উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসন বামেরা ছেড়ে রাখল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জন্য(আইএসএফ)। প্রসঙ্গত, দশ বারের বেশি বার বৈঠক করেছে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ। নন্দীগ্রাম আসনটি ভাগে ছিল বাম শরিকের সিপিআই দলের। পরে জোটের স্বার্থে এই কেন্দ্রটি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল বাম শরিক সিপিআই। ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস জোটের হয়ে লড়বেন আব্বাস সিদ্দিকির দলের প্রার্থী।
বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে হওয়া আসন রফা অনুযায়ী, নন্দীগ্রাম কেন্দ্রটি থেকে লড়াই করার কথা ছিল বাম শরিক সিপিআইয়ের। কিন্তু পরে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে আসনরফা নিয়ে আলোচনা শুরুর পর সিপিআইকে নিজেদের ভাগ থেকে একটি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দেয় সিপিএম। বড় শরিকের চাপে শেষপর্যন্ত নন্দীগ্রাম আসনটিই আব্বাসের দলকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাম শরিক দল। এর আগে নন্দীগ্রাম জনসভা করে মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই এখানকার প্রার্থী। এরপর বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তার উত্তর দিয়ে জনসভায় বলেছিলেন যদি দল বলে তিনি নন্দীগ্রাম থেকে পুনরায় লড়তে ইচ্ছুক।
এদিকে, সিপিআই যেদিন একথা জানাল, সেদিনও জোট নিয়ে বাম এবং কংগ্রেসের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ছাড়লেন না আব্বাস। দাবিমতো বামেরা আসন ছেড়ে দিলেও নারাজ কংগ্রেস। জট কাটাতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। কংগ্রেস আসন না ছাড়লে তিনিও যে মাথানত করবেন না, তা মঙ্গলবার স্পষ্ট করে দিলেন ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা। দাবিমতো আসন না ছাড়লে কংগ্রেসের সব আসনে আইএসএফ প্রার্থী দেবে বলে মঙ্গলবার ধর্মতলার এক সভা থেকে জানান তিনি। ব্রিগেডের সভাতেও তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত করেননি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
প্রথমে বাম ও কংগ্রেস। পরে বাম- কংগ্রেস এবং আইএসএফ। মোট ১০ দফা বৈঠক হলেও জোট সম্পূর্ণ হয়নি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে বামেদের আসনরফা চূড়ান্ত। কিন্তু কংগ্রেস কয়েকটি আসন নিয়ে বেঁকে বসায় থমকে রয়েছে জোটপ্রক্রিয়া। মূলত প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর আপত্তিতে আসনরফা সম্পূর্ণ হচ্ছে না। কংগ্রেস তাদের দাবি না মানলে জোট থেকে সরে আসবেন বলে জানিয়ে দেন আব্বাস সিদ্দিকি।
আরও পড়ুনঃ পিছাবনীতে মদন মিত্রের গলাতেও ‘খেলা হবে’ স্লোগান
জানা গেছে, নন্দীগ্রামে প্রার্থী দিতে চলেছে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। তার জেরে এক ধাক্কায় বদলে যাচ্ছে নন্দীগ্রামের ভোটের অঙ্ক। দক্ষিণবঙ্গে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের আসন রফা চূড়ান্ত। তারপরই এল বড় চমক। ১৯৫১ সাল থেকে নন্দীগ্রাম আসনে বামেদের রেকর্ড ঈর্ষণীয়। সেই ধারায় এবার ইতি। সূত্রের খবর, ভোটের কৌশল হিসেবে আসনটি আব্বাস সিদ্দিকিকে ছেড়ে দিতে চলেছে সিপিআই। নন্দীগ্রামে প্রায় ৪০ শতাংশ সংখ্যালঘুর বাস। ফলে, আইএসএফ প্রার্থী দিলে তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। নন্দীগ্রামে ৯বার জিতেছে সিপিআই। সিপিএম ১ বার। কংগ্রেস ৬ বার জিতেছে। ২০০৯ সালের উপনির্বাচন থেকে নন্দীগ্রামে জিতে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুনঃ জল্পনার অবসান! মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন মেদিনীপুরের কংগ্রেস নেতা সৌমেন খান
সেই আসনটি কেন আইএসএফ-কে ছেড়ে দিচ্ছে বামেরা? এর নেপথ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু ভোটের অঙ্ক। নন্দীগ্রামে প্রায় ৪০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। ওই ভোট যে নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াতে পারে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর ভাষণে। ওই সভায় বিজেপি নেতা বলেছিলেন, ‘পদ্ম তো ২ লাখ ১৩ হাজারের ভরসায়। যাঁরা জয় শ্রী রাম বলেন, তাঁরাই ২ লক্ষ ১৩ হাজার। ৬২ হাজারেও সিঁধ কাটব।’ আইএসএফ নন্দীগ্রামে প্রার্থী দিলে নানা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আইএসএফ কি সংখ্যালঘু ভোটভাগে সক্ষম হবে? তার ডিভিডেন্ড জোট না পেয়ে কি বিজেপি পাবে? সেই ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান,’ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টাও কেউ কেউ করতে পারেন।’ নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী তিনি দল ছাড়ার পর সেখানে সভা করেন মমতা। আর ওই সভাতেই তৃণমূল নেত্রী ঘোষণা করেছেন, এবার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন। তারপর থেকেই বিজেপি রণংদেহি। মমতাকে আধ লাখ ভোটে হারানোর হুঙ্কার দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি নেতারাও আকছার বলছেন,’ভবানীপুরে হারবেন বলেই নিরাপদ আসন খুঁজে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584