইকেটে স্টার্লিং-ম্যাকবার্নির ৭৩ রানের জুটির পর তৃতীয় উইকেটে ম্যাকবার্নি-টেক্টরের জুটিতে আসে আরও ৭৯ রান। শেষ পর্যন্ত যাবতীয় নাটকের মধ্যে দিয়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ৪৪.৫ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি তৈরি হয় বিশ্ব ক্রিকেটে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যেখানে আয়ারল্যান্ড হাসছেন জয়ের উল্লাসে পুস্পের হাসি, অন্যদিকে উইন্ডিজ সেই পুস্পের কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক কথায় সেটাই বারবার প্রমাণিত।
আরও পড়ুনঃ অবশেষে টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিরাট কোহলি
এই সিরিজ জয়ে আয়ারল্যান্ডের গর্বের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় লাভ, সিরিজটা ছিল আইসিসির ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সুপার লিগের অংশ। তাতে জেতায় এখন সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছে আয়ারল্যান্ড।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584